৯৪ মিনিটে গোল করে উল্টো ‘শাস্তি’ পেলেন রোনালদো

এই গোল করেও লাভ হয়নিছবি : রয়টার্স

রাতটা রোনালদোর ছিল না।


উদিনেসের বিপক্ষে লিগে জুভেন্টাসের প্রথম ম্যাচে কাল মূল একাদশে ছিলেন না ৩৬ বছর বয়সী পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। পরে শোনা গেল, তিনি নিজেই চেয়েছেন মূল একাদশে না থাকতে। জুভেন্টাস যখন ২-১ গোলে এগিয়ে, তখন নামলেন মাঠে। চেয়ে চেয়ে দেখলেন উদিনেসের গোল শোধ করা। এরপর একেবারে যোগ করা সময়ে গোল করলেন রোনালদো, ভাবলেন দলকে জিতিয়ে ফেলেছেন। বাঁধনহারা উদযাপনে খুলে ফেলেছিলেন জার্সি। কিন্তু বিধি বাম! অফসাইডের কারণে সে গোলও বাতিল হলো, রোনালদোকেও পেতে হলো ‘শাস্তি’, দেখতে হলো হলুদ কার্ড! শেষ পর্যন্ত জুভেন্টাসের ২-২ গোলে ড্রয়ের রাতটা ভুলেই যেতে চাইবেন হয়তো!

কিছুদিন আগে খবর এল, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এককালে বিশ্বজয় করা রোনালদো-আনচেলত্তি আবারও পুনর্মিলনে ব্যাকুল। যে দাবি রোনালদো ও রিয়াল কোচ আনচেলত্তি, দুজনই অস্বীকার করেছেন। রিয়ালে ফেরা হোক না হোক, গত এক সপ্তাহে রোনালদোকে ঘিরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি...কত ক্লাবের নাম জড়িয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে।

গুঞ্জনগুলো রোনালদোর জন্য অপমানজনকই। সবখানেই বলা হচ্ছে, জুভেন্টাস রোনালদোকে বেচতে চায়, রোনালদোর মুখপাত্রও সিটি-পিএসজির মতো ক্লাবে রোনালদোকে কেনার প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এত বেশি বেতনে রোনালদোকে কিনতে নাকি কোনো ক্লাব রাজি নয়।

সময়টাই ভালো কাটছে না রোনালদোর
ছবি : রয়টার্স

কাঁহাতক আর এসব সহ্য হয়! গুঞ্জন তো গুঞ্জনই, তার সত্য-মিথ্যা নিয়ে প্রশ্ন সব সময়ই থাকে। এর মধ্যে এত গুঞ্জনে তিতিবিরক্ত রোনালদো কদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশাল বিবৃতিতে জানিয়ে দিলেন, তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে উল্টোপাল্টা (পড়ুন অপমানজনক) গুঞ্জন যেন না ছড়ানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে কাল জুভেন্টাসের একাদশ দেখার পর রোনালদোর জুভেন্টাস ছাড়ার গুঞ্জন আবার ডালপালা মেলল!

লিগে জুভেন্টাসের প্রথম ম্যাচে রোনালদো কেন মূল একাদশে নেই? অনেকে অনেক কিছুই বলছিলেন। অনেকে নিয়ে এসেছিলেন নতুন কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির সঙ্গে রোনালদোর সম্ভাব্য মন-কষাকষির বিষয়। এই মৌসুমে জুভেন্টাসের কোচ হয়ে ফেরা আলেগ্রি যে নিজের দলের প্রধান তারকা হিসেবে রোনালদোকে তেমন একটা পছন্দ করেন না, সে গুঞ্জন ইতালি ছাড়িয়ে ইউরোপেও বেশ বাজার পেয়েছে। এমনকি রোনালদোর সঙ্গে জুভেন্টাস যে এখনও চুক্তি বাড়ায়নি, এর পেছনে আলেগ্রির ভূমিকাও থাকতে পারে বলে অনেকে ভাবছেন।

সে গুঞ্জনের বৈধতা রোনালদোই যেন দিলেন গত রাতে। মূল একাদশে কেন ছিলেন না, সে প্রশ্নের উত্তরে দলবদল বিষয়ক নির্ভরযোগ্য ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো জানিয়েছেন, দলবদলের বাকি এক সপ্তাহে রোনালদো চাইছেন যে করেই হোক, জুভেন্টাস ছাড়তে। যে কারণে তাঁকে যেন মূল একাদশের জন্য না বিবেচনা করা হয়, সে অনুরোধ রোনালদোই করেছিলেন আলেগ্রিকে।

অনুরোধ রেখেছেন আলেগ্রি।

গোলের আনন্দে জার্সিও খুলে ফেলেছিলেন রোনালদো!
ছবি : রয়টার্স

অবশ্য রোনালদো না থাকায় জুভেন্টাসের যে খুব বেশি সমস্যা হয়েছে, প্রথমে সেটা মনে হয়নি। ম্যাচে জুভেন্টাসের অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পাওলো দিবালাকে। উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার রদ্রিগো বেনতাঙ্কুরের সহায়তায় দিবালার গোলেই ৩ মিনিটে প্রথমে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। পরে দিবালাকেই দেখা যায় সহায়তাকারীর ভূমিকায়, তাঁর পাসেই ২৩ মিনিটে গোল করেন জুভেন্টাসের কলম্বিয়ান রাইটব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদো।

বিরতির পর ম্যাচে ফিরে আসে উদিনেসে। জুভেন্টাসের গোলকিপার ভয়চেক সেজনির ভুলে পেনাল্টি পায় দলটা। সেই পেনাল্টি থেকে ৫১ মিনিটে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রবের্তো পেরেইরার গোলে ব্যবধান কমে।

এরপর ৬০ মিনিটে মঞ্চে আবির্ভাব হয় রোনালদোর, স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতার জায়গায় মাঠে নামান হয় তাঁকে। কিন্তু রোনালদো নামার সময়ে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা জুভেন্টাস ব্যবধান তো আর বাড়াতে পারেইনি, উল্টো ৮২ মিনিটে সাবেক বার্সা উইঙ্গার জেরার্দ দেলোফেউর গোলে ৮৩ মিনিটে সমতায় ফেরে উদিনেসে।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষেও ম্যাচ ২-২ সমতায়, এরপরেই সেই মূহুর্ত। ৯৪ মিনিটে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রোনালদো। ভেবেছিলেন, তাঁর গোলেই ম্যাচ জিতছে জুভেন্টাস। গোটা সপ্তাহ ধরে রোনালদোর ভবিষ্যৎ নিয়ে মিডিয়ায় যা লেখালেখি হচ্ছিল, এই গোলের মাধ্যমে তাঁদের সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে, এমনই হয়তো ভেবেছিলেন পর্তুগিজ তারকা। জার্সি খুলে বাঁধনহারা উদযাপন শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরে ভিএআরে দেখা গেল, গোলের সময়ে অফসাইড ছিলেন রোনালদো। ব্যস, গোল বাতিল! উল্টো জার্সি খোলার অপরাধে হলুদ কার্ড দেখতে হয় রোনালদোকে!


সময়টাই ভালো কাটছে না রোনালদোর!