সার্বিয়ার বিপক্ষে না হওয়া সেই গোলই কপাল পোড়াল রোনালদোদের
যোগ করা সময়ের খেলা চলছে তখন। পর্তুগাল ও সার্বিয়া ততক্ষণে পয়েন্ট ভাগাভাগি মেনে নেওয়ার পথে। ২-২ গোলে ম্যাচ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় সবাই। কিন্তু রোনালদো মানবেন কেন? সত্যিকারের নেতার মতোই দলকে জেতাতে গোল এনে দেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। সার্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সে ম্যাচে দলকে জেতানোর আনন্দে উদ্যাপনও শুরু করেন ৩৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। এমন সময় কোত্থেকে ছুটে এলেন সার্বিয়ার সেন্টারব্যাক আলেক্সান্দর মিত্রোভিচ। বল গোললাইন পেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে পা বাড়িয়ে দিলেন!
প্রথম দেখায় মনে হয়েছে, গোল হওয়া আটকাতে পারেননি মিত্রোভিচ। রিপ্লে দেখেও তেমনটা মনে হয়েছে। কিন্তু গোললাইনে থাকা সহকারী রেফারির তেমনটা মনে হয়নি। ফলে গোলের ঘোষণা তিনি দেননি। মূল রেফারিও সে সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেন। রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোনালদো।
কিন্তু রেফারির তাতে বয়েই গেছে! বরং সিদ্ধান্ত না মেনে উচ্চবাচ্য করায় রোনালদোকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। মেজাজ হারিয়ে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ছুড়ে ফেলে তখনই মাঠ ছেড়ে চলে যান রোনালদো। অথচ তখনো ম্যাচ শেষ হয়নি!
রেফারির সিদ্ধান্ত তাঁর দেশকে বঞ্চিত করায় সেদিন মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি রোনালদো। রেফারি নিজেও সে ম্যাচের পর রোনালদোদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। কয়েক মাস পর এখন দেখা যাচ্ছে, রেফারির সেই ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই বিশ্বকাপে না যাওয়ার শঙ্কায় কাঁপছে পর্তুগাল!
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপে প্রথম হতে পারেনি পর্তুগাল, দ্বিতীয় হয়েছে। ফলে প্লে-অফ খেলতে হচ্ছে রোনালদোদের। একই যন্ত্রণায় পড়েছে ইউরোজয়ী ইতালিও। নিজেদের বিশ্বকাপ–যাত্রাটা তাই অন্তত মার্চ পর্যন্ত ঝুলে গেছে তাদের।
প্লে-অফের এক দিকেই পড়ায় এই দুই দলের যেকোনো এক দলেরই শুধু সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপে যাওয়ার। অথচ ভেবে দেখুন, রেফারি সেদিন ওই ভুল না করলে পর্তুগালও গ্রুপে প্রথম হয়, প্লে-অফের যন্ত্রণাতেও পড়তে হয় না তাদের!
গোল বাতিল নিয়ে এমন বিতর্কের পেছনে চাইলে উয়েফার দায় খুঁজে নেওয়া যায়। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচগুলোয় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিং (ভিএআর) প্রযুক্তির ব্যবহার করেনি উয়েফা। শুধু তা–ই নয়, নিখুঁত গোললাইন প্রযুক্তিও রাখেনি। আর সে কারণেই সেদিন কপাল পুড়েছিল রোনালদোদের। এই প্রযুক্তিতে বল গোললাইন পেরোলে সঙ্গে সঙ্গে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যেই রেফারির হাতে থাকা ঘড়ির মতো যন্ত্রে ‘গোল’ লেখা ওঠে। সেদিন প্রযুক্তিটা থাকলেই আর এত বিতর্কের জন্ম হয় না।
আর বিতর্কের জন্ম না হলে পর্তুগাল বনাম ইতালি নয়; বরং সার্বিয়া বনাম ইতালিই লড়ত বিশ্বকাপে যাওয়ার জন্য।