মতিঝিল মোহামেডান ক্লাব ভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবন। মাঝখানে সামান্য পথ পেরিয়ে মোহামেডান–সমর্থকেরা আজ বিকেলে যখন বাফুফে ভবনে এলেন, চারপাশ তখন ঢোলের শব্দে প্রকম্পিত।
নতুন ফুটবল মৌসুম শুরুর আগে আজ সাড়ম্বরে খেলোয়াড়দের নামের তালিকা বাফুফের কাছে তুলে দিলেন মোহামেডান কর্মকর্তারা। সঙ্গে ছিলেন কোচ শন লেনসহ দলের খেলোয়াড়েরাও। তবে এই দলে খেলোয়াড়দের নামে চমক একটিই—সাকিব আল হাসান। বলাবাহুল্য, তিনি ক্রিকেটার সাকিব নন!
ফুটবলারদের দলবদলের আগের সেই জৌলুশ নেই। অনেক বছর ধরে শুধু খেলোয়াড়ের নামের তালিকা বাফুফের কাছে জমা দিয়ে আসছে বেশির ভাগ ক্লাব। ফলে দলবদলের আসল উত্তাপ হারিয়ে গেছে।
মাঝে মাঝে দুই একটি দল খেলোয়াড়দের নিয়ে আসে বাফুফে ভবনে, সঙ্গে হয়তো ঢোলের শব্দও থাকে। কখনো কখনো ঘোড়ার গাড়িও। করোনার আগে যেমন মোহামেডান ঢাকঢোল পিছিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে খেলোয়াড়দের এনে দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছিল।
আজ ঘোড়ার গাড়ি না আনলেও দলবদলের বাজারে মোহামেডানের উপস্থিতি নজর কেড়েছে আলাদা করেই। ঢাকঢোল বাজিয়ে দল এল।
এর কিছু সময় আগে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কর্মকর্তারা নীরবে খেলোয়াড়ের তালিকা জমা দিয়ে যান বাফুফের দপ্তরে। একই সময়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে আসে বাংলাদেশ পুলিশ দলও। পুলিশের সব খেলোয়াড় আসেন দলবদল সারতে।
তবে পুলিশের আগমন যতটা না সাড়া ফেলে বাফুফে ভবন চত্বরে, তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পড়ে মোহামেডানের আগমনে।
মোহামেডানের সহকারী কোচ আলফাজ আহমেদ, ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, নতুন গোলরক্ষক কোচ ছাইদ হাসান কাননের মতো সাবেক ফুটবলাররা বাফুফে ভবনে আসেন দলের সঙ্গে। তাঁদের উপস্থিতি আলো কাড়ে আলাদাভাবে।
আসেন আবাহনী ছেড়ে মোহামেডানে ফিরে আসা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। দলবদল কার্যক্রম শেষে ফেরার সময় মামুনুল প্রথম আলোকে বললেন, ‘মোহামেডানের নামের ভার অনেক বড়। তরুণদের নিয়ে নতুন দলটা ভালোই হয়েছে। আশা করি, আমরা মাঠে ভালো কিছু করে দেখাতে পারব।’
কিন্তু ভালো কিছু করা আর শিরোপা জেতা এক নয়। মোহামেডান শিরোপা জেতার মতো দল হয়নি মনে করছেন সবাই। দলটিতে নেই বর্তমান জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড়।
মোহামেডানের নামের ভার অনেক বড়। তরুণদের নিয়ে নতুন দলটা ভালোই হয়েছে।
গত মৌসুমে মোহামেডানে খেলে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ডিফেন্ডার আতিকুজ্জামান ও হাবিবুর রহমান দল ছেড়েছেন। তাঁদের জায়গা পূরণে সময়ের সেরাদের নিতে পারেনি সাদা–কালোরা।
পরিচিত খেলোয়াড়দের মধ্যে এই মোহামেডানে আছেন শেখ রাসেলে এক মৌসুম কাটিয়ে ফেরা স্ট্রাইকার তকলিস আহমেদ। থেকে গেছেন ফরোয়ার্ড জাফর ইকবাল।
ক্লাব কর্মকর্তাদের দাবি, ভালো বিদেশি নেওয়া হয়েছে এবার। ভালো নাকি সাধারণ মানের, সেটা সময়ই বলবে। তবে মোহামেডান দুজন বিদেশি ডিফেন্ডার নিয়েছে। একজন অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার রিয়ার ডন অ্যারন জন, অন্যজন মেসিডোনিয়ার মেসিনোভিক জাসমিন।
গত মৌসুমে শেখ রাসেলে খেলা নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড জন ওবি মোনেকেকে নেওয়া হয়েছে। রেখে দেওয়া হয়েছে মালির স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতেকে।
২৭ নভেম্বর শুরু স্বাধীনতা কাপে অবশ্য মোহামেডান মাত্র একজন বিদেশি পাচ্ছে। শুধু সোলেমান দিয়াবাতে এখন আছেন ঢাকায়।
বাকি ৩ বিদেশি এখনো আসতে পারেননি ভিসা জটিলতায়। তাঁরা আসতে আসতে হয়তো স্বাধীনতা কাপ শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে কোচ শন লেন আশাবাদী তাঁর দল ভালো করবে মাঠের খেলায়, ‘আমাদের সেরা বিদেশি সোলেমান আছে। ওর নেতৃত্বে তারুণ্যনির্ভর দল মাঠে ভালো খেলবে।’
মোহামেডানের খেলোয়াড়ের তালিকায় চোখ বোলালে একটি নাম নজর কাড়ে—সাকিব আল হাসান। না, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মোহামেডানের ফুটবল দলে যোগ দেননি। এই সাকিব আল হাসান নবাগত।
এ ছাড়া আছেন গোলকিপার আহসান হাবিব, ডিফেন্ডার মাসুদ রানা, রাজীব হাসান, ইমন খান, হাফিজুর রহমান। মাঝমাঠে অনীক হাসান, সৈয়দ রাকিব খান, শ্যামল বাপ্পি, শাহেদ হোসেন প্রমুখ। আক্রমণে ফরহাদ মনা, আমির হাকিম প্রমুখ।
দলবদল শেষে মোহামেডানের সমর্থক কয়েকজন বললেন, খুব আশাবাদী হওয়ার মতো দল হয়নি। ক্লাব পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন এলেও ফুটবল দল সেই সাদামাটাই রয়ে গেল। তবে সব একপাশে রেখে কেউ কেউ সান্ত্বনা খুঁজতে চাইলেন এই বলে, ‘আবাহনীরে হারালেই চলব আমাগো। হেইডাই চাই।’