ম্যারাডোনার খেলার গল্প শুনে বড় হয়েছে সবাই
ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও নাপোলির গল্পটা চির অম্লান। অবনমনের শঙ্কায় থাকা এক ক্লাবকেও যে শিরোপা জেতানোর মতো দল বানানো যায়, তাদের নিয়ে ইউরোপে দাপট দেখানো যায়, সেটা ম্যারাডোনাই দেখিয়েছেন।
এই ক্লাবের জন্য তিনি নিজের রক্ত দিতে রাজি ছিলেন। এ শহরের মানুষকে নিজের মানুষ বলে ভাবতেন। এমন ভালোবাসার যোগ্য জবাব নেপলসবাসী দিয়েছে। তাদের হৃদয়ে ম্যারাডোনা যেন শিখা চিরন্তন।
সামান্য মৃত্যুর কী শক্তি সে ভালোবাসায় কমতি আনার! ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবরে সে ভালোবাসাটা আবারও টের পাওয়া গেল।
লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের কাঁধে এখন অনেক বড় দায়িত্ব। যে জার্সিটা চাপিয়েছেন গায়ে, হাতে যে বাহুবন্ধনী পরে; সেটা ছিল একসময় ডিয়েগো ম্যারাডোনার সম্পত্তি।
নাপোলিতে খেলতে গিয়ে ‘নেপলসবাসী’ই হয়ে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার জন্য তাঁর যেমন টান ছিল, তেমন ছিল নেপলসের জন্যও।
এই ভালোবাসা নেপলসবাসীও তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে সব সময়। এমন এক কিংবদন্তির উত্তরসূরি হওয়া সহজ নয়। এই কঠিন কাজটাই করতে হচ্ছে ইনসিনিয়েকে।
ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড সেটা জানেন। ম্যারাডোনার বিদায় বেলায় যা বলেছেন, সেটা এ অবশ্য গত দু–তিন প্রজন্মের সবার জন্য সত্য। ফুটবলকে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। সবাইকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে এ খেলা।
সেটা আরও একবার জানালেন ইনসিনিয়ে, ‘তোমার মানুষদের জন্য সব দিয়ে দিয়েছ, আমাদের জন্য লড়েছ, এ দেশকে ভালোবেসেছ। আমাদের আনন্দ দিয়েছ, হাসি, ভালোবাসা এনে দিয়েছ, দিয়েছ অনেক শিরোপা। আমার ঘরের লোকজনের মুখে তোমার কীর্তির গল্প শুনে বড় হয়েছি। তোমার অসংখ্য খেলা দেখে দেখে বড় হয়েছি। তুমি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় ছিলে, তুমি ছিলে আমাদের ডিয়েগো।’
ইনসিনিয়ে তবু এ প্রজন্মের ফুটবলার। তাঁর ম্যারাডোনার খেলা দেখে বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির চেয়ে মাত্র বছর সাতেকের ছোট ইয়ুর্গেন ক্লপও যে ইনসিনিয়ের দলে!
গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের সময়ও তাঁর মাথায় ছিল ম্যারাডোনার কথা, ‘৫৩ বছর বয়স আমার। মনে হচ্ছে আজীবন আমার সঙ্গী ছিলেন তিনি। যখন খুব ছোট ছিলাম, হয়তো আট বা নয়, ১০ বছর হয়তো। তাকে প্রথম দেখেছিলাম। তাঁর বয়স তখন ১৬ বা ১৭। কোনো এক ভিডিওতে বল জাগলিং করছিলেন, সেই মুহূর্ত থেকেই আমার সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।’
শুধু ফুটবলাররাই তাঁকে দেখে বড় হয়েছে, এটা ভাবা বোকামি। ফুটবলে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই তো ম্যারাডোনাকে এত ওপরে উঠিয়েছে। ম্যারাডোনাকে ভালোবাসার জন্য ফুটবল বোঝার দরকার হতো না।
আবার ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতেও ফুটবলের খুঁটিনাটি জানতে হতো না। রসকষহীন ট্যাকটিকসের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া ফুটবল উপহার দিতেন বলেই তো ব্রায়ান লারাও মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন, ‘আশির দশকে ফুটবল দেখে বড় হয়েছি। শুধু একজন মানুষ আমাকে হতবাক করে দিত এবং তিনি ছিলেন সর্বকালের সেরা ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আপনার চলে যাওয়াটা আমাদের সবার জন্যই মন খারাপ করা দিন। গৌরবের সঙ্গে বিশ্রাম নাও...তুমিই ছিলে সবার সেরা!’