৩৮২ কোটিতে ‘নেইমার’কে কিনছে লিভারপুল
গত জুন-জুলাইয়ে হয়ে যাওয়া কোপা আমেরিকাতে নিজেকে বিশ্বমঞ্চে পরিচিতি করেছেন। ৪ গোল নিয়ে লিওনেল মেসির পাশাপাশি টুর্নামেন্টের যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা তো ছিলেনই, কলম্বিয়ার আক্রমণে গতি, বল পায়ে কারিকুরি আর প্রতিপক্ষকে ঘোল খাওয়ানোর ক্ষমতায়ও মুগ্ধ করেছেন। এমনি এমনিই তো লুইস দিয়াজকে নিয়ে কোপা আমেরিকার পর থেকে এত মাতামাতি নয়!
২৫ বছর বয়সী কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ডকে পেতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল ইংল্যান্ডের তিন ক্লাব লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম। আন্তোনিও কন্তের টটেনহাম তো গত কিছুদিনে অনেক বড় অঙ্কের প্রস্তাব নিয়েও হাজির হয়েছিল। কিন্তু লিভারপুলেই খেলতে বেশি আগ্রহী ছিলেন দিয়াজ। ইউরোপের প্রায় সংবাদমাধ্যম প্রায় নিশ্চিত করে জানাচ্ছে, দিয়াজের ক্লাব পোর্তো শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে।
তাঁর জন্য বড় অঙ্কের অর্থই খরচ হচ্ছে লিভারপুলের। ফুটবলে দলবদলবিষয়ক খবরে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো টুইটে জানিয়েছেন, আপাতত ৪ কোটি ইউরো পোর্তোকে দেবে লিভারপুল। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮২ কোটি টাকার বেশি।
তবে এর সঙ্গে ‘শর্তসাপেক্ষ বোনাস’ থাকছে আরও ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। রোমানো জানাচ্ছে, এই আড়াই কোটির মধ্যে ২ কোটি ইউরো বোনাসের শর্ত বেশ সহজই।
কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবলে যেখানে কিলিয়ান এমবাপ্পে, আর্লিং হরলান্ডদের নিয়ে এত মাতামাতি, সেখানে অনেকটাই প্রচারের আড়ালে থাকা এক কলম্বিয়ানের জন্য এত অর্থ কেন খরচ করছে লিভারপুল?
সেটি কিছুটা বোঝা যায় তাঁকে পেতে ইউনাইটেড, টটেনহামের মতো ক্লাবের আগ্রহ দেখে। তাঁর প্রচারের আড়ালে থাকার পেছনে পর্তুগিজ লিগে পোর্তোর হয়ে খেলাও একটা কারণ। আর যা-ই হোক, পর্তুগিজ লিগ নিয়ে মাতামাতি তো আর ইংল্যান্ড, স্পেন বা ইতালির লিগের মতো নয়!
তবে দিয়াজের প্রতি লিভারপুলের আগ্রহের একটা বড় কারণ বোঝাতে পারে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসের শিরোনাম। দিয়াজের পায়ের ঝলকের একটি ভিডিও দিয়ে এএস লিখেছে, ‘কলম্বিয়ান নেইমারকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হতে পারে লিভারপুল!’
কেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা, সেটি ইউটিউবে দিয়াজের নাম লিখে পাওয়া ভিডিওতেই বোঝা যাবে। লাতিন আমেরিকার রাস্তায় খেলে বড় হওয়া ফুটবলার বলতে যা বোঝায়, যে পায়ের কারুকাজ কিংবা সৃষ্টিশীলতার আনন্দ থাকে তাঁদের ফুটবলে...দিয়াজও তেমনই!
ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন জানাচ্ছে, দিয়াজকে মূলত আগামী গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময়ে (জুন থেকে আগস্ট) কেনার পরিকল্পনা ছিল লিভারপুলের। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহামের আগ্রহ দেখে আগেভাগেই তাঁকে কিনে রেখেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। এমন রত্ন হাতছাড়া হতে দেওয়া যায় নাকি!
ইএসপিএন জানাচ্ছে, গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ক্লপের প্রথম লক্ষ্যই ছিল দিয়াজকে কেনা। এমনকি তাঁর জন্য পোর্তোর চাওয়া অনুযায়ী ৬ কোটি ইউরো দিতেও রাজি ছিল লিভারপুল! সে জায়গায় আপাতত ৪ কোটি ইউরোতেই অলরেডরা পেয়ে যাচ্ছে পছন্দের খেলোয়াড়কে।
ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমের খবর, দুই ক্লাবের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলে আজই দক্ষিণ আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দেবেন লিভারপুলের কয়েকজন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সময় আগামী ২ ফেব্রুয়ারি (স্থানীয় সময় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে) ভোরে আর্জেন্টিনার মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে যাবে দিয়াজের কলম্বিয়া।
লিভারপুল ও পোর্তোর মধ্যে সমঝোতা আনুষ্ঠানিক হয়ে গেলে আর্জেন্টিনাতে ম্যাচের আগেই দিয়াজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে যাবে। জানুয়ারির শীতকালীন দলবদলের শেষ সময় ইংল্যান্ডের সময় ৩১ জানুয়ারি রাত ১১টা, এর মধ্যে খেলোয়াড় কেনার সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
এই মৌসুমে পোর্তোর জার্সিতে লিগে ১৮ ম্যাচে ১৪ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে আরও ৫ গোল করিয়েছেন দিয়াজ। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ ম্যাচে করেছেন ২ গোল। ২০১৯ সালে পোর্তোতে যোগ দেওয়ার পর সব মিলিয়ে ১২৫ ম্যাচে গোল করেছেন ৪১টি, করিয়েছেন আরও ১৯টি।
২০১৬ সালে কলম্বিয়ার ক্লাব বারাঙ্কিয়ার হয়ে অভিষেক হয়েছিল দিয়াজের, ২০১৭ সালে যোগ দিয়েছিলেন কলম্বিয়ারই আরেক ক্লাব আতলেতিকো জুনিয়রে।
২০১৮ সালে কলম্বিয়ার জার্সিতে অভিষেকের পর এ নিয়ে ৩১ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন দিয়াজ। মূলত আক্রমণের বাঁ প্রান্তে খেললেও আক্রমণভাগের ডানে, বাঁয়ে কিংবা মাঝে—যেকোনো দিকেই বেশ স্বচ্ছন্দ দিয়াজ।