পুতিনের ওপরই নির্ভর করছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল কোথায় হবে

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়া ও বাকি বিশ্বের প্রতিটি পদক্ষেপ, রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতিটি কথাই এখন বড় আলোচনার বিষয়। ইউক্রেনকে ঘিরে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হলে যে পুরো বিশ্বেই সেটির প্রভাব পড়বে। ফুটবলই–বা আর বাইরে থাকবে কেন!

আজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভাষণের পর ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সংশয়, উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশগুলো রাশিয়ার ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে। মানুষের জীবনের ওপর সম্ভাব্য এ যুদ্ধ ও চলমান উত্তেজনার প্রভাবই যেখানে বড় বিবেচ্য, ফুটবল তো সে তুলনায় নস্যিই!

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর জানাচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করলে সেটির প্রভাব ফুটবলেও পড়বে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু বদলে যেতে পারে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল রাশিয়াতেই হওয়ার কথা। আগামী ২৮ মে সেই ফাইনালের ভেন্যু হিসেবে ঠিক করা হয়েছে জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঠ ক্রেস্তোভস্কি স্টেডিয়ামে। ২০১৮ বিশ্বকাপ উপলক্ষে বানানো স্টেডিয়ামটি স্পনসরশিপ–সংক্রান্ত কারণে যেটি গাজপ্রম অ্যারেনা নামেই বেশি পরিচিত।

কিন্তু আজ পুতিনের ভাষণের পর ফাইনালের ভেন্যু নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভাষণে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন পুতিন। পরে সেখানে সেনা পাঠানোরও নির্দেশ দেন তিনি। যদিও ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবেই সৈন্যদের পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুতিন। কিন্তু এ সৈন্য পাঠানোর অর্থ রাশিয়ার বিরোধীরা নিচ্ছে অন্যভাবেই।

উত্তেজনা বাড়ছে, বাড়ছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল নিয়ে শঙ্কাও। ইংলিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, এখন পর্যন্ত ফাইনালটা সেন্ট পিটার্সবার্গেই রাখার পরিকল্পনা ইউরোপের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার, তবে সে পরিকল্পনা যেকোনো সময়ে বদলে যেতে পারে।

‘উয়েফা খুব গভীরভাবে নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ভেন্যু বদলানোর কোনো পরিকল্পনা নেই’—উয়েফার বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে লিখেছে গার্ডিয়ান।

জেনিতের মাঠ গাজপ্রম অ্যারেনা, গত সপ্তাহে সেখানে ইউরোপা লিগের শেষ ষোলোর প্লে-অফে বেতিসের বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটি খেলেছে জেনিত
ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ডের আরেক দৈনিক ডেইলি স্টারও লিখেছে, এই মাসেই আগে একবার জার্মান সংবাদমাধ্যম উয়েফা ডিপিএকে উয়েফা জানিয়েছে, ভেন্যু বদলানোর কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই তাদের, তবে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি বদলাতে পারে।

সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সরিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু কোথায় নেওয়া হতে পারে, সেটিরও একটা ধারণা দিয়েছে ডেইলি স্টার। তাদের প্রতিবেদনে লেখা, পরিবর্তিত ভেন্যু হিসেবে ইংল্যান্ডেরই ‘ফুটবল-তীর্থ’ ওয়েম্বলির নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে, বিশেষ করে যদি দুটি ইংলিশ দল ফাইনালে ওঠে।

ইউক্রেনের দোনেৎস্কের রাস্তায় রুশ ট্যাঙ্ক
প্রথম রাউন্ডে

এই মুহূর্তে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর খেলা চলছে, সেখানে ইংল্যান্ডের লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি—এই চার দলই আছে।

রাশিয়ার কোনো দল চ্যাম্পিয়নস লিগে আর টিকে নেই। শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগই কেন, ইউরোপিয়ান সব টুর্নামেন্ট মিলিয়েই শুধু জেনিতই এই মুহূর্তে রাশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি। তবে গার্ডিয়ান যা লিখেছে, তাতে বাণিজ্যিক চুক্তি উয়েফার সিদ্ধান্তে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

জেনিতের স্টেডিয়ামটির স্পনসর গাজপ্রমের সঙ্গে যে উয়েফার বড় অঙ্কের বাণিজ্যিক চুক্তি আছে!

গাজপ্রমের মালিকানাধীন নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাসলাইন
প্রথম রাউন্ডে

রুশ গ্যাস কোম্পানি গাজপ্রমের সঙ্গে উয়েফার বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক পুরোনো, এর মধ্যে গত বছর গাজপ্রম জানিয়েছিল, উয়েফার সঙ্গে চুক্তির পরিধি বাড়িয়ে সেই চুক্তির আওতায় ইউরো, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগের মতো টুর্নামেন্টকেও নিয়ে আসবে তারা।

তবে পুতিনের সর্বশেষ কার্যক্রমের পর আজই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁদের দেশে গাজপ্রমের মালিকানাধীন নর্ডস্ট্রিম ২ গ্যাসলাইনটিতে সরবরাহ বন্ধ করে দিতে।

চ্যাম্পিয়নস লিগের ভেন্যু বদলানোর ঘটনা অবশ্য এর আগেও দেখেছে ইউরোপিয়ান ফুটবল। গত দুই মৌসুমেই ভেন্যু বদলেছে, তবে সেটি হয়েছে করোনাভাইরাস ও এ–সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিয়ে জটিলতার কারণে।