মেসি-সুয়ারেজকে খেপানো বার্তোমেউর দুশ্চিন্তা কমছে না

বার্তোমেউর দুশ্চিন্তা কমছে না শিগগির।ছবি: বার্সেলোনা

লিওনেল মেসি চেষ্টা করেও পারেননি। ওদিকে থাকতে চেয়েও বের হয়ে যেতে হয়েছে লুইস সুয়ারেজকে। বিদায় পর্বেও শান্তি পাননি উরুগুয়ের স্ট্রাইকার। নিজের পছন্দের দলে যাওয়ার পথেও বাধা এসেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হুমকি দিয়ে পথের কাটা সরিয়ে তবেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়েছেন সুয়ারেজ। ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ তাই কোনোভাবেই মেসি বা সুয়ারেজের পছন্দের তালিকায় থাকবেন না আর।

আজ বিদায় বেলায় বার্তোমেউকে পাশে বসিয়েই ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন সুয়ারেজ। মেসির বিদায় নেওয়ার ইচ্ছার সময়টায় ক্লাবের আচরণ ও তাঁকে ক্লাব থেকে বের করে দেওয়ার নানা চেষ্টা নিয়ে বলেছেন, ‘গত এক মাস খুব পাগলাটে এক সময় গেছে। অনেক কিছুই বলা হয়েছে। অনেক কিছু বানিয়ে বলা হয়েছে, এমন কিছু তথ্য ফাঁস (সংবাদমাধ্যমে) করা হয়েছে যা সত্য ছিল না। এসব দেখে মাঝেমধ্যে ভয়ংকর রাগ হতো, কিন্তু এসবে না জড়ানোই ভালো।’ সুয়ারেজ অন্তত এটা ভেবে খুশি হবেন, তাঁদের এভাবে ভোগানো বার্তোমেউ নিজেও খুব একটা শান্তিতে নেই।

বার্সেলোনার বর্তমান বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আহ্বান জানানো হয়েছে। সে উদ্দেশ্যে ক্লাবের সদস্যদের কাছ থেকে ২০ হাজার ৬৮৭টি স্বাক্ষর আদায় করে এরই মাঝে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সে স্বাক্ষরগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। জানানো হয়েছে, বার্তোমেউদের বিপক্ষে অনাস্থা ভোটের জন্য নেওয়া স্বাক্ষরের মধ্যে জাল স্বাক্ষর আছে কি না কিংবা নকল স্বাক্ষর বাদ দিয়েও ১৬ হাজার ৫২১টি স্বাক্ষর আছে কি না সেটা জানা যাবে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর। সোজা ভাষায়, সেদিনই জানা যাবে, বার্তোমেউ ও তাঁর পরিচালকদের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না।

১৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ১০ দিন সময় পেয়েছে ক্লাব। এ সময়ের মধ্যেই স্বাক্ষরগুলো প্রকৃত সদস্যের কি না সেটা জানতে হবে। ক্লাবের একটি গ্রুপ ‘মেসা দেল ভোতো’ এ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। বার্সেলোনার পক্ষ থেকে এখানে সদস্য জোসেপ ত্রিয়াদো থাকছেন এ গ্রুপে। কাতালান ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকেও একজন আছেন এই গ্রুপে। আর পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বার্সেলোনা সভাপতি পদে দাঁড়ানো জর্দি ফার দেখভাল করছেন পুরোটা।

এ ব্যাপারে ফার একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। বিবৃতিতে বার্তোমেউর পদে নিজেকে দেখার স্বপ্নে বিভোর ফার বলেছেন, ‘আমরা হাজার হাজার স্বাক্ষর জোগাড় করেছি, যা এই বোর্ডের বিরুদ্ধে সবার ক্ষোভের সমষ্টি। এই ক্লাবের মুখপাত্র হিসেবে বর্তমান বোর্ডকে আর মেনে নেওয়া যায় না।’

২৯ সেপ্টেম্বরের পরই যে পদ থেকে বার্তোমেউকে সরে যেতে হবে এমন নয়। ফার ও তাঁর সঙ্গীরা যদি ২৯ তারিখে প্রমাণ করতে পারে, ক্লাবের পূর্ণ সদস্যদের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৫২১টির বেশি স্বাক্ষর নিতে পেরেছেন তারপরই গণভোট আয়োজন করা হবে।

সে জন্যও প্রায় ৪০ দিন সময় পাচ্ছেন বার্তোমেউ। এর মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে হবে ক্লাবকে। সেখানে দেড় লাখ সদস্যের ভোটেই ভাগ্য নির্ধারিত হবে বার্তোমেউর। সেখানে বর্তমান সভাপতির বিপক্ষে অন্তত এক লাখ ১ ভোট পেতে হবে। আর তাহলেই প্রথম কোনো সভাপতি হিসেবে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পদ হারাবেন বার্তোমেউ। বার্সেলোনার ইতিহাসে বার্তোমেউর আগে মাত্র দুজন সভাপতির বিপক্ষে অনাস্থা ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৮ সালে জোসেপ নুনেজ ও ২০০৮ সালে হোয়ান লাপোর্তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত অনাস্থা ভোট পাওয়া যায়নি।

ফার কে যেমন আত্মবিশ্বাসী শোনাচ্ছে, তাতে নভেম্বর পর্যন্ত মহা দুশ্চিন্তাতেই সময় কাটাতে হবে বার্তোমেউকে। এমন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করার ক্ষমতা ছিল শুধু একজনের, মেসি। কিন্তু সেই মেসি যে তাঁর ওপর রাগ করেই ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন।