সর্বকালের দুই সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা (বাঁয়ে) ও পেলে।
ছবি: রয়টার্স

দুজনই কিংবদন্তি, বিশ্বকাপ তো জিতেছেনই, ফুটবলের মাঠে আরও কত স্মরণীয় কীর্তি। সর্বকালের সেরা ফুটবলার বললে এ দুজনের নামই সবার আগে মাথায় আসে। হ্যাঁ, পেলে আর ম্যারাডোনার কথাই হচ্ছে। এত এত কীর্তি যাঁদের, তাঁরা কখনো দেশের হয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ট্রফি জিততে পারেননি। কোপা আমেরিকার ট্রফি নেই দুজনের কারও নামের পাশেই।

এই তো গত বছর নভেম্বরে পৃথিবীর মায়া কাটালেন ম্যারাডোনা। পেলে এখনো আছেন, তাঁর পুরোনো স্মৃতি আঁকড়ে। কোপা আমেরিকা জেতা না জেতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো আক্ষেপ ছিল কি না, সেটা কখনো সেভাবে প্রকাশ করেননি। আসলে বিশ্বমঞ্চে এত কিছু করেছেন তাঁরা, কোপা না জেতা নিয়ে কথা বলারও দরকার হয়নি তাঁদের কখনো।

পেলে একবারই কোপা আমেরিকায় খেলেছেন। ১৯৫৯ সালে, প্রথমবার ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পরের বছরই। সেখানে যথারীতি পেলেসুলভই খেলেছেন। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন, চিলির বিপক্ষে জোড়া গোল। সব মিলিয়ে ৮ গোল করে ওইবার কোপার সর্বোচ্চ গোলদাতাও ১৯ বছর বয়সী পেলে, সেরা খেলোয়াড়ও। কিন্তু এত কিছুর পরও তাঁর দল ব্রাজিল সেবার শিরোপা জিততে পারেনি, জিতেছে আর্জেন্টিনা।

এমন পারফরম্যান্স দিয়ে কোপা অভিষেক হওয়ার পরও পেলে কেন আর খেললেন না মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে, সেটা অনেকেরই অজানা। আসলে তাঁর ক্যারিয়ারের স্বর্ণসময়টায় কোপা নিয়ে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের তেমন আগ্রহই ছিল না। সাধারণত তরুণ, উদীয়মান খেলোয়াড়দেরই পাঠানো হতো সেখানে। ১৯৫৯ সালে ‘উদীয়মান’ কোটাতেই পেলে খেলেছিলেন সে সময়কার দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে। খেলতে পারলে পেলে যে ব্রাজিলকে কোপার একাধিক ট্রফি এনে দিতে পারতেন, এ নিয়ে মনে হয় না কারও সন্দেহ আছে।

ম্যারাডোনার আক্ষেপ আরও বেশি। ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা শেষবার যখন কোপার শিরোপা জিতল, ম্যারাডোনা তখন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে। এর আগেই বিশ্বকাপ জিতেছেন, আর্জেন্টাইন ফুটবলের অবিসংবাদিত তারকা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু তত দিনে মাদক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়ে পথও হারিয়েছেন। আর্জেন্টিনার সেই সময়ের কোচ আলফিও বাসিলে তাই ১৯৯৩ সালে কোপার দল গড়েছিলেন ‘ফর্মহীন’ ম্যারাডোনাকে বাদ দিয়েই।

তবে ম্যারাডোনাও খেলেছেন কোপার দুটি আসরে এবং কাকতালীয়ভাবে পেলের মতো তাঁরও কোপা অভিষেক হয় ১৯ বছর বয়সে, ১৯৭৯ সালে। সেই আসরে ম্যারাডোনাকে দেখার স্মৃতি বলতে গিয়ে ৩০ বছর পর ফিফার সাবেক সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার বলেছেন, ‘ওকে দেখার জন্য সবাই মুখিয়ে ছিল। কারণ, জাপানে ওই বছর অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ সে মাত করে এসেছে। যখন ওর পায়ে বল যেত, লোকে হা করে থাকত।’

কিন্তু দুর্ভাগ্য ম্যারাডোনার। নিজে দারুণ খেললেও তাঁর দল সে বছর কোপা জিততে পারেনি। পারেনি ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে পরের বছর কোপা খেলতে যাওয়ার পরও। সেবারও খালি হাতে ফিরেছে আর্জেন্টিনা।

এবারের কোপার ফাইনালটা তাই মেসি–নেইমাররা খেলতে নামছেন ম্যারাডোনা-পেলের সঙ্গে একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। তবে ফাইনাল
শেষে যাঁর হাতে ট্রফি থাকবে, তিনি কিন্তু একটু এগিয়ে যাবেন।