‘মার্তিনেজ যে কাউকে শেষ করে দিতে পারে’
এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে খুব বেশি মানুষ চিনতেন না। চিনবেন-ই বা কীভাবে? আর্জেন্টিনার জার্সিতে এ গোলকিপারের অভিষেকই যে গত জুনে। দেশের হয়ে খেলেছেনই মাত্র ৭ ম্যাচ। কিন্তু সপ্তম ম্যাচটাই যে তাঁকে এমন খ্যাতি এনে দেবে, কে ভেবেছিল!
মার্তিনেজের সপ্তম ম্যাচটি ছিল কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল। কলম্বিয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর ফাইনালিস্ট বেছে নিতে আশ্রয় নিতে হয় টাইব্রেকারের। তাতে তিনি তিনটি পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে রীতিমতো তারকা বনে গেছেন। তারকা, তো বটেই অনেক দিন পর আর্জেন্টিনার কোনো ম্যাচে লিওনেল মেসিই চলে গেছেন আড়ালে।
কেবল পেনাল্টি ঠেকিয়ে মাঠের বীর হয়েছেন বলেই নয়। আর্জেন্টিনা গোলকিপার আলোচিত কলম্বিয়ার খেলোয়াড়দের সঙ্গে ‘মানসিক খেলা’ খেলে। টাইব্রেকারের সময় তিনি কেবল ‘কথা’ দিয়েই কাবু করেছেন কলম্বিয়ার ফুটবলারদের। মার্তিনেজের কথার তিরে বিদ্ধ হয়েই মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়েছেন তাঁরা। পেনাল্টি মিস তারই পরিণতি। আর মার্তিনেজ এতেই এখন প্রিয় হয়ে উঠেছেন আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। তাঁর মধ্যে এখন অনেকেই সের্হিও গয়কোয়েচিয়া কিংবা নেরি পম্পেদোদের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন।
মার্তিনেজ কিন্তু হঠাৎ করেই এমন করেননি। তাঁর ভাইয়ের কথা অনুযায়ী, এটা নাকি তাঁর স্বভাব। তিনি যেকোনো চ্যালেঞ্জ জিততেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ‘মানসিক খেলা’ খেলেন। মুন্দো আলবিসেলেস্তের সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্তিনেজ বলেছেন, নিজেদের ‘ঘরের কথা’, ‘সে ভয়াবহ ধরনের ছেলে। আমাকে খুব জ্বালায়। মানসিকভাবে সে যে-কাউকে শেষ করে দিতে পারে। কোনো কিছু আদায় করে নিতে ঘরে সে আমার সঙ্গেও ছোটবেলায় মানসিক খেলা খেলত। তবে আমি মনে করি সে দুর্দান্ত। আমার হৃদয় সব সময়ই তাঁর সঙ্গে আছে। আশা করি ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে সে কাউকে হতাশ করবে না।’
করোনার এই সময় কোপা আমেরিকা চলছে। জৈব সুরক্ষা বলয় খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি শুষে নিচ্ছে। দীর্ঘ ৪০ দিনের বেশি সময় ধরে খেলোয়াড়েরা পরিবার-পরিজনের বাইরে। তাঁর ভাইয়ের মতে, খেলোয়াড়েরা এই সময় অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাঁর ভাই মার্তিনেজও তা-ই। কোপার এই সময় তিনি সন্তানের বাবা হয়েছেন, ‘ওরা কোপার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। মার্তিনেজ কোপার এই সময়ই বাবা হয়েছে। নবজাতককে এখনো দেখেনি। বুঝি কতটা উদগ্র প্রতীক্ষা মার্তিনেজের তাঁর সন্তানের মুখ দেখার জন্য।’
আর্জেন্টিনার ২৩ নম্বর জার্সি পরে খেলেন মার্তিনেজ। কেন এই ‘২৩’ নম্বরটিই তিনি জার্সি নম্বর হিসেবে বেছেছেন, তার নেপথ্য গল্পটাও বলেছেন মার্তিনেজের ভাই, ‘ওর এক সন্তানের জন্ম হয়েছে ২৩ জুন। সে কারণেই মার্তিনেজ ২৩ নম্বর জার্সি পরে খেলছে। দল তাকে অন্য একটা নম্বর দিয়েছিল। কিন্তু সে দলকে অনুরোধ করে ২৩ দিতে। এই সংখ্যাটির প্রতি ওর অন্য রকম অনুরাগ।’