ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি ছিলেন, কেটে রেখেছিলেন টিকিট, সেই সাজ্জাদকেই ডাকা হলো জাতীয় দলে
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ২০ জনের প্রাথমিক দলে নাম না দেখে কিছুটা হতাশ হন। তবে হাল ছাড়েননি। মনে মনে নাকি বিশ্বাস ছিল, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক আসবেই। সত্যিই ডাক এসেছে।
স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ দেরিতে ক্যাম্পে আসায় তাঁকে বাদ দিয়ে বিকল্প হিসেবে ডাকা হয় সাজ্জাদ হোসেনকে। এতেই পূরণ হয়েছে তাঁর স্বপ্ন।
আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় জাতীয় দলের অনুশীলনের পর সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পটিয়ার ছেলে সাজ্জাদ বলেন, ‘পেশাদার ফুটবলে আসার পর থেকেই স্বপ্ন দেখছিলাম, জাতীয় দলে খেলব। এবার জাতীয় দলের স্কোয়াড ঘোষণার তিন–চার দিন আগে থেকেই একটা বিশ্বাস ছিল, এবার ডাক পাবই।
প্রতিদিন আশায় থাকতাম, কখন দল ঘোষণা করা হবে। ১৪ মে দুপুরের পর থেকেই টিভি দেখছিলাম, স্কোয়াড দেয় কি না। পরে স্কোয়াড দিলে দেখলাম আমি নেই।’
তারপর? সাজ্জাদ বলেন, ‘প্রথমে ডাক না পেলেও আশা ছাড়িনি। দু-তিন দিন পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে ফোন করে জানতে চেয়েছে, আমি তৈরি আছি কি না। আমি তখন চট্টগ্রামে। ফেডারেশনকে বলেছিলাম, আমি তৈরিই আছি। কয়েক দিন আগে থেকেই ব্যাগ-ট্যাগ গোছাই রাখছি। যাতে যেকোনো সময় ডাক পেলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে পারি।’
ফেডারেশন থেকে তাঁকে ১৭ মে দুপুরে ফোন করে বলা হয়, এক ঘণ্টার মধ্যে জানানো হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু এক ঘণ্টাও আর অপেক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গেই বিমানের টিকিট কেটে রাখেন সাজ্জাদ। ‘আমার বিশ্বাস ছিল, চূড়ান্ত ডাক পাবই। তাই টিকিটও করে ফেলি দ্রুত। যদি টিকিট না পাই, সেই শঙ্কাও ছিল মনে। ডাক পেয়েও সময়মতো যেতে না পারলে সেটা হবে আরও দুঃখের। তাই সব তৈরি রাখি আগেই’—বলছিলেন সাজ্জাদ।
এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সাইফ স্পোর্টিংয়ের জার্সিতে তাঁর গোল ৪টি। টুর্নামেন্টে ২টিসহ চলতি মৌসুমে মোট গোল ৬টি। ১টি গোলে সহায়তা করেছেন। ফরোয়ার্ডে এবার দেশিদের মধ্যে নজর কেড়েছেন সাজ্জাদ। কোনো বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে না খেলেই সরাসরি তিনি চলে এলেন জাতীয় দলের স্কোয়াডে, যা তাঁর জন্য অভাবনীয় ব্যাপার।
সাজ্জাদের ফুটবলপ্রেম ছোট থেকেই। জানালেন তাঁর জীবনের স্মরণীয় এক ঘটনাও, ‘১০-১১ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার সময় তখন চট্টগ্রাম ফুটবল লিগ চলছিল। সেদিন ছিল আমার ইংরেজি পরীক্ষা। কিন্তু ম্যাচ খেলার জন্য তিন ঘণ্টার এসএসসি পরীক্ষা এক-দেড় ঘণ্টায় শেষ করে চলে যাই খেলতে। স্যাররা জিজ্ঞেস করেছিল, কই যাও? আমি বলি, খেলা আছে। স্যার তখন বলেন, এত তাড়াতাড়ি তোমাকে ছাড়া যাবে না। আমি বলি, আমাকে যাইতেই হবে স্যার।’
পেছনে ফিরে নিজের ফুটবলপ্রেমের কথা এভাবেই বলেছিলেন সাজ্জাদ। সেই ইংরেজি পরীক্ষায় তিনি পেয়েছিলেন ৪০ নম্বর। তখন তাঁর কাছে পাস করাটাই ছিল বড় ব্যাপার।
সাজ্জাদের কথাবার্তায় আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোয়।
বলেছেন, ‘জাতীয় দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডেও জায়গা পাব, এমন আত্মবিশ্বাস আমার আছে। সবারই তো দুটো পা। আমারও তা–ই। সুতরাং আমি কেন পারব না। সব সময় এটাই ভাবি।’
আত্মবিশ্বাস যে মানুষকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে, তার বড় উদাহরণ সাজ্জাদ।