রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা উপহার বার্সেলোনা-আতলেতিকোর

বহু চেষ্টাতেও গোল পেলেন না মেসি।ছবি: রয়টার্স

ম্যাচে সবই ছিল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। রক্ষণকে বোকা বানানো মুভমেন্ট, গোলকিপারের সেরাটা বের করে ফ্রি–কিক। দারুণ বিল্ড আপ আর পাসিং ফুটবল, ভয়ংকর গতির প্রতি আক্রমণ। জয়ের জন্য দুই দলের মধ্যে আগ্রাসন ছিল। ৯০ মিনিটের খেলায় দুই দল মিলে ফাউল করেছে ৩৫ বার। লা লিগার শিরোপা জেতার জন্য যেভাবে লড়াই দেখতে চান সবাই, সেটাই ছিল বার্সেলোনা ও আতলেতিকো মাদ্রিদের ম্যাচে।

কিন্তু লা লিগা জয়ের পথে এগিয়ে যেতে যা দরকার ছিল, সেটাই পায়নি দুই দল, গোল। যোগ করা সময় মিলিয়ে ৯৬ মিনিটে বহু চেষ্টাতেও প্রতিপক্ষের জালে বল স্পর্শ করাতে পারেনি দুই দল। গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হওয়া এই ম্যাচ শেষে আদতে লাভ হলো রিয়াল মাদ্রিদের। ৩৫ ম্যাচ শেষে ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এখনো আতলেতিকোই আছে। ২ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে উঠে এসেছে বার্সেলোনা। কিন্তু আগামীকাল সেভিয়াকে হারিয়ে দিলেই শীর্ষে উঠে যাবে রিয়াল। ৩৩ ম্যাচে ৭৪ পয়েন্ট পাওয়া রিয়াল যে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে আছে দুই দলের চেয়ে। নিজেদের বাকি সব ম্যাচে তিন দলই যদি জয় পায় তবে লা লিগা এবার রিয়ালই জিতবে।

বহুদিন পর দেখা দুই বন্ধুর-মেসি ও সুয়ারেজ।
ছবি: টুইটার

বার্সেলোনার বলার মতো প্রথম আক্রমণ দেখতে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। আতলেতিকো মাঝমাঠ ও রক্ষণ মিলে এতক্ষণ মেসিকে আটকে রেখেছিলেন সাফল্যের সঙ্গে। ৪০ মিনিটের ওই দৌড় আটকাতে পারলেন না কেউ। আতলেতি রক্ষণকে বোকা বানাতে ডামি এক দৌড় দিলেন ইলাইস মরিবা। আর ডান প্রান্ত দিয়ে ছুটে আসা মেসি মাদ্রিদের তিন রক্ষণসেনাকে স্তব্ধ করে দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়লেন ডি-বক্সে। দুই দিকে তবু দুজন খেলোয়াড় ছিল আতলেতিকোর। মেসি দেরি না করে শট নিলেন। সেটা জালে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে ইয়ান ওবলাকের গ্লাভসের সূক্ষ্মতম স্পর্শ নিয়ে বাইরে চলে গেল বল।

এর আগের ১০ মিনিটেই বার্সাকে তিনবার বাঁচিয়ে দিয়েছেন মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন। দুবার ইয়ানিক কারাসকোকে গোল বঞ্চিত করেছেন, আরেকবার লুইস সুয়ারেজকে। মেসির সেই সুযোগের দুই মিনিট পরই কারাসকো আরেকবার বার্সা–রক্ষণের পরীক্ষা নিলেন। বাঁ প্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়লেও বার্সা–রক্ষণ জমাট বেঁধে যাওয়ায় ঠিকভাবে শট নিতে পারেননি এই বেলজিয়ান। ৪৫ মিনিটে বার্সা–রক্ষণ একটি কর্নার ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসেছিল। ফাঁকায় বল পেয়েও ফিলিপে বলটা ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে মেরেছেন।

প্রথমার্ধের প্রথম ৩০ মিনিট দেখে অবশ্য বোঝার উপায় ছিল না, এমন জমজমাট কিছু অপেক্ষা করছে। প্রথম ২০ মিনিটে গোলমুখে বলার মতো কোনো আক্রমণ ছিল না বার্সার। গোলমুখে আতলেতিকোর দুটি শট থাকলেও সেগুলো গোল এনে দেওয়ার মতো ছিল না। এর মধ্যেই দুই দল দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হারিয়েছে। ৩ মিনিটে প্রথম আক্রমণের জন্ম দেওয়া টমাস লেমার ১৩ মিনিটেই মাঠ ছেড়েছেন চোট পেয়ে। ২৭ মিনিটের দিকে মাথায় আঘাত পাওয়া সের্হিও বুসকেতসকে ৩০ মিনিটে উঠিয়ে নিয়েছে বার্সেলোনা।

