ভেনেজুয়েলাকে হেসেখেলে হারাল আর্জেন্টিনা

লাওতারোর উল্লাস, গোলের পরছবি : রয়টার্স

শেষ এমনটা কবে হয়েছে যে আর্জেন্টিনা একাধিক গোল করেছে, কিন্তু সেই গোলগুলোর সঙ্গে লিওনেল মেসির কোনোধরণের কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না? ব্যাপারটা যারপরনাই অবিশ্বাস্য। সে অবিশ্বাস্য ঘটনাটাই ঘটিয়েছে আলবিসেলেস্তিরা।

আজ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। তিন গোলের একটাও লিওনেল মেসি করেননি, কোনো গোলে ছিল না তাঁর সরাসরি ভূমিকাও। ইন্টার মিলানের দুই ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্তিনেজ আর হোয়াকিন মার্তিনেজ, আর ওদিকে আতলেতিকোর ফরোয়ার্ড আনহেল কোরেয়ার গোলেই ভেনেজুয়েলাকে হেসেখেলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ভেনেজুয়েলার হয়ে ম্যাচের একদম শেষ মূহুর্তে সান্ত্বনাসূচক গোলটা করেছেন টরন্টো এফসির ফরোয়ার্ড ইয়েফেরসন সোতেলদো। টানা দুই ড্রয়ের পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জয় পেল আর্জেন্টিনা।

ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আজ দলকে ৪-৪-২ ছকে সাজিয়েছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে ম্যাচটা খেলা হয়নি সদ্যই টটেনহাম হটস্পারে যোগ দেওয়া ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান রোমেরো আর পিএসজির মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেসের। ফলে গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জুটি বেঁধেছিলেন বেনফিকার নিকোলাস ওতামেন্দি ও সদ্যই রিয়াল বেতিসে যোগ দেওয়া জার্মান পেৎসাল্লা। রাইটব্যাক হিসেবে কোপা আমেরিকার ফাইনালে আলো ছড়ানো গঞ্জালো মন্তিয়েল নয়, বরং উদিনেসের নাহুয়েল মলিনার ওপরেই ভরসা রেখেছিলেন স্কালোনি। ওদিকে সেভিয়ার মার্কোস আকুনিয়া ছিলেন লেফটব্যাক হিসেবে।

মাঝমাঠে বেতিসের গিদো রদ্রিগেজের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন সদ্যই আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দেওয়া রদ্রিগো দি পল। দুই ওয়াইড মিডফিল্ডার হিসেবে ছিলেন আনহেল দি মারিয়া ও টটেনহামের জোভান্নি লো সেলসো। স্ট্রাইকার হিসেবে মেসির সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন লাওতারো মার্তিনেজ।

গোটা ৯০ মিনিট খেলেছেন মেসি
ছবি : রয়টার্স

অবশ্য কোনো গোল করা বা করানোতে মেসির ভূমিকা না থাকলেও গোটা ম্যাচের ঘটনাপ্রবাহে তাঁর ভূমিকা ছিল বেশ। ৩০ মিনিটে মেসিকেই বাজেভাবে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ভেনেজুয়েলার ডিফেন্ডার আদ্রিয়ান মার্তিনেজ। বাকি এক ঘন্টা একজন কম নিয়েই খেলে ভেনেজুয়েলা, আর তাঁদের ওপর নিশ্চিন্তে ছড়ি ঘোরায় আর্জেন্টিনা। অথচ এই মার্তিনেজ মূল একাদশেই ছিলেন না। আরেক ডিফেন্ডার সেমা ভেলাসকেজের চোটের সুবাদে ২৫ মিনিটে তাঁকে মাঠে নামান কোচ লিওনার্দো গঞ্জালেস। পাঁচ মিনিটের মাথায় গঞ্জালেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ এই মার্তিনেজই বাড়িয়েছেন।

প্রথমার্ধের একদম শেষ দিকে এসে জোভান্নি লো সেলসোর পাস থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লাওতারো মার্তিনেজ। এক গোলের অগ্রগামিতা নিয়েই বিরতিতে যান মেসিরা। ৬২ মিনিটে লো সেলসো আর দি মারিয়ার জায়গায় দুই কোরেয়াকে মঠে নামান স্কালোনি। ব্যস, খেলার চেহারারও পরিবর্তন হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে।

গোলের পর হোয়াকিনের উল্লাস
ছবি : রয়টার্স

৭১ মিনিটে মেসি ও লাওতারো নিজেদের মধ্যে বল আদান প্রদান করে লাওতারো বল পাঠান নতুন ক্লাব-সতীর্থ হোয়াকিন কোরেয়ার কাছে। মাত্রই লাৎসিও থেকে ইন্টারে যোগ দেওয়া কোরেয়া গোল করতে ভুল করেননি। ২৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড এমনিতেই ইন্টারের হয়ে অভিষেকে জোড়া গোল করে তুখোড় ফর্মে আছেন। জাতীয় দলেও যার ছাপ দেখা গেল।

তৃতীয় গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। এই গোলটাও হোয়াকিনই পেয়ে যাচ্ছিলেন। মেসি-হোয়াকিন আর লাওতারোর গড়ে তোলা দুর্দান্ত আক্রমণের পর হোয়াকিনের শট গোলকিপার আটকে দিলে বল চলে যায় আনহেল কোরেয়ার কাছে। সেখান থেকে আসে দলের তৃতীয় গোল।

তিন গোল চলে আসার পর স্কালোনি নিশ্চয়ই চেয়েছিলেন, আরও কয়েকটা গোল করে ভেনেজুয়েলাকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দেওয়া যাক! না হয় ম্যাচের শেষদিকে এসে পাওলো দিবালা, আলেহান্দ্রো গোমেজ - সবগুলো ফরোয়ার্ডকে মাঠে নামিয়ে দেবেন কেন? যদিও আর গোল আসেনি। উলটো আর্জেন্টিনা একটা গোল হজম করেছে।

ম্যাচের একদম শেষ মূহুর্তে পেনাল্টি পায় ভেনেজুয়েলা। ইয়েফেরসন সোতেলদো করেন সান্ত্বনাসূচক গোলটা। কিন্তু তাতে কী? আর্জেন্টিনার পুরো তিন পয়েন্ট পাওয়াতে তা বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। এই নিয়ে টানা ২১ ম্যাচে অপরাজিত রইলো আর্জেন্টিনা। এই জয়ে বাছাইপর্বের পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই রইলো আলবিসেলেস্তিরা। শীর্ষে যথারীতি ব্রাজিল, যারা এখন লড়ছে চিলির সঙ্গে।