মেসিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিলেন সুয়ারেজ!

.
.

লড়াইটা জমজমাটই হয়েছে। গোল, পাল্টা গোল, তার জবাবে আরও গোল। এমন লড়াই-ই তো চাই। এমন লড়াই দেখার পরই তো মনে হয় ‘এত যে জাগলেম, সে কাহার জন্য, ধন্য এ জাগরণ, ধন্য রে ধন্য’। বিশেষ করে লড়াইটা যখন শেষ হয় ৪-৩ গোলের উত্তেজনায়। শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে লিওনেল মেসিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিলেন লুইস সুয়ারেজ।

থামুন! ফুটবল কি আর টেনিস? এখানে দুই খেলোয়াড়ের লড়াই হয় কীভাবে? কীভাবে এক খেলোয়াড় আরেক খেলোয়াড়কে হারিয়ে দেয়? সেটিও কিনা একই দলের দুই সতীর্থ! কাল তো খেলা ছিল বার্সেলোনা বনাম ভ্যালেন্সিয়ার।
​ঠিকই বলেছেন। লড়াই ছিল বার্সা-ভ্যালেন্সিয়ারই। ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোপা ডেল​ রের মতো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের লড়াই। কিন্তু কি জানেন, কাল ম্যাচের ১২ মিনিটের মধ্যেই এক রকম ​নিশ্চিত হয়ে গেল, এ আর বার্সা-ভ্যালেন্সিয়া লড়াই থাকছে না। ততক্ষণে ভ্যালেন্সিয়ার গোলমুখে বার্সার একের পর এক ঝোড়ো আক্রমণে বোঝা গেল, আজ ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ​খেলার ‘মুডে’ নেই বার্সা, আজ তারা আছে ভ্যালেন্সিয়াকে ‘নিয়ে’ খেলার মুডে।
আজ শুধুই হবে গোল-উৎ​সব। এবং ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি গিয়ে আসলে পরিষ্কার হলো, আজ ‘লড়াই’টা হবে মেসি বনাম সুয়ারেজের। শেষ পর্যন্ত যে লড়াইয়ে মেসিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিলেন সুয়ারেজ। বার্সার কাছে ৭-০ গোলে হারল ভ্যালেন্সিয়া! স্পেনের বড় ক্লাবগুলোর অন্যতম। দ্বিতীয়ার্ধে দশজনকে নিয়ে খেলতেও হয়েছে এই ‘অজুহাত’ও দেখানোর সুযোগ নেই। ভ্যালেন্সিয়া বলছে, এটাই তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লজ্জাগুলোর একটি। কোচের চাকরি করতে এসে গ্যারি নেভিল বুঝছেন, এর চেয়ে টিভি স্টুডিওর আরামদায়ক শীতলতা কত ভালোই না ছিল!
প্রথম লেগটাতেই সেমিফাইনালকে শেষ করে দিয়ে ম্যাচটিকে গোল-উৎ​সব বানিয়ে ফেললেন দুই হ্যাটট্রিক হিরো সুয়ারেজ-মেসি। আর তাই, যতটুকু লড়াইয়ের উত্তাপ পাওয়া গেছে সেটি ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ারে’র মধ্যেই। মেসি-সুয়ারেজ যে মেতে উঠেছিলেন একে অন্যকে গোল দিয়ে ছাড়িয়ে যাওয়ার খেলায়।
তাতে ১২ মিনিটেই দুই গোল করে ফেললেন সুয়ারেজ। ২৯ মিনিটে নাম লেখালেন মেসিও। এমএস হয়ে গেছে, এন বাকি। বার্সার আগের ম্যাচে একবার সুয়ারেজ-নেইমার গোল করলেন, মেসির গোল হলো না। আবার মেসি-সুয়ারেজ গোল করলেন, নেইমারের গোল নেই। এভাবে কি আর জমে? প্রথমার্ধের শেষ প্রান্তে বক্সে ফাউল করা হলো মেসিকে। পেনাল্টি, সেই সঙ্গে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন ভ্যালেন্সিয়া অধিনায়ক মুস্তাফি। ঠিক এর আগের মিনিটে মেসির একটা গোল ‘ঠেকিয়ে’ দিয়েছে ক্রসবার।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সুয়ারেজের সঙ্গে ২-২ সমতা ফেরানোর সুযোগটা দ্রুতই পেয়ে গেলেন। কিন্তু কী আশ্চর্য, মেসি পেনাল্টি নিতে পাঠালেন নেইমারকে! ওই যে, তিনজনই গোল না পেলে ঠিক কেন জানি জমে না। বার্সার গোল উৎ​সব মানেই এমএসএন। নেইমার কী করলেন? আরও একবার পেনাল্টি মিস! সর্বশেষ আটটির চারটিতেই গোল করতে ব্যর্থ!
তা হোক, দু হাতে মুখ ঢাকা নেইমারকে মেসিই মাথায় হাত বুলিয়ে বলে দিলেন, ‘একটা ​গোল পাসনি, সামনে দশটা পাবি রে বোকা!’ নেইমারও সেই মিষ্টি হাসিতে ঝেড়ে ফেললেন হতাশা। মেসিও সুয়ারেজকে ধরে ফেলে আবার পেছনে ফেললেন ৫৮ ও ৭৪ মিনিটে দুই গোল করে। এ বছরে এটি মেসির দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এ বছর এরই মধ্যে ১১ গোল—ইনজুরির কারণে দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে থাকা মেসি নিজের সেরা ছন্দে ফিরছেন। এ বছরের গোল হিসাবে স্পেনের সব খেলোয়াড়ের সামনে আছেন মেসি—প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য এ আরেকটি দুঃসংবাদ।
কিন্তু ওই যে, এ রাতে ঠিক করা ছিল আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ে ফুটবলের শতাব্দী প্রাচীন লড়াইটা এবার ব্যক্তিগত দ্বৈরথের মোড়কে হবে। ২-৩-এ পিছিয়ে পড়া সুয়ারেজ ৮৩ মিনিটে করলেন হ্যাটট্রিক। মেসি যা পারে আমিও তা পারি। এ বছর সুয়ারেজরও এটি দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে তিনটি ভিন্ন প্রতিযোগিতায় হ্যাটট্রিক করেছেন, যে কৃতিত্ব ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে আর কারও নেই। ৮৮ মিনিটে সুয়ারেজের আবারও গোল! মেসি যা পারে, আমি কিন্তু কখনো কখনো তার চেয়ে বেশিও পারি!
মজার ব্যাপার হলো, ম্যাচ শেষে সেই দুজনের মধ্যে খানিকটা খুনসুটি হলো। দুজন দুটি বলও নিয়ে বের হলেন, স্যুভেনির হিসেবে রাখবেন বলে। আগের দিন আদালতে হাজিরা দিয়ে আসা নেইমারের মুখটা কি একটু ভার? মেসি-সুয়ারেজ হয়তো খোঁচালেনও, ‘কি রে, তুই তো আমাদের কাছে ৭-০ গোলে হারলি।’ কদিন আগে যে খোঁচাটা খেয়েছেন সুয়ারেজ। তার জবাবে সুয়ারেজ বিলবাও ম্যাচে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। রোববার লেভান্তের খবর আছে। এবার না নেইমার হ্যাটট্রিক করে বসেন!