কারাসকো আজ বার্সেলোনাকে বেশ ভুগিয়েছেন।
ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে খেলার ছন্দ বদলাবে বলে মনে হয়েছিল। প্রথম মিনিটেই মেসির ফ্রি–কিক থেকে হেড করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ক্লেমঁ লংলে। কিন্তু ঠিকভাবে হেড করতে পারেননি এই ডিফেন্ডার। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, আতলেতিকোর আক্রমণের ধার বেড়েছে। ৬০ মিনিট পর্যন্ত আরও দুবার গোলের সুযোগ পেয়েছিল আতলেতিকো। কারাসকো ও আনহেল কোরেয়ার কারণে তটস্থ থাকতে হয়েছে বার্সাকে। এর মাঝে কারাসকোকে তো মাঝেমধ্যে অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল। মাঝমাঠে বুসকেতসের অভাব টের পাচ্ছিল বার্সা। ন্যু ক্যাম্পেও বল পায়ে বার্সার চেয়ে আতলেতিকোকে বেশি স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল।

৬২ মিনিটে প্রথমবারের মতো বার্সাকে বার্সার মতো কোনো আক্রমণ করতে দেখা গেল। প্রথমে দারুণ বিল্ডআপ থেকে বক্সের মধ্যে বল গেল মেসির কাছে। মেসির ব্যাকহিল থেকে বল পেয়েও গোল করতে পারেননি মরিবা। পরের মিনিটেই মেসির ক্রস থেকে হেড করে এগিয়ে দিতে পারতেন জেরার্ড পিকে। ৬৬ মিনিটে নিজের আদায় করে নেওয়া ফ্রি–কিক থেকে গোল আদায় করে ফেলছিলেন মেসি। কিন্তু আবারও ওবলাক বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।

এই হেড থেকে দেম্বেলে গোল পেলেই সমীকরণ বদলে যেত।
ছবি: রয়টার্স

৬৬ মিনিটে লেমারের বদলি না সাউল নিগেজকেও তুলে নেন দিয়েগো সিমিওনে। মাঠে নামেন আতলেতিকোর সবচেয়ে দামি ফুটবলার জোয়াও ফেলিক্স। ৬৮ মিনিটে মার্কোস ইয়োরন্তের সুবাদে দারুণ জায়গায় বল পেয়েও সুযোগ নষ্ট করেছেন সুয়ারেজ। ২ মিনিট পরই এর মূল্য চুকাতে হতো আতলেতিকোকে। আলবার ক্রস থেকে হেডে করেছিলেন রোনাল্ড আরাওহো। কিন্তু অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সে গোল। পরের মিনিটে ভয়ংকর গতিতে বক্সে ঢুকে পড়েন কারাসকো। কিন্তু বলটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে পিকেকে ফাউল করে বসেন কারাসকো।

পরের ১০ মিনিট বার্সার আক্রমণ আর আতলেতিকোর প্রতি–আক্রমণ দেখেই কাটাতে হয়েছে। দুই দলই গোলের সুযোগ পেয়েছে কিন্তু বক্সে ঢুকেই ছন্দ হারিয়েছে দুই দল। ৮৫ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ এসেছিল বার্সার সামনে। আলবার ক্রস ছোট বক্সের সামনে খুঁজে পেয়েছিল উসমান দেম্বেলেকে। কিন্তু ফাঁকা জায়গা থেকেও হেডটা পোস্টে রাখতে পারেননি দেম্বেলে। পরের মিনিটে ফেলিক্স ও কারাসকো মিলে প্লেটে বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন সুয়ারেজকে। কিন্তু সুয়ারেজ বলে পা-ই লাগাতে পারেননি।

৯০ মিনিটে বক্সের একটু বাইরে আবার ফ্রি-কিক আদায় করে নিলেন মেসি। এবার তাঁর ফ্রি–কিকটা চেষ্টা করলেও হয়তো আটকাতে পারতেন না ওবলাক। কিন্তু মেসির ফ্রি–কিক পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে চলে গেল।