হাসপাতালেই আছেন, কথা বলছেন এরিকসেন
গ্যালারিতে ১৬ হাজারের বেশি দর্শক। তবু কোনো টুঁ শব্দ নেই। ফুটবল মাঠে এমন কিছু কল্পনা করাও কঠিন। গতকাল রাতে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড ম্যাচে এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল সবাইকে। ম্যাচের ৪১ মিনিটে আচমকা মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন।
তড়িঘড়ি মাঠে থাকা চিকিৎসক দল জরুরি সেবা দিয়ে এরিকসেনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল জেনে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর ম্যাচ খেলতে নামে দুই দল। ম্যাচটি ডেনমার্ক ১-০ গোলে হেরে গেলেও গতকাল সে ফল মুখ্য হয়ে ওঠেনি। এরিকসেনের শারীরিক অবস্থা কেমন, সেটাই যে ছিল মূল আলোচনা।
ডেনমার্কের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আজ জানিয়েছে, এই মিডফিল্ডারের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করার জন্য তাঁকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
গতকাল ফুটবল–বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া সে ঘটনায় মিনিট পনেরো ভয়ংকর আতঙ্ক ঘিরে ধরেছিল সবাইকে। বেশ কিছুক্ষণ সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। কিন্তু জরুরি চিকিৎসকের দল বুকে চাপ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার (সিপিআর) চেষ্টা করার দৃশ্য টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর সবাই ঘাবড়ে যান। পরে স্ট্রেচারে করে এরিকসেনকে মাঠ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
ক্ষণিক পরই এরিকসেনের ব্যাপারে ইতিবাচক খবর আসে। জানা যায়, মাঠ ছাড়ার সময়টায় জ্ঞান ছিল ইন্টার মিলানের এই ফুটবলারের। মাঠ ছাড়া ডেনমার্কের ফুটবলাররা এরিকসেনের সঙ্গে কথা বলেই খেলতে নেমেছিলেন পরে। আজ ড্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন এরিকসেনের ব্যাপারে সুখবরই দিয়েছে। টুইটারে লিখেছে, ‘আজ সকালে আমরা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের সঙ্গে কথা বলেছি। সতীর্থদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁর অবস্থা ভালো এবং আরও কিছু পরীক্ষা করার জন্য তাঁকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।’
২৯ বছর বয়সী এরিকসেন গতকাল ফিনল্যান্ডের ডি-বক্সের কাছে একটি থ্রো ইন গ্রহণ করার সময় মাঠে পড়ে যান। অধিনায়ক সিমোন কিয়ার প্রাথমিকভাবে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ যেন বন্ধ না হয়, সেটা নিশ্চিত করেছেন। বাকি সতীর্থরা এরিকসেনের চারপাশে দাঁড়িয়ে মানবদেয়াল সৃষ্টি করেছেন, যেন চিকিৎসক দল নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন। দুই দলের সমর্থকেরা এ সময় তাঁদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা জানিয়েছেন। ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড—দুই সমর্থক দলই এ সময় এরিকসেনের নাম ধরে স্লোগান দিয়েছেন।
স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় এরিকসেনের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আড়াল সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেটাও করা হয়েছিল ফিনল্যান্ডের সমর্থকদের দেওয়া তাঁদের দেশের দুটি পতাকা দিয়ে। ড্যানিশ ফুটবলের পক্ষ থেকে এই ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে, ‘জাতীয় দলের সব সদস্য ও স্টাফকে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং গতকালের ঘটনার পর থেকে একে অপরকে এভাবেই সহযোগিতা করা হবে। সমর্থক, খেলোয়াড়, ডেনমার্ক ও ইংল্যান্ডের রাজপরিবার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ক্লাবের পক্ষ থেকে যাঁরা সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমরা।’