আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে (আফকন) ক্যামেরুন যথেষ্ট সফল দল। পাঁচ-পাঁচটা শিরোপা সে কথাই বলে, যার সর্বশেষটা এসেছিল ২০১৭ সালে। মোহাম্মদ সালাহদের মিসরকে হারিয়ে সেবার শিরোপা জেতা ক্যামেরুনের হয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটা করে দলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন স্ট্রাইকার ভিনসেন্ট আবুবকর। পোর্তো-অধ্যায় শেষ করে ক্লাব–জীবনে তখন খেলছেন বেসিকতাসের হয়ে, মোটামুটি গোল করার অভ্যাস থাকার কারণে বড় বড় দলের নজরেই ছিলেন।


শেষমেশ ওই রকম বড় দলে আবুবকরের যাওয়া হয়নি। এখন খেলছেন সৌদি আরবে, আল নাসরের হয়ে। ওদিকে ২০১৭ সালের সেই ফাইনালে আবুবকরের কাছে হারা সালাহ লিভারপুলের হয়ে মাঠ কাঁপিয়ে এখন বিশ্বেরই অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।

তবে দুজনের আফকন-ভাগ্যে তেমন হেরফের হয়নি। মহাদেশসেরা হওয়ার টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের হয়ে সালাহকে বেশ ভালোভাবেই পেছনে ফেলছেন আবুবকর।
এবারের আফকনে যেখানে গোল করতে গিয়ে সালাহ-মাহরেজরা মাথা কুটে মরছেন, আবুবকর সেখানে ২ ম্যাচ খেলেই গোল করেছেন ৪টি। বুরকিনা ফাসোর পর গতকাল ইথিওপিয়ার বিপক্ষেও জোড়া গোল করেছেন ২৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার, তা-ও আবার কালকের দুই গোল এসেছে তিন মিনিটের মধ্যে।

আবুবকরের দুই গোলের সঙ্গে লিওঁর উইঙ্গার কার্ল তোরো-একাম্বির দুই গোল মিলিয়ে ইথিওপিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে ক্যামেরুন। পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার মহাদেশসেরা হওয়ার লক্ষ্যে দলকে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছেন ক্যামেরুনের অধিনায়ক আবুবকর।

ক্যামেরুন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা স্যামুয়েল ইতো
ছবি : টুইটার

বলা বাহুল্য, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই। দুটি ম্যাচে ম্যাচসেরাও হয়েছেন। গোলমুখে আবুবকরের দুর্দান্ত ফর্ম মনে করিয়ে দিচ্ছে ক্যামেরুন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা স্যামুয়েল ইতোকে। না, ১৮ গোল করে আফকনের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসে থাকা ইতোকে এখনই টপকে যাননি আবুবকর।

সেখানে যেতে আরও ১৩টা গোল করতে হবে তাঁকে। কিন্তু যে গতিতে এগোচ্ছেন, তাতে ইতোকে যে স্পর্শ করতে পারবেন না, সেটাও যে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না! আফকনে এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচে গোল করলেন আবুবকর। দেশটার ইতিহাসে এর আগে যে কৃতিত্ব শুধু ইতোরই ছিল, যা তিনি ২০০৮ সালে করে দেখিয়েছিলেন।

বুরকিনা ফাসোর পর গতকাল ইথিওপিয়ার বিপক্ষেও জোড়া গোল করেছেন ২৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার
ছবি : টুইটার

২০০০ সালের আফকনের পর টুর্নামেন্টের কোনো আসরে কেউ পাঁচটার বেশি গোল করতে পারেননি। সর্বশেষ এ টুর্নামেন্টে পাঁচটার বেশি গোল করে দেখিয়েছিলেন মিসরের হোসাম হাসান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বেনি ম্যাকার্থি, তা–ও সেই ১৯৯৮ সালের কথা। দুই ম্যাচে এর মধ্যেই চার গোল করে ফেলা আবুবকরের হাত ধরেই হয়তো ভাঙছে সেই রেকর্ড!


তবে আবুবকরের হাত ধরে এবারের টুর্নামেন্টে অন্য রকম একটা ‘ধারা’ ধরে রেখেছে ক্যামেরুন। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ১৪টি ম্যাচ হয়েছে, তার ১০টিরই ফল ছিল ১-০। দশমটি এসেছে কাল, ক্যামেরুনের গ্রুপেরই অন্য দুই দলের ম্যাচে বুরকিনা ফাসো ১-০ গোলে হারিয়েছে কেপ ভার্দেকে। তা এই ১০টি ‘১-০’-র বাইরে দুটি ম্যাচ শেষ হয়েছে গোলশূন্য। অর্থাৎ গোলখরায় ভুগতে থাকা নেশনস কাপে এখন পর্যন্ত শুধু দুটি ম্যাচই একের বেশি গোল দেখেছে, দুটিই স্বাগতিক ক্যামেরুনের সৌজন্যে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বুরকিনা ফাসোকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ক্যামেরুন।