বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ম্যাচের পর বাংলাদেশ পুলিশ এফসির ফুটবলার দানিলো আগুস্তো ও আমিরুদ্দিন শরিফি ক্ষুব্ধ হয়ে তেড়ে যান রেফারি আনিসুর রহমানের দিকে। পক্ষপাতমূলক বাঁশি বাজানোর জন্য বসুন্ধরা কিংসের কাছ থেকে তিনি কত টাকা পেয়েছেন, তা জানতে চান দুই ফুটবলার। ঘটনাটা ১৭ ফেব্রুয়ারির, বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়।

চলমান প্রিমিয়ার লিগে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না রেফারিদের। মাঠের খেলার চেয়ে ঘরোয়া ফুটবল ইদানীং বেশি উত্তপ্ত রেফারিং-বিতর্ক নিয়ে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও রেফারিং নিয়ে ক্ষুব্ধ। কিন্তু যাঁদের নিয়ে এত আলোচনা সেই রেফারিরা বলছেন, প্রযুক্তির অভাবে তাঁরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। অনেক সময় পান না যথেষ্ট স্বাধীনতাও।

১৩ ফেব্রুয়ারি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে সাইফ স্পোর্টিংয়ের ম্যাচ শেষে সাইফের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তাঁকে লাথি মেরেছেন, এমন অভিযোগ করেন ওই ম্যাচের রেফারি বিটুরাজ বড়ুয়া। জামাল ও তাঁর দল সাইফ স্পোর্টিং সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এ ঘটনার আরও তদন্ত দাবি করেছেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে বিটুরাজ বড়ুয়াকে আপাতত ম্যাচ পরিচালনা থেকে বিরত রেখেছে বাফুফে। কোড অব কন্ডাক্টের কারণে বিটুরাজ এসব নিয়ে কাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলেন না প্রথম আলোর কাছে। তবে প্রযুক্তির অভাবে অনেক সময় রেফারিদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি, ‘সারা বিশ্বে এখন ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের এখানে সেসব থাকলে ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।’

এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই।
ছবি: প্রথম আলো

১৮ ফেব্রুয়ারি মোহামেডানের কাছে হারের জন্য রেফারিকে দায়ী করেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। রেফারিং নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে বাফুফেকে চিঠি দিয়েছে সাইফ। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছে ক্লাবটি। ওই ম্যাচের রেফারি ছিলেন ভুবনমোহন তরফদার। সেদিন পুরো ম্যাচেই নিরপেক্ষভাবে সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছেন দাবি করে ভুবনমোহন বললেন, ‘আগে ফুটবলাররা এত তর্ক করত না। এখন ওরা খেলা বাদ দিয়ে তর্ক করে বেশি। রেফারির সঙ্গে বেশি তর্ক করবেন, যেটা আইনসিদ্ধ নয় সেটাও চাইবেন, তাহলে কি স্বাধীনভাবে খেলা চালানো সম্ভব?’

দেশে বর্তমানে মানসম্পন্ন রেফারির সংকট আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। রেফারিদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এমনকি বাফুফে সভাপতিও। সাবেক ফিফা রেফারি মনসুর আজাদ এ জন্য বাফুফের রেফারিজ কমিটির স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করলেন, ‘আমাদের এখানে নামেই একটা রেফারি বিভাগ আছে। ফিফার নিয়ম অনুসারে সেখানে অভিজ্ঞ রেফারি থাকার কথা। কাগজে–কলমে এসব তথ্য ফিফার কাছে দেওয়া আছে, কিন্তু আসলে সেখানে কিছুই নেই। এখন রেফারিজ কমিটি হয়ে গেছে ওয়ান ম্যান শো। একজনের সিদ্ধান্তই সেখানে সবকিছু। এভাবে চললে তো এর প্রভাব মাঠেও পড়বে।’

ঘরোয়া ফুটবল ইদানীং বেশি উত্তপ্ত রেফারিং–বিতর্ক নিয়ে
ছবি: প্রথম আলো

বড় ক্লাবগুলোর ভয়ে তাদের বিপক্ষে বাঁশি বাজাতে চান না রেফারিরা। স্টেডিয়ামপাড়ায় কান পাতলেই এমন অভিযোগ শোনা যায় ছোট ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। মনসুর আজাদও স্বীকার করলেন ব্যাপারটা, ‘আমার একজন সাবেক সহকর্মী জানিয়েছে, সে যদি চলতি লিগে মোহামেডানের বিপক্ষে বাঁশি বাজায় তাহলে তার ফিফা ব্যাজ থাকবে না। এ ধরনের মানসিকতা যদি থাকে আমাদের, তাহলে তো ফুটবল এগোবে না।’

প্রশ্নবিদ্ধ রেফারিং নিয়ে বিব্রত বাফুফের হেড অব রেফারি আজাদ রহমান। তিনিও মানছেন মাঠে রেফারিরা ভুল করছেন, ‘কিছু ভুল নিশ্চয় হচ্ছে আমাদের। কিন্তু সেটা মোটেও ইচ্ছাকৃত নয়। সেই সুযোগও নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি যত কম ভুল করা যায়। রেফারিদের নিয়ে নিয়মিত সভা করছি। যে ভুলগুলো হচ্ছে, সেগুলো যেন আর না হয়, সে ব্যাপারে তাদের কাউন্সেলিং করছি।’

দেশি রেফারিদের পারফরম্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় দাবি উঠেছে বিদেশি রেফারি আনারও। তবে আজাদ বিদেশি রেফারির বিপক্ষে, ‘আমরা কেউই বিদেশি রেফারি চাই না। সামনের দিনগুলো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, যেন আর কোনো ভুল না হয়।’