শিষ্যদের আনচেলত্তির সতর্কবাণী—মাত্র তো প্রথমার্ধ গেল
শঙ্কায় কাঁপছে চেলসি। স্টামফোর্ড ব্রিজে এসে রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গেছে তাদের, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে না জানি কী পরিস্থিতি হয়! চেলসি কোচ যখন এমন শঙ্কার কথা বলছেন, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি বাজাচ্ছেন সতর্কঘণ্টা!
করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে অসাধারণ একটি রাত কেটেছে রিয়ালের, যে রাতকে বেনজেমা নিজে বলেছেন, ‘জাদুকরি’। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসিকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার আনন্দে ভেসে যেতে চান না আনচেলত্তি। নিজের শিষ্যদের পা মাটিতেই রাখার পরামর্শ দিয়েছেন রিয়ালের ইতালিয়ান কোচ।
ফুটবলে শেষ কথা বলে কিছু নেই—এটা এর আগে অনেকবারই দেখেছে বিশ্ব। প্রথম লেগে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় লেগে বড় ব্যবধানে হেরে বাদ পড়ার উদাহরণ এর আগেও তৈরি হয়েছে। এবারই তো শেষ ষোলোতে পিএসজির মাঠে হেরে আসা রিয়াল নিজেদের মাঠে ৩-১ গোলে জিতে উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
২০১৬-১৭ মৌসুমে বার্সেলোনা এর চেয়েও অসাধারণ ফিরে আসার গল্প লিখেছিল। সেবার শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলে হেরেছিল বার্সা। ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে নেইমারের অসাধারণ নৈপুণ্যে পিএসজিকে বার্সেলোনা উড়িয়ে দিয়েছিল ৬-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলের অগ্রগামিতায় পরের রাউন্ডে যায় বার্সা। সেই ম্যাচে নেইমার শেষ ৭ মিনিটে দুটি গোল করার পাশাপাশি একটি গোলে সহায়তা করে বার্সার বড় জয়ে রেখেছিলেন দারুণ ভূমিকা।
ফুটবলে এক ম্যাচেই পিছিয়ে পড়ে এমন ফিরে আসার গল্প আছে অনেক। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ফেরা হয়তো বিশ্বকাপে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে অসাধারণ সেই ফেরার গল্প উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে রচনা করেছিল পর্তুগাল। ইংল্যান্ডের গুডিসন পার্কে ২৫ মিনিটের মধ্যেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় উত্তর কোরিয়া। কিন্তু ইউসেবিওর চার গোলে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫-৩ গোলের অবিশ্বাস্য এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পর্তুগিজরা।
১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছিল ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক ফিরে আসার গল্প লিখে। মারিও বাসলারের ৬ মিনিটের গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। ৯০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল ইউনাইটেড। বায়ার্নের সমর্থকেরা তখন শিরোপা জয়ের উদ্যাপনের আয়োজন সাজাচ্ছিল। কিন্তু যোগ করা সময়ের ২ মিনিটের মধ্যে টেডি শেরিংহাম ও উলে গুনার সুলশারের দুই গোলে শিরোপা জেতে ইউনাইটেড।
ফুটবলে এসব ফিরে আসার গল্প ভালো করেই জানা আছে আনচেলত্তির। এ কারণেই কিনা তিনি শিষ্যদের মনে করিয়ে দিলেন দ্বিতীয় লেগের কথা, ‘আমরা (প্রথম লেগে) ভালো খেলেছি। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভালোভাবে নিতে পেরেছি, বিল্ডআপগুলো ভালো ছিল এবং ভয়ংকর প্রতি-আক্রমণ করেছি। আমাদের জন্য ভালো একটি রাত কেটেছে। কিন্তু এটা কেবল এই রাউন্ডের (কোয়ার্টার ফাইনাল) প্রথমার্ধ।’
দ্বিতীয় লেগের কথা মনে করিয়ে দিলেও স্টামফোর্ড ব্রিজে প্রথম লেগে দলের খেলায় খুব খুশি আনচেলত্তি, ‘রক্ষণে আমরা দারুণ গোছানো ছিলাম। ফরোয়ার্ডে বেনজেমার কাছ থেকে ভালো খেলা উপহার পেয়েছি। সব মিলিয়ে ভালো একটি ম্যাচ খেলেছি।’ এরপর অবশ্য আনচেলত্তি যোগ করেন, ‘গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা দলটির (চেলসি) প্রতি সমীহ আছে আমাদের।’