রিয়ালের ম্যাচ নিয়ে ঝগড়া পিকে-এমেরির
শনিবার রাতে পেনাল্টি থেকে গোল করেন করিম বেনজেমা। মাঠে প্রতিপক্ষ ছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও ভ্যালেন্সিয়া। আর সেই পেনাল্টি নিয়ে তর্কে মেতেছেন বার্সেলোনার পিকে ও ভিয়ারিয়ালের উনাই এমেরি!
লা লিগার রেফারিং নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিং (ভিএআর) চালু হওয়ার পরও বিতর্ক কমেনি খুব একটা। এ সপ্তাহে ব্যতিক্রমী কিছু দেখা গেছে লা লিগায়। রেফারিং নিয়ে যতই আপত্তি থাক না কেন, এ ব্যাপারে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানান কোচ, খেলোয়াড় কিংবা ক্রীড়া পরিচালকেরা। কিন্তু এ সপ্তাহে সেই প্রথা ভেঙে গেছে। কোনো ব্যক্তি নন, রেফারিং নিয়ে ভ্যালেন্সিয়া ও রিয়াল বেতিসের অফিশিয়াল একাউন্ট থেকেই ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে।
৮ জানুয়ারি রিয়ালের মাঠে খেলতে গিয়েছিল ভ্যালেন্সিয়া। প্রথমার্ধের একদম শেষভাগে কাসেমিরোকে ডি-বক্সের ভেতরে ফাউল করার দায়ে পেনাল্টি দেন রেফারি। ৪৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে রিয়ালকে এগিয়ে দেন বেনজেমা। এর পর ম্যাচে আর ফিরে আসতে পারেনি দলটি।
৪-১ ব্যবধানে হারা সে ম্যাচের একপর্যায়ে তাই নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি ভ্যালেন্সিয়ার স্প্যানিশ ভাষার টুইটার অ্যাকাউন্টের অ্যাডমিন। টুইট করেছেন, ‘মাদ্রিদের ডাকাতিগুলো নিয়মিত হয়ে উঠছে।’ বুঝতে কারও যেন অসুবিধা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘লাকাসাদেপাপেল’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে। অনন্য উপায়ে ব্যাংক ডাকাতির গল্প নিয়ে সৃষ্ট এ স্প্যানিশ টিভি সিরিজ সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলেছে।
রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বার্সেলোনায় খেলা জেরার্দ পিকে তো এমন সব মুহূর্তের অপেক্ষাতেই থাকেন। খেলার মাঠে না পারলে অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিয়ালকে হেয় করার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেন না পিকে। ভ্যালেন্সিয়ার সে টুইট রিটুইট করে পিকে বলেছিলেন, ‘শব্দ করে আবার বলো না, তাহলে কিন্তু শাস্তি দিতে পারে।’
ব্যাপারটা এখানেই থেমে যেতে পারত। কিন্তু গতকাল রোববার রাতে লা লিগার আরেকটি খেলায় প্রশ্নবিদ্ধ রেফারিং হয়েছে। আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কাল ২-২ গোলে ড্র করেছে ভিয়ারিয়াল। তবে দানি পারেহোর একটি গোল যদি বাতিল না হতো, তাহলে ম্যাচটি ভিয়ারিয়ালই জিতত। প্রথমে মনে হয়েছিল, বল পারেহোর কোমরে লেগে জালে গেছে। কিন্তু রেফারি বলেছেন, বল পারেহোর হাতে লাগায় বাতিল হয় গোল। যদিও রিপ্লেতে বল হাতে লেগেছে, এর সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
ম্যাচ শেষে রেফারির ভুল নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল এমেরিকে। পারেহোর ক্ষেত্রে হ্যান্ডবল হয়নি এ দাবি করে মৌসুমের শুরুতে বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের স্মৃতি ফিরিয়েছেন এমেরি। সে ম্যাচে পিকের হাতে বল লেগেছিল। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেননি। সে ম্যাচে হারের ক্ষতটা যে এখনো তাজা, সেটা বোঝা গেছে এমেরির কণ্ঠে, ‘পিকের ক্ষেত্রে সেটা হ্যান্ডবল হয়েছিল এবং একটা পেনাল্টি ছিল। এটা পরিষ্কার, তাঁর হাতে লেগেছিল এবং এরপর আমরা ম্যাচ হেরেছি। সে পরে এটা অস্বীকার করেছে, এতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি।’
পিকেরটা হ্যান্ডবল হলেও পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। ওদিকে গতকাল পারেহোর ক্ষেত্রে হাতে বল লাগার ব্যাপারটি স্পষ্ট না হলেও গোল বাতিল করা হয়। এমন দ্বিচারিতা মানতে পারছেন না এমেরি, ‘আজ কিন্তু হ্যান্ডবল হয়নি। কারণ, সে কোমর দিয়ে বল গোলরক্ষকের দিকে ঠেলেছে। হ্যাঁ, সেখানে হাত ছিল, কিন্তু এটা হ্যান্ডবল নয়। পিকেরটা হ্যান্ডবল ছিল।’
বার্সেলোনা-ভিয়ারিয়াল ম্যাচে পিকে সঙ্গে সঙ্গে অস্বীকার করেছিলেন হ্যান্ডবলের কথা। আর পরশু পিকে অন্যের ম্যাচে পেনাল্টি নিয়ে কথা বলছেন, এটা ভণ্ডামি মনে হয়েছে এমেরির, ‘পিকেরটা হ্যান্ডবল ছিল, অথচ গতকাল সে টুইটারে অন্য দলের ব্যাপারে প্রতিবাদ করছে। আপনাকে সৎ থাকতে হবে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করা ঠিক নয়। চুপ না থেকে সে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। আমরা কেউই ভিএআর বা ফুটবলের প্রতি সৎ থাকছি না। আজ কোমরে বল লেগেছে এবং এটাকে হ্যান্ডবল হিসেবে দেখেছে। কিন্তু যেহেতু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আমাদের সেটা মানতে হবে।’
অন্য কেউ হলে কী করতেন, সেটা বলা যায় না। তবে এভাবে খোঁচা খেয়ে চুপ থাকার ব্যক্তি পিকে নন। পিকে নতুন টুইট করে খোঁচা দিয়েছেন এমেরিকে, ‘আমরা এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলছি, যে তিন বছর পরও ৬-১ ম্যাচের রেফারি নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। উনাই, ঘটনাটি ভুলে যাও।’ ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে বিতর্কিত রেফারিংয়ের কারণে বার্সেলোনার মাঠে ৬-১ গোলে হেরেছিল এমেরির পিএসজি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে এমেরি বলেছিলেন, সে ম্যাচে কিছু বদলাতে চাইলে রেফারিকে বদলাবেন।