বেশ ক'বছর আগে আর্জেন্টাইন গোলকিপার জিরোনিমো রুইয়িকে ৪০ লাখ পাউন্ড খরচ করে কিনেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। আশা করেছিল, দলে থাকা মূল গোলকিপার জো হার্টের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবেন তিনি।
কিন্তু কীসের কি! সিটির হয়ে একটা ম্যাচও মাঠে নামা হয়নি রিয়াল সোসিয়েদাদের হয়ে আলো ছড়ানো এই কিপারের। সিটি থেকেই আবারও ধারে সোসিয়েদাদে যোগ দিয়েছিলেন, শেষমেশ বছরখানেক পর পাকাপাকিভাবেই ফিরেছিলেন সাবেক ঠিকানায়। তখন রুইয়ির ওপর সিটি কেন ভরসা রাখেনি, তার একটা উত্তর পাওয়া গেল আজ রাতে।
এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে কী দুর্দান্ত এক মৌসুমই না কাটাচ্ছিল ভিয়ারিয়াল। প্রথম রাউন্ডে লাইপজিগ, আতালান্তা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের সঙ্গে টক্কর দিয়ে উঠেছিল পরের রাউন্ডে, এরপর একে একে জুভেন্টাস আর বায়ার্ন মিউনিখকে পেছনে ফেলে উঠে এসেছিল সেমিফাইনালে। হয়তো ফাইনালেও উঠে যেত, যদি গোলবারের নিচে এই রুইয়ি না থাকতেন!
প্রথম লেগে ২-০ গোলে হেরে যাওয়া ভিয়ারিয়াল দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে লিভারপুলের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার পণ করেই যেন নেমেছিল। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে সম্মিলিত স্কোরে এনেছিল ২-২ গোলের সমতা। হয়তো স্বপ্নও দেখছিল, শিকারের তালিকায় জুভেন্টাস-বায়ার্নের পাশাপাশি যোগ হবে লিভারপুলের নামটাও।
কিন্তু ওই যে, এক রুইয়ি যে ছিলেন!
দ্বিতীয়ার্ধে গুনে গুনে তিনটা গোল হজম করল ভিয়ারিয়াল। নিজেদের মাঠেই দেখল নিজেদের চ্যাম্পিয়নস লিগ-স্বপ্নের মরে যাওয়া। তিনটা গোলে রুইয়ি যা করলেন, তাতে খালি চোখে ভিয়ারিয়ালের স্বপ্নভঙ্গের দোষটা অনায়াসেই এই গোলকিপারকে দেওয়া যায়। প্রথম গোলে ফাবিনিওর শটটা যতই জোরে হোক না কেন, রুইয়ির পজিশনিং ঠিক থাকলেই পায়ে লেগে সে শটটা দিকভ্রষ্ট হয়। সেটা হয়নি। রুইয়ির দুপায়ের ফাঁক দিয়ে বল জড়ায় জালে, লিভারপুল পায় ম্যাচে ফিরে আসার উপলক্ষ্য।
দ্বিতীয় গোলেও একই কাহিনি। ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ডের ক্রসে মাথা ছোঁয়ানোর জন্য লুইস দিয়াজ ডি-বক্সে পর্যাপ্ত জায়গা পেয়ে গেলেও, সামনে রুইয়ি ছিলেন। পজিশনিং ঠিক থাকলে এবারও যে হেডটা আটকানো সম্ভব ছিল। এবারও হলো না। এবারও ভড়কে গেলেন রুইয়ি। আবারও তাঁর দুপায়ের ফাঁক দিয়ে বল জড়ালো জালে।
তৃতীয় গোলে যা করলেন, সে কাজ করার পেছনে একজন গোলকিপারের যুক্তি কি থাকতে পারে, সেটা খালি মাথায় বের করা বোধকরি কারওরই কম্মো নয়। সাদিও মানের নেতৃত্বে দ্রুত প্রতি আক্রমণে উঠে গিয়েছিল লিভারপুল। নিজের সতীর্থরা ঠিক সময়ে মানেকে আটকানোর জন্য পিছিয়ে আসতে পারছেন না দেখেই কি না, রুইয়ি নিজেই দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেলেন মাঝমাঠে!
মানেকে ট্যাকল করার চেষ্টা করলেন, চেষ্টা করলেন সেনেগালিজ ফরোয়ার্ডের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার। পারলেন না। মানে ঠাণ্ডা মাথায় রুইয়িসহ আরও একজন আর্জেন্টাইন তারকা (হুয়ান ফয়থ)কে কাটিয়ে বল জড়ালেন জালে। আর নিশ্চিত করলেন, ভিয়ারিয়ালের স্বপ্নযাত্রা থেমে যাচ্ছে এখানেই।
সঙ্গে এটাও নিশ্চিত হলো, ভিয়ারিয়ালের দুর্দান্ত ফর্ম দেখে যারা আগামী কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন দলে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সঙ্গে রুইয়িকেও দলে চাচ্ছিলেন, সে দলে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হয়তো রুইয়ির নেই।
বিখ্যাত স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকারের বিস্ময়মাখা টুইটটাই হয়তো সবকিছু বুঝিয়ে দেয়, 'আসলেই, রুইয়ি?'