১১ মাস পর কুতিনিওর গোল, স্বস্তির জয় বার্সার
ফর্মে থাকা ফিলিপ কুতিনিও যে কতটা ভয়ংকর হতে পারেন, সবাই কি তাহলে ভুলেই গেল?
ভুলে গেলেও দোষ দেওয়া যায় না। ২০১৮ সালে লিভারপুল থেকে আকাশচুম্বী দামে বার্সেলোনায় নাম লিখিয়েই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। চোট আর ফর্মহীনতায় মূল একাদশে আর দেখা যায় না, ঠাঁই হয়েছে বেঞ্চে। নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করার জন্য এখন প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় মেম্ফিস ডিপাই, আনসু ফাতি, গাভি, ওসমানে দেম্বেলে ও পেদ্রিদের সঙ্গে। ধারহীন কুতিনিওকে যে আজকাল কেউ তেমন গুরুত্ব দেয় না, সেটা বোঝা গেল গতকাল। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বার্সেলোনার ৩-১ গোলে জেতা ম্যাচে।
বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন কুতিনিও, সামনে শুধু ভ্যালেন্সিয়ার গোলকিপার ইয়াসপার চিলেসেন। ভ্যালেন্সিয়ার তিন মিডফিল্ডার হুগো গিলামোন, ইউনুস মুসা, মার্কোস দে সোসা ও ডিফেন্ডার মোক্তার দিয়াখাবি কেউ পাত্তাই দিলেন না তাঁকে, বিন্দুমাত্রও মার্ক করার প্রয়োজন বোধ করলেন না। ডান দিক দিয়ে রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্তের মাপা পাসটা তাই কুতিনিওকে ফাঁকাতেই খুঁজে পেল।
বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল করার জন্য এন্তার সময় পেলেন এই ব্রাজিলিয়ান। ১১ মাস পর পাওয়া কুতিনিওর এই গোলে বার্সেলোনাও নিশ্চিত করল স্বস্তির এক জয়। ফর্মে থাকা দুরন্ত কুতিনিওকে এভাবে মার্ক না করে রাখার সাহস কেউ দেখাতে পারত?
কুতিনিওর গোলটাই ভ্যালেন্সিয়ার কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে কাজ করেছে। এর আগে আনসু ফাতি ও মেম্ফিস ডিপাই গোল করে বার্সাকে এগিয়ে রাখার কাজটা করেছিলেন। শুরুতে গোল করে অবশ্য এগিয়ে গিয়েছিল ভ্যালেন্সিয়াই।
পাঁচ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার এক কর্নার নিজেদের এলাকা থেকে ঠিকঠাক বিপদমুক্ত করতে পারেনি বার্সা। ভ্যালেন্সিয়ার অধিনায়ক ও লেফটব্যাক হোসে লুইস গায়ার দূরপাল্লার এক শটে পরাস্ত হন বার্সার বিশ্বস্ত গোলকিপার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। এই হোসে গায়াকে দলে আনার ব্যাপারে বহু বছর ধরেই বার্সা আগ্রহী। সম্ভাব্য আগামী দলের কাছে নিজের ‘অডিশন’টা বোধ হয় এভাবেই দিয়ে রাখলেন গায়া!
বেশিক্ষণ পিছিয়ে থাকতে হয়নি বার্সাকে। ১৩ মিনিটেই দলকে সমতায় ফেরান বার্সার নতুন দশ নম্বর—আনসু ফাতি। বাঁ প্রান্ত থেকে বল নিয়ে এসে ডিপাইয়ের সঙ্গে দুর্দান্ত বোঝাপড়ায় ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে ডান পায়ের শটে দলকে সমতায় ফেরান ফাতি। ৩৯ মিনিটে আরেকটা দুর্দান্ত আক্রমণ থেকে প্রায় এগিয়েই যাচ্ছিল বার্সেলোনা। ঠিক এ মুহূর্তেই ভ্যালেন্সিয়ার নায়ক থেকে খলনায়ক হয়ে যান গায়া। ফাতিকে অবৈধভাবে ফাউল করে বার্সাকে উপহার দেন একটি পেনাল্টি। সেখান থেকে গোল করে দ্বিতীয়ার্ধের কিছুক্ষণ আগেই বার্সাকে এগিয়ে দেন ডিপাই।
তবে এই পেনাল্টি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পেছন থেকে করা ট্যাকলের কারণে গায়া বলের স্পর্শ পেলে কীভাবে পেনাল্টি হয়, এটা নিয়েও কথা উঠেছে। তবে পরে দেখা গেছে, গায়া বলের স্পর্শ পেলেও তাঁর কারণে শট নিতে পারেননি ফাতি। যে কারণে রেফারি হেসুস গিল মানজানো বাজিয়েছেন পেনাল্টির বাঁশি। এই দুই গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে কুতিনিওর ওই গোল তো নিশ্চিতই করে ফেলে বার্সার জয়।
৪-৩-৩ ছকে এদিন রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্তকে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলিয়েছেন কোচ রোনাল্ড কোমান। এই রসায়নটা বেশ মনে ধরেছে এই ডাচ কোচের, ‘দেস্ত খুব ভালোই জানে কীভাবে উইঙ্গার হিসেবে খেলতে হয়। আগেও এই পজিশনে খেলেছে ও। আজকেও সে এই পজিশনে বেশ ভালো খেলেছে। আমার মনে হয় সে অনেক ভালো খেলেছে আজ।’
কুতিনিও যে একদিন না একদিন নিজের ফর্ম খুঁজে পাবেন, এ নিয়ে আগে থেকেই আস্থা ছিল কোমানের, ‘কুতিনিও ফর্মে থাকলে আমরা আরও ভালোভাবে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ও এমন একজন খেলোয়াড় যে জানে, কীভাবে গোল করতে হয়। প্রথম দিন থেকেই আমি ওর ওপর বিশ্বাস রেখেছি। ধীরে ধীরে ও আরও শক্তিশালী হচ্ছে, ফর্মে ফিরছে।’