‘রোনালদো নিজেকে দেবতা মনে করেন’
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো অহংকারী। নিজের দক্ষতা নিয়ে গর্ব করেন, নিজেকেই সর্বকালের সেরা দাবি করতে বাধে না তাঁর। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের এ ব্যাপারের ভালো দিক আছে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটাই তাঁকে এত দূর এনেছে। নিজের কাছ থেকে সব সময় বাড়তি কিছু দাবি করতে পারাটাই প্রায় দেড় যুগ ধরে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে টিকিয়ে রেখেছে তাঁকে। এ জন্য ম্যাচে ভালো করতে না পারলে সেটা প্রকাশ করতেও বাধে না তাঁর।
সপ্তাহের শুরুতে সেটা করে অবশ্য বিপদে পড়েছেন রোনালদো। এভারটনের মাঠে খেলতে গিয়ে হেরে বসেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অবনমন অঞ্চলের ঠিক ওপরে থাকা দলের কাছে হারের পরই ঘটেছে অঘটন। মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষের এক সমর্থকের হাতের মুঠোফোন ভেঙে ফেলেছেন। রোনালদোর এমন আচরণের সমালোচনা করছেন সবাই। হোসে এনরিক তো রীতিমতো হুল ফুটিয়েছেন। সাবেক লিভারপুল ডিফেন্ডারের দাবি, রোনালদো নাকি নিজেকে দেবতা মনে করেন!
এভারটনের কাছে ১-০ গোলে হারের পর মাঠ ছাড়ার সময় আবেগটা ধরে রাখতে পারেননি পর্তুগিজ তারকা। টানেলে ঢোকার পথে গ্যালারি থেকে হাত বাড়ানো এক এভারটন-সমর্থকের মুঠোফোন টেনে নিয়ে আছাড় দিয়েছেন মাটিতে! মুহূর্তেই এর ভিডিও ছড়িয়ে গেছে চারদিকে। শুরু হয়ে গেছে সমালোচনা। রোনালদো বুঝতে পেরেছেন, বড় ভুল করে ফেলেছেন এমন কাণ্ড ঘটিয়ে। তাই তো ক্ষমা চেয়েছেন ইউনাইটেডের পর্তুগিজ উইঙ্গার।
ইনস্টাগ্রামে নিজের ভুল স্বীকার করে ওই সমর্থককে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলেন, ‘আমরা (ইউনাইটেড) যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, এ রকম কঠিন সময়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ ব্যাপার নয়। এরপরও অন্যদের শ্রদ্ধা দেখাতে হবে আমাদের। শান্ত থাকতে হবে এবং ফুটবলপ্রেমী তরুণদের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে হবে। এভাবে রেগে যাওয়ার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ফেয়ার-প্লে আর খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার অংশ হিসেবে ওই সমর্থককে আমি ওল্ড ট্রাফোর্ডে একটি ম্যাচ দেখার জন্য নিমন্ত্রণও জানাতে চাই।’
কিন্তু তাঁর এমন দুঃখ প্রকাশে খুব কম মানুষেরই মন গলেছে। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত লিভারপুলে খেলা এনরিক তাঁদের একজন। স্প্যানিশ এই সাবেক লেফটব্যাক টুইটারে নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন এভাবে, ‘আমি বরাবরই এটা বলেছি। তাঁকে একদম পছন্দ করি না। তিনি নিজেকে দেবতা মনে করেন এবং ভেবে নেন, যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারবেন। এতে তিনি যে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, তা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে তাঁকে আমার পছন্দ নয়।’
শুধু সমালোচনাতেই আটকে থাকছে না রোনালদোর সমস্যা। রোনালদো এভারটনের যে সমর্থকের ফোন ফেলে দিয়েছিলেন, সেই ভক্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক। জীবনে প্রথমবার মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া জেক হার্ডিং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর। ১৪ বছর বয়সী হার্ডিং মায়ের সঙ্গে গুডিসন পার্কে গিয়েছিল গ্যালারি থেকে প্রথমবারের মতো নিজের প্রিয় ক্লাবের খেলা দেখতে।
প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা যে টানেল দিয়ে ড্রেসিংরুমে যান, তার পাশেই বসেছিলেন মা ও ছেলে। হার্ডিংয়ের মা সারা কেলি রোনালদোর এমন আচরণের কোনো কারণ খুঁজে পাননি, ‘ম্যাচ শেষে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন। আমরা পার্ক এন্ডে বসেছিলাম। খেলোয়াড়েরা টানেল দিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিও করছিল আমার ছেলে। ইউনাইটেডের সব খেলোয়াড়কেই ভিডিও করেছে। রোনালদো মোজাটা নামিয়ে নেওয়ার সময় সে ফোন নিচু করে। কারণ, তাঁর পা দিয়ে রক্ত পড়ছিল। ফোন নিচু করে ভিডিও করা ছাড়া সে কোনো কথা বলেনি।’
এ ঘটনায় ফোন একদম ভেঙে গেছে হার্ডিংয়ের। হাতে সে ব্যথা পেয়েছে, নীলচে কালশিটে দাগ পড়েছে। রোনালদো একদিকে ক্ষমা চেয়ে ইউনাইটেডের ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ওদিকে প্রথমবার খেলা দেখতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতায় আর কখনো মাঠে না যাওয়ার চিন্তা খেলা করছে হার্ডিংয়ের মনে। সারা বলেছেন, ‘আমি কাঁদছিলাম। ছেলেও মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। বাসায় আসার আগপর্যন্ত ঘটনাটা হজম করতে তার কষ্ট হয়েছে। এতটাই মন খারাপ যে আবারও ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাওয়ার ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। এটা ছিল তার প্রথম ফুটবল ম্যাচ দেখার দিন, আর সেদিনই এমন কিছু ঘটল। অথচ শেষ কয়েক সেকেন্ড বাদে দিনটা আমাদের দারুণ কেটেছে।’
ব্যাপারটা যে শুধু একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দিয়ে মিটিয়ে ফেলতে পারবেন না রোনালদো, সেটা বোঝা গেছে সারার পরের কথায়, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটা ছেলে একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের লাঞ্ছনার শিকার—আমি বিষয়টিকে এভাবে দেখি।’ মার্সিসাইড পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।