মেসির ধারণা, বার্সা-রিয়াল ভুগবে
শুরুটা করেছিলেন নেইমার। ২০১৭ সালে ফুটবল বিশ্বে ভূকম্পন সৃষ্টি করে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে চলে যান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। লা লিগা থেকে তাঁর এমন প্রস্থান যে একক কোনো ঘটনা নয়, সেটি পরের কয়েক বছরেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। পরের বছরেই আবার আলোড়ন, এবার রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তকুলকে দুঃখে ভাসিয়ে জুভেন্টাসে চলে যান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
তবু একজনে ভর করে টিকে ছিল লা লিগা, লিওনেল মেসি। প্রিমিয়ার লিগের ঝলকানির মধ্যেও লা লিগাতে যে নজর যেত ভক্তদের, সেটা আর্জেন্টাইন তারকার কারণেই। এবার সেটাও গেল। বার্সেলোনার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি মেসিকে ধরে রাখা। পিএসজি দুহাত বাড়িয়ে সে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। ওদিকে আক্ষরিক অর্থেই বড় তারকাশূন্য হয়ে পড়েছে লা লিগা। লিওনেল মেসির ধারণা, এভাবে তারকা হারিয়ে ফেলা ভোগাবে বার্সেলোনা ও রিয়ালকে।
গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে মেসিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে পিএসজি। সে সুবাদে প্রায় ১০টি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন পিএসজির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা। এল পাইসের সঙ্গে কথোপকথনেই বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের তারকা সংকট নিয়ে কথা বলেছেন মেসি।
তাঁর বিদায়ে লা লিগা তারকাশূন্য হয়ে পড়েছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল মেসিকে। জবাবে স্বভাবসুলভ ঢঙেই বিতর্ক জন্ম না দেওয়া উত্তর দিয়েছেন মেসি, ‘শেষ পর্যন্ত লিগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো এর দলগুলো। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ এখনো সেখানেই আছে। সেভিয়া আছে, ভ্যালেন্সিয়া এবং আতলেতিকো আছে, এগুলোও বড় দল। খেলোয়াড়েরা চলে গেলেও ক্লাবগুলো সব সময়ই থাকে। লা লিগা এখনো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। আগেও অনেক খেলোয়াড় গেছে এবং ক্লাবগুলো মানিয়ে নিয়েছে।’
এতটুকু পর্যন্ত মেসি যা বলছেন, সেটা যেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসের কথাই। প্রথম যখন নেইমার বিদায় নিলেন স্প্যানিশ লিগ থেকে, তখন তেবাস বলেছিলেন, এটা কোনো সমস্যা নয়, যদি মেসি-রোনালদো চলে যান, তখন দুশ্চিন্তা করবেন। এক বছর পর রোনালদোর বিদায়বেলায়ও খুব একটা আফসোস দেখাননি। বলেছিলেন, মেসি তো আছে। এবার মেসিকেও হারিয়েছে লা লিগা। ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদ হারিয়েছে সের্হিও রামোসকেও। যে তারকাদের জন্য মানুষ কোনো দলকে সমর্থন দেন, কিংবা দলকে অনুসরণ করতে পারেন—এমন কেউ আদতে নেই লা লিগায়।
রিয়ালের এডেন হ্যাজার্ড, বার্সেলোনার আঁতোয়ান গ্রিজমান, ফিলিপে কুতিনিও, আতলেতিকোর লুইস সুয়ারেজরা দুর্দান্ত খেলোয়াড় হতে পারেন, কিন্তু টিভি রেটিং বা দর্শক আগ্রহের দিক থেকে কখনোই মেসি-রোনালদো-নেইমারের কাছাকাছি মানের সম্মোহনী শক্তিও তাঁদের আছে বলে কেউ দাবি করবেন না। তেমন তারকা ইংলিশ লিগেও নেই, কিন্তু ইংল্যান্ডে দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতটা, স্পেনে মূল দু-তিনটি দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলার মতো দলও সেভাবে নেই।
সে কারণে মেসি-রোনালদোদের মতো সব তারকা হারিয়ে ফেলায় লা লিগা যে দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এবং সে সুবাদে বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদকে যে ভুগতে হবে, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন মেসি। এটাও বলেছেন, আবার বড় তারকাদের ফেরানো ছাড়া এ অবস্থা থেকে নিস্তার পাবে না এ দুই ক্লাব, ‘ক্লাবগুলো মানিয়ে নেয় এবং ভালো করে। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে এখন কিছুদিন ভুগতে হবে। কিন্তু কয়েক বছর পর ওরা সামলে নেবে। বড় তারকারা স্প্যানিশ ফুটবলে ফিরবে।’