মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে...রোনালদোকেও টানবে পিএসজি?

মেসির পর রোনালদোও যদি পিএসজিতে যান, তাহলে কেমন হয়!ছবি: রয়টার্স

ফুটবলে ব্র্যান্ডমূল্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে নামী তারকা কারা? সবার মুখে ঘুরেফিরে মেসি, নেইমার, রোনালদো, এমবাপ্পে—এঁদের নামই তো আসবে। ফুটবলে পজিশনের দিক দিয়েও ‘ফরোয়ার্ড’রা সবচেয়ে নজরকাড়া। ফরোয়ার্ডদের মধ্যেও এই চারজন সবচেয়ে আরাধ্য এখন। যাঁদের তিনজনই আজ একে অন্যের সতীর্থ। বাকি থাকেন কেবল একজন। এবার কি তবে রোনালদোর দিকেও হাত বাড়াবে পিএসজি?

এখনো এ নিয়ে কথাই ওঠেনি। কিন্তু পিএসজি যদি সত্যি সত্যি রোনালদোর দিকে হাত বাড়ায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জুভেন্টাসের সঙ্গে রোনালদোর চুক্তির বর্তমান অবস্থা ঠিক সুবিধার নয়। ২০২২ সালের জুনে জুভেন্টাসের সঙ্গে চুক্তিও শেষ হয়ে যাবে রোনালদোর। ইতালীয় ক্লাবটির আর্থিক অবস্থাও এখন তেমন ভালো নয় যে ৩৬ বছরের রোনালদোকে আকাশছোঁয়া বেতন দিয়ে তারা দলে রাখবে। ফলে রোনালদোর সঙ্গে জুভেন্টাস চুক্তি নবায়ন করে কি না, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন।

এ মৌসুম শেষেই রোনালদোকে ছেড়ে দিতে পারে জুভেন্টাস
ছবি: এএফপি

এ ক্ষেত্রে আরেকটা কথা না বললেই নয়। জুভেন্টাসের বর্তমান কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি রোনালদোর খুব যে বড় ভক্ত, তা বলা যাবে না। ভদ্রলোক এর আগেও জুভেন্টাসের কোচ ছিলেন অনেক দিন। মাঝে দায়িত্ব ছেড়েছিলেন বছর দুয়েকের জন্য। আবারও ফিরেছেন। যখন জুভেন্টাস ছেড়েছিলেন, সেবার ‘লা রিপাবলিকা’, ‘স্পোর্তস মিদিয়াসেত’, ‘ফুতবল ইতালিয়া’সহ নির্ভরযোগ্য অনেক ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল দলের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে আলেগ্রির মতভেদ। ২০১৯ সালে ক্লাব সভাপতি আন্দ্রেয়া আনেয়েল্লির সঙ্গে নিজের শেষ সভায় আলেগ্রি জানিয়েছিলেন, ক্লাবের উন্নতি চাইলে রোনালদোকে বিক্রি করে দিতে হবে। নয়তো দলের তরুণ খেলোয়াড়দের প্রত্যাশিত উন্নতি হবে না। ক্লাবের অগ্রগতিও থেমে যাবে। আনেয়েল্লি সে কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আলেগ্রিও বিদায় নিয়েছিলেন নীরবে।

পিএসজিতে এ তিনজনের সঙ্গে এমবাপ্পে—স্বপ্ন তো বটেই, কিন্তু সেটিই সত্য হতে পারে পিএসজির কল্যাণে
ফাইল ছবি

কে জানে, হয়তো আলেগ্রির সঙ্গে জুভেন্টাসের এমন গোপন সমঝোতা হয়েও আছে, যে চুক্তির বাকি এক বছর রোনালদো দলে থাকুক, পরে রোনালদো চলে গেলে নিজের ইচ্ছেমতো আবারও দলের রসায়ন ঠিক করার সুযোগ পাবেন এই ইতালিয়ান!

রোনালদোকে দলে আনার পেছনে যে ক্রীড়া পরিচালকের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি, সেই ফাবিও পারাতিচিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, পারাতিচি এখন টটেনহামে। পারাতিচিই আরেক পরিচালক জিউসেপ্পে মারোত্তার সঙ্গে একরকম লড়াই করে জুভেন্টাসে এনেছিলেন রোনালদোকে। পরে জুভেন্টাস ছেড়ে ইন্টারের ক্রীড়া পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন মারোত্তা, যে ইন্টার গত মৌসুমে জুভেন্টাসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে লিগ শিরোপা।

আর রোনালদোকে দলে রাখার ব্যাপারে জুভেন্টাস যদি উদাসীন হয়, সেটিও হতে পারে পিএসজির জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ, যে সুযোগটা এবার মেসির ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে গিয়েছিল তাঁরা। মেসির মতো চাইলে তখন রোনালদোকেও কোনো দলবদল ফি ছাড়াই দলে আনতে পারবে প্যারিসের ক্লাবটি। তখন রোনালদোর সঙ্গে শুধু বেতন ও বোনাস নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলেই ব্যস, বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চার ফুটবল তারকা বসতি গড়বেন একসঙ্গে, পিএসজিতে।

বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি পিএসজিতে যাবেন—এটা কে ভেবেছিল?
ছবি: এএফপি

আর সেটাই যদি হয়, ফুটবলীয় দিক দিয়ে তো বটেই, নিজেদের অনেক বড় এক লক্ষ্য বাস্তবায়নের দিক দিয়েও অনেক দূর এগিয়ে যাবে পিএসজির মালিকপক্ষ কাতার রাজপরিবার। সেই ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর বিশ্বমঞ্চে নিজেদের তুলে ধরার জন্য অনেক চেষ্টাই করে যাচ্ছে দেশটা। ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য যেন শুধু তেল ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর না করতে হয়, সে লক্ষ্যে এর মধ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে তারা। লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে তেল ও গ্যাস ছাড়াও আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা।

বলা যেতে পারে, ২০১১ সালে পিএসজিকে কেনা, ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠা, কাতারের প্রতিটা পদক্ষেপই ওই মহাপরিকল্পনার অংশ, গোটা বিশ্বকে কাতারের আসল প্রভাব, অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানান দেওয়া। দেশে বিশ্বকাপ আয়োজিত হলে, বা নিজেদের অর্থায়নে চলা ক্লাবে মেসি, রোনালদো, নেইমার, এমবাপ্পেদের মতো খেলোয়াড় আসলে শুধু ফুটবল মাঠের ভেতরের লড়াইতেই নয়, বাইরের অনেক লড়াইয়েও জিততে পারবে কাতার, রাখতে পারবে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা। আর সে ক্ষেত্রে মাঠের ভেতরে এসব খেলোয়াড়ের নৈপুণ্য যেমন প্রভাব রাখবে, মাঠের বাইরে প্রভাব রাখবে এসব খেলোয়াড়ের ব্র্যান্ডমূল্য। পিএসজি তাহলে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পের পর রোনালদোর দিকে হাত বাড়াবে না-ই বা কেন?

খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদোর পায়ে এখন অমন ঝলক দেখা না গেলেও, রোনালদো ব্র্যান্ডটার মূল্য যে এখনো আকাশছোঁয়া! সে ব্র্যান্ডের স্বাদ সুযোগ থাকলে পিএসজি পেতে চাইবে না-ই বা কেন? নিজের দেশে আয়োজিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপের ঠিক আগ দিয়ে ফুটবলের চার মহারথীকে একই ছাদের তলায় এনে ‘কাতার ব্র্যান্ড’কে আরও উঁচুতে তোলার যে এখনই সুযোগ!