রোনালদোকে কেনাই ভুল ছিল জুভেন্টাসের

জুভেন্টাসে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন অনেকের কাছেই খলনায়ক।ছবি: রয়টার্স

২০১৪–১৫ ও ২০১৬–১৭; মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগের দুটি ফাইনাল খেলেছে জুভেন্টাস। প্রথম ফাইনালটি বার্সেলোনা আর দ্বিতীয়টি রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে যায় তারা। ১৯৯৫–৯৬ মৌসুমের পর আবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিততে মরিয়া জুভেন্টাস এরপর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দিকে হাত বাড়ায়। তাঁকে পেয়েও যায় তুরিনের ক্লাবটি। কিন্তু ২০১৮ সালে রোনালদো জুভেন্টাসে নাম লেখানোর পরও চ্যাম্পিয়নস লিগে সেই ব্যর্থতার গল্পই ইতালির ক্লাবটির।

রোনালদো তুরিনে যাওয়ার পর তো কোয়ার্টার ফাইনালের সীমানাই পেরোতে পারেনি জুভেন্টাস। ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০—এ দুই মৌসুম তবু শেষ আটে খেলেছে তারা। এবার তো শেষ ষোলো থেকেই ছিটকে গেল। চ্যাম্পিয়নস লিগে ধারাবাহিক এই ব্যর্থতার পর ক্লাবটির সাবেক সভাপতি জিওভান্নি কোবলির মনে হচ্ছে, রোনালদোকে কেনাটাই ভুল সিদ্ধান্ত ছিল জুভদের!

কদিন আগেও যাঁকে চিরসবুজ বলা হচ্ছিল, সেই রোনালদোকেই জুভেন্টাসে অনেকে এখন বলছেন ‘বুড়ো’!
ছবি: রয়টার্স

জুভেন্টাসে নাম লেখানোর পর টানা দুই মৌসুমে সিরি ‘আ’ জিতেছেন রোনালদো। ইতালিয়ান সুপার কাপের শিরোপা জিতেছেন দুটি। জুভেন্টাসে নাম লেখানোর পর থেকে একের পর এক গোল করে যাচ্ছেন পর্তুগালের ফরোয়ার্ড। এই তো কদিন আগেও ৩৬ বছর বয়সী রোনালদোকে ‘চিরসবুজ’ ফুটবলার বলে উল্লেখ করেছিল ইতালির সংবাদমাধ্যম। জুভেন্টাসের সমর্থকদের কাছেও তাঁর নাম হয়ে উঠেছিল গোলমেশিন। সেই রোনালদোই কিনা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটিতে নিষ্প্রভ থাকার পর হয়ে গেলেন ‘বুড়ো’। ম্যাচটিতে একটি ভুল করে হয়ে গেলেন খলনায়ক!

অথচ এই রোনালদোকে দলে ভেড়াতে কয়েক বছর অপেক্ষায় ছিল জুভেন্টাস। ক্লাবটির সভাপতি আন্দ্রেয়া আগনেল্লি সেই সুযোগ অবশেষে পেয়ে যান ২০১৮ সালে। সে বছর রোনালদোও রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে মোটা অঙ্কের বেতনে রোনালদোকে দলে ভেড়ায় জুভেন্টাস। ক্লাব কর্তাদের মাথায় সে সময় নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগ–বীরত্বের বিষয়ই।

জুভেন্টাসে রোনালদোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠে গেছে
প্রশ্ন। ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে একটি আর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন রোনালদো। ইউনাইটেডের একটি ও রিয়ালের ওই চার শিরোপা জেতায় বড় ভূমিকা ছিল রোনালদোরই। কিন্তু জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে সে রকম দ্যুতি আর ছড়াতে পারেননি পর্তুগাল জাতীয় দলের অধিনায়ক। হয়তো সত্যিই ‘বুড়ো’ হয়ে যাচ্ছেন রোনালদো। কোবলি রেডিও পুন্তো নুওভোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও এমন কথাই বলেছেন, ‘রোনালদোকে কেনাটা ভুল ছিল কি না? আমি তো বলব, অবশ্যই ভুল ছিল।’

রোনালদোকে কেনাটা যে ভুল ছিল, সেটা তাঁকে কেনার পরই আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন কোবলি। এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন জুভেন্টাসের সাবেক সভাপতি, ‘আমি কথাটা সেই প্রথম দিন থেকেই বলে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে সে অসাধারণ এক চ্যাম্পিয়ন। আমি তার প্রশংসাও করি এর জন্য। কিন্তু সে একটু বেশিই ব্যয়বহুল। প্রতিটি গোলের দাম প্রায় ১০ লাখ ইউরো, একটু চড়া দামই!’

রোনালদোকে নিয়ে তাহলে এখন জুভেন্টাসের কী করা উচিত? এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছিল কোবলির কাছে। এই সিদ্ধান্তের ভার তিনি জুভেন্টাসের বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে কোবলি দায়িত্বে থাকলে ভুল শোধরাতে রোনালদোকে বিক্রি করে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিতেন। রেডিও পুন্তো নুওভোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘রোনালদোকে বিক্রি করবে কী করবে না, সেটা জুভেন্টাসের ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু সে একটু বেশিই ব্যয়বহুল!’

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে কেনাটা ভুল ছিল বলে মনে করেন জুভেন্টাসের সাবেক সভাপতি জিওভান্নি কোবলি।
ছবি: রয়টার্স

সিরি ‘আ’তে শিরোপা ধরে রাখার আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছে জুভেন্টাসের। এই মুহূর্তে ২৫ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে আন্দ্রেয়া পিরলোর দল। শীর্ষে থাকা ইন্টার মিলানের চেয়ে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে তারা। ৬২ পয়েন্ট পেতে অবশ্য একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে ইন্টার মিলান। ২৬ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে এসি মিলান। সিরি ‘আ’র শিরোপার আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এর ওপর চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকেই ছিটকে যাওয়া। সব মিলিয়ে পিরলোর কোচের আসনটাও একটু যেন নড়বড়ে হয়ে গেছে জুভেন্টাসে।

হঠাৎ করেই শীর্ষ পর্যায়ে একেবারেই অনভিজ্ঞ পিরলোকে জুভেন্টাসের কোচের আসনে বসিয়ে দেওয়া নিয়ে কী মনে করেন কোবলি? তিনি অবশ্য পিরলোর সমালোচনা করতে চাননি, ‘আগনেল্লি এ ক্ষেত্রে একটা ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু আমি পিরলোর সমালোচনা করব না। ফেরেরাকে (জুভেন্টাসের সাবেক কোচ) নিয়ে একই রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার।’ তবে জুভেন্টাসের বোর্ডে পরিবর্তন চান কোবলি, ‘জুভেন্টাসের পুনর্গঠন দরকার। নেদভেদ অসাধারণ এক খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু তাঁর জুভেন্টাসের সহসভাপতি হওয়ার সামর্থ্য নেই। নিজের ভূমিকা নিয়ে তাঁকে নতুন করে ভাবতে হবে।’