বোনুচ্চি শিরোপাও জিতলেন, স্পনসরদের মনও জিতলেন

লিওনার্দো বোনুচ্চির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কাল রাতে। ১৯৬৮ সালের পর ইতালি প্রথমবারের মতো ইউরো জিতেছে, সেটি তো বটেই। বোনুচ্চির স্বপ্নপূরণ আরও পূর্ণতা পেয়েছে আরেকটি ব্যাপারে। ইউরোর ফাইনালে টাইব্রেকারে ইতালি ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। আগের দিনই বোনুচ্চি বলেছিলেন, ওয়েম্বলিতে ৯০ হাজার দর্শকের সামনে ইংল্যান্ডকে হারানোটা তাঁর কাছে স্বপ্নপূরণের মতোই একটা ব্যাপার।

ইতালির কাপ জয়ে বোনুচ্চির বড় অবদান। রক্ষণে অসামান্য ভূমিকা তো তাঁর ছিলই, ম্যাচের শুরুতেই এক গোলে এগিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের লাগামটা কাল তিনিই পরিয়েছেন দ্বিতীয়ার্ধে সমতাসূচক গোল করে। সেই গোলেই ম্যাচ যায় অতিরিক্ত সময়ে। পরে টাইব্রেকারের ভাগ্যপরীক্ষায় ইতালি জিতেছে ৩-২ ব্যবধানে।

ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনেও তাই বোনুচ্চিই ছিলেন মধ্যমণি। ম্যাচে হয়েছেন ‘উয়েফা স্টার অব দ্য ম্যাচ।’ এরপর ইউরোর রুপালি ট্রফি হাতে তিনি সংবাদ সম্মেলনের কক্ষে প্রবেশ করে যা করলেন, তাতে ইউরোর স্পনসর কোকাকোলা আর হেনিকেন খুশি না হয়ে পারেই না! সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তিনি একবার চুমুক দিচ্ছিলেন কোকের বোতলে, আরেকবার হেনিকেনের বোতলে।

ব্যাপারটা বিশেষ কিছু হতো না, যদি না ইউরোর শুরুতে সংবাদ সম্মেলনের কক্ষে এই কোক আর হেইনিকেন নিয়ে বিশেষ কিছু ঘটনা না ঘটত। পর্তুগাল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজেদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কোক বর্জন করে পানি পান করতে বলেছিলেন। সে নিয়ে যথেষ্ট তোলপাড় হয়েছে। যে কোকাকোলা ইউরোর স্পনসর, তাদের বোতল সংবাদ সম্মেলনের কক্ষে প্রদর্শন তো তাদের অধিকারের পর্যায়েই পড়ে। কিন্তু রোনালদো সেই বোতল টেবিল থেকে সরিয়ে যদি সবাইকে ‘পানি খেতে’ বলেন, সেটি তো একদিক দিয়ে নীতিমালার প্রতি অবজ্ঞাই। একই কাজ করেছিলেন ফ্রান্সের পল পগবা। মুসলিম পগবা টেবিল থেকে হেনিকেন বিয়ারের বোতল সরিয়ে রেখে নিজের ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপারটাই সামনে নিয়ে এসেছিলেন।

ফাইনালে দলকে সমতায় ফিরিয়েছেন বোনুচ্চিই
ছবি: রয়টার্স

রোনালদো আর পগবার ঘটনা দুটি সাধারণে আলোড়ন তুললেও উয়েফা সেটি পছন্দ করেনি। ঘোষণা আসে, সংবাদ সম্মেলনে এসে কোনো ফুটবলার যদি তেমনটা করেন, সেটি মানবে না ইউরোর আয়োজকেরা। রোনালদো আর পগবার ঘটনা দুটি দুই স্পনসরকেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। রোনালদো কোকের বোতল সরিয়ে রাখার পর নাকি কোমল পানীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর পড়ে গিয়েছিল ১.৬ শতাংশ। তাতে তাদের ব্র্যান্ডের ক্ষতির মূল্যমান ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার। পগবার ঘটনার পর অবশ্য উয়েফা জানিয়েছে, কোনো মুসলিম ফুটবলার আপত্তি জানালে সংবাদ সম্মেলনের কক্ষের টেবিলে বিয়ারের বোতল তারা রাখবে না।

ইতালির ইউরো জয়ে দারুণ অবদান বোনুচ্চির
ছবি: রয়টার্স

বোনুচ্চির কোক-বিয়ার পানের সঙ্গে সেসব ঘটনার কোনো সংযোগ নেই। তিনি শুধু আনন্দে পাগলপারা হয়েই পানীয়ে গলা ভেজাচ্ছিলেন। কোক–বিয়ার খেয়ে ইতালির শিরোপা জয়ে নিজের উচ্ছ্বাসটাই জানিয়ে রেখেছেন বোনুচ্চি, ‘এটি বিশেষ একটা ব্যাপার এই কারণে যে ইউরোর প্রথম দিন থেকেই আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব।’

ইউরো জয়ে ইতালির দলীয় ঐক্য এবং খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সদস্যদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কটাকেই মূল মনে করছেন বোনুচ্চি, ‘অনেকেই অনেক কথা বলেছে। সেসব আমরা পেরিয়ে এসেছি। ভাবতে দুর্দান্ত লাগে যে আমরা কেউই দিনের পর দিন একসঙ্গে থাকতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়িনি। আমরা সেটি উপভোগ করেছি।’