সাংগঠনিক দিক থেকