মিলান ভরে গেল ফরাসি সুবাসে
ফর্ম, পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান—সবকিছু মিলিয়ে ম্যাচের আগে ফেবারিট ইন্টার মিলানই ছিল। দুই দলের ঘরের মাঠ এক হলেও, ইতালিয়ান লিগের নিয়ম অনুযায়ী গত রাতে কাগজে-কলমে সান সিরোতে স্বাগতিক হিসেবে খেলেছে ইন্টারই। তাই বলে এসি মিলানও যে পিছিয়ে ছিল, বলা যাবে না। পয়েন্ট টেবিলে ঠিক ইন্টারের পেছনেই তাদের অবস্থান। ম্যাচ জিতলে দুই দলের পয়েন্টের ব্যবধান কমে দাঁড়াত ১–এ। আর তাতে ইতালিয়ান লিগ শিরোপার লড়াইটা আরেকটু জমে উঠত।
ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুর কল্যাণে সেটিই হয়েছে। মিলান ভরে গেছে ফরাসি সুবাসে। ইন্টারকে ২-১ গোলে হারিয়ে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে এসি মিলান পয়েন্ট ব্যবধান কমিয়ে এনেছে ১-এ। প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ান ইভান পেরিসিচের গোলে ইন্টার এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের চার মিনিটের ঝড়ে ইন্টারকে খালি হাতে ফিরিয়েছে এসি মিলান।
জোড়া গোল করেছেন জিরু। আর তাতেই মিলান ডার্বি জিতে শহরে নিজেদের ফুটবলীয় কর্তৃত্বটা আগামী ডার্বি হওয়ার আগপর্যন্ত নিজেদের করে নিয়েছে রোজোনেরিরা। ম্যাচ হারলেও ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে ইন্টার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই আছে। এক ম্যাচ বেশি খেলে আর এক পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে এসি মিলান।
প্রথমার্ধে বেশ ভালোভাবেই শুরু করেছিল ইন্টার। খেলছিল চ্যাম্পিয়নের মতোই। দশ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল নেরাজ্জুরিরা, লেফট উইংব্যাক হিসেবে খেলা পেরিসিচের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ডাচ রাইট উইংব্যাক দেনজেল দুমফ্রাইজ ইন্টারকে এগিয়ে দিয়েছেন বলে মনে হলেও পেরিসিচ অফ সাইডে ছিলেন। যে কারণে গোলটা বাতিল হয়ে যায়। এভাবে মুহুর্মুহু আক্রমণে এসি মিলানের রক্ষণভাগকে প্রথমার্ধে ব্যতিব্যস্ত রাখে ইন্টার মিলান। এসি মিলানের ফরাসি গোলকিপার মাইক মাইনানের নৈপুণ্যে ইন্টার একাধিক গোল করতে পারেনি এই অর্ধে। পরের মিনিটেই ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচের দূরপাল্লার একটা শট আটকে দেন মাইনান।
ম্যাচের ৩৮ মিনিটে এই মৌসুমেই এসি মিলান থেকে ইন্টারে নাম লেখানো তুরস্কের মিডফিল্ডার হাকান চালানোলুর কর্নার থেকে দৃষ্টিনন্দন ভলি করে নেরাজ্জুরিদের এগিয়ে দেন পেরিসিচ। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো খেলা শুরু করে এসি মিলান। ৪৯ মিনিটে ইতালিয়ান মিডফিল্ডার সান্দ্রো তোনালির দূর থেকে মারা শট একটুর জন্য পোস্টের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৭৫ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ব্রাহিম দিয়াজের পাস থেকে এসি মিলানকে সমতায় ফেরান অলিভিয়ের জিরু। এর তিন মিনিট পরই রাইট ব্যাক দাভিদে কালাব্রিয়ার পাস দুর্দান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বাঁ পায়ের শটে দলকে এগিয়ে দেন চেলসি ও আর্সেনালের সাবেক এই স্ট্রাইকার। দুটি গোলেই চাইলে ইন্টার গোলকিপার সামির হানদানোভিচের দোষ ধরা যায়।
দিনের অন্যান্য ম্যাচে এএস রোমা গোলশূন্য ড্র করেছে জেনোয়ার সঙ্গে। নিজেদের মাঠে ফিওরেন্তিনা ৩-০ গোলে হেরে বসেছে লাৎসিওর সঙ্গে। গোল করেছেন সার্বিয়ান মিডফিল্ডার সের্গেই মিলেঙ্কোভিচ-সাভিচ ও ইতালিয়ান স্ট্রাইকার চিরো ইম্মোবিলে। বাকি গোলটা ফিওরেন্তিনা লেফটব্যাক ক্রিস্তিয়ান বিরাঘির আত্মঘাতী।
এফএ কাপের ম্যাচে টটেনহাম হটস্পার ৩-১ গোলে জিতেছে ব্রাইটনের বিপক্ষে। জোড়া গোল করেছেন ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন, বাকি গোলটা ব্রাইটন মিডফিল্ডার সলি মার্চের আত্মঘাতী। ব্রাইটনের হয়ে সান্ত্বনাসূচক গোল করেছেন মিডফিল্ডার ইভিস বিসুমা। ওদিকে নতুন চাকরির প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে বেশ ভালোভাবেই উতরে গেছেন ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। তাঁর দল এভারটন ৪-১ গোলে হারিয়েছে ব্রেন্টফোর্ডকে। গোল করেছেন কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন, ইংলিশ ডিফেন্ডার মেসন হোলগেট ও ইংলিশ উইঙ্গার আন্দ্রোস টাউনসেন্ড। ল্যাম্পার্ডের সাবেক ক্লাব চেলসি ২-১ গোলে জিতেছে প্লিমাউথ আর্গাইলের বিপক্ষে। চেলসির হয়ে গোল করেছেন দুই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার সেজার আজপিলিকেতা ও মার্কোস আলোনসো। ফুলহ্যামকে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। চার মিনিটে ফাবিও কারভালিওর গোলে ফুলহ্যাম এগিয়ে গেলেও পরে একে একে সিটির হয়ে গোল করেন ইলকায় গুনদোয়ান, জন স্টোনস ও রিয়াদ মাহরেজ (২)। ইনগ্লিশ প্রিমিয়ার লিগের একমাত্র ম্যাচে বার্নলি গোলশূন্য ড্র করেছে ওয়াটফোর্ডের সঙ্গে।
জার্মান বুন্দেসলিগায় জয় পেয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। লাইপজিগকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে তারা। ম্যাচের ১২ মিনিটে জার্মান মিডফিল্ডার টমাস মুলারের গোলে বায়ার্ন এগিয়ে গেলেও ২৭ মিনিটে সমতায় ফেরে লাইপজিগ, পর্তুগিজ স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভার কল্যাণে। ৪৪ মিনিটে বায়ার্নকে আবারও এগিয়ে দেন রবার্ট লেভানডফস্কি। ৫৩ মিনিটে লাইপজিগ আবারও সমতায় আসে ফরাসি মিডফিল্ডার ক্রিস্তোফার এনকুনকুর কল্যাণে। পাঁচ মিনিট পরেই লাইপজিগের ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইয়োস্কো গভিয়ারদোলের আত্মঘাতী গোলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পাওয়ার লাইসেন্স পেয়ে যায় বায়ার্ন।