নেইমারকে বাঁচাতে পুমার ঘুম হারাম

নেইমারের পাশে দাঁড়াচ্ছে পুমা।ছবি: রয়টার্স

এখনো দুই সপ্তাহও হয়নি দুই পক্ষ চুক্তিতে সই করেছে। নাইকির সঙ্গে ১৫ বছরের বন্ধন ছিন্ন করে নেইমার হাতে হাত মিলিয়েছেন জার্মান ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পুমার সঙ্গে। এর মধ্যেই নেইমার তাঁদের এমন বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবেন, তা ভাবতে পেরেছিল পুমা?

নেইমারকে ঘিরে ঝামেলা বলতে তো এখন একটিই। বেশ বড় ঝামেলাই। বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে পিএসজির ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের বিরুদ্ধে। ফরাসি লিগ কর্তৃপক্ষ (এলএফপি) সেই অভিযোগ তদন্ত করছে, আগামী বুধবার সেটির রায় আসার কথা।

অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে বেশ বড় শাস্তিই পেতে হবে নেইমারকে। আর নেইমারের শাস্তি মানে তো পুমার ব্যবসায়ে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা। জার্মান প্রতিষ্ঠানটির তাই যেন ঘুম নেই। স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক এএস জানাচ্ছে, নেইমারকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে তোড়জোর শুরু হয়েছে পুমার। নেইমারের হয়ে গনজালেসের সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

নেইমারের সঙ্গে আলভারো গনজালেসের বিবাদ জন্ম দিয়েছে অনেক বিতর্কের।
ছবি: রয়টার্স

গত ১৪ সেপ্টেম্বর লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মার্শেইয়ের বিপক্ষে পিএসজির ম্যাচটা বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পাঁচ লাল কার্ডের ম্যাচটিতে নেইমার নিজেও লাল কার্ড দেখেছেন। অপরাধ? মার্শেইয়ের আলভারো গনজালেসের মাথায় চাটি মেরেছেন।

কিন্তু বর্ণবাদের যত পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আসে ম্যাচের পর। নেইমার বর্ণবাদের অভিযোগ তোলেন গনজালেসের বিরুদ্ধে। টুইট করে শাস্তি চেয়েছেন। গনজালেসকে উদ্দেশ্য করে টুইটারে নেইমার লেখেন, ‘আমার একমাত্র আফসোস ওই বদমাশটার মুখে ঘুষি মারতে পারিনি।’

পরে আরেক টুইটে গনজালেসের শাস্তি চেয়ে নেইমার লিখেছিলেন, ‘আমি হিংস্র আচরণ করেছি কি না, ভিএআর দিয়ে সেটা বিচার করা সহজ। তাহলে যে বর্ণবাদী আমাকে মাঠে বাঁদর বলে গালি দিল তার ছবিটাও সামনে আসুক। আমি রেইনবো ফ্লিক করলে তো ঠিকই আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আমি চড় দিলে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওদের কী হবে?’

গনজালেস অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো নেইমারকে ‘হার মেনে নিতে’ শেখার পরামর্শ দেন। ম্যাচের পর মার্শেইয়ের দিক থেকে উল্টো দাবি ওঠে, বর্ণবাদী আচরণ আসলে নেইমারই করেছিলেন। মার্শেইয়ের জাপানি রাইটব্যাক হিরোকি সাকাইকে নেইমার নাকি ‘চীনা বিষ্ঠা’ বলে গালি দেন! এলএফপি তদন্ত করছে সেটিরও।

এএস জানাচ্ছে, তদন্তে অভিযোগগুলো সত্যি প্রমাণিত হলে নেইমার ও গনজালেস দুজনের জন্যই বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে। দোষী প্রমাণিত হলে গনজালেস নিষিদ্ধ হতে পারেন ১০ ম্যাচ। নেইমারের জন্য অপেক্ষায় আরও বড় শাস্তি। ২৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি পাবেন ২০ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা!

পিএসজির মাঠে মার্শেইয়ের ১-০ গোলে জয়ের সেই ম্যাচটি যেদিন হয়, তার মাত্র দুদিন আগেই নেইমারের সঙ্গে পুমার চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। নেইমারকে ফুটবল তো বটেই, খেলাধুলারই সবচেয়ে বেশি আয় করা তারকা বানিয়েছে পুমা—এমনই খবর ইউরোপের সংবাদমাধ্যমে।

চুক্তির অঙ্কটা দুই পক্ষই গোপন রাখলেও এএস যা জানাচ্ছে, তাতে চোখ কপালে ওঠার মতোই অবস্থা। নাইকির সঙ্গে নেইমারের বছরে ১৩ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৩০ লাখ ইউরোর চুক্তির চেয়েও বেশি অঙ্কে হয়েছে এই চুক্তি। শোনা যাচ্ছে, অঙ্কটা আসলে বছরে ২৩ মিলিয়ন ইউরো!

তা চুক্তি হওয়ার পরপরই নেইমার এত বড় শাস্তি পেলে, তা-ও বর্ণবাদের মতো অভিযোগে, পুমার জন্য সেটি বড় ক্ষতিরই কারণ হবে। বর্ণবাদ পুরো বিশ্বেই এখন আলোচিত-সমালোচিত বিষয়। একদিকে বিশ্বজুড়ে সেটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, অন্যদিকে সেটি দমানোর আন্দোলনও চলছে। এমন অবস্থায় নেইমারের মতো তারকা বর্ণবাদের অভিযোগে শাস্তি পেলে পুমার ক্ষতির অঙ্কটা ‘ঐতিহাসিক’ হবে বলে জানাচ্ছে এএস।

ফ্রেঞ্চ ফুটবল নেইমারকে বড় শাস্তিই দেবে—এই ভয় থেকে তাই মাঠে নেমেছে পুমা। বিয়র্ন গুল্ডেনের অধীন প্রতিষ্ঠানটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইছে গনজালেসের সঙ্গে। মার্শেইয়ের স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে বোঝাতে চাইছে, সমঝোতায় গেলে দুই পক্ষেরই লাভ। তা আর বলতে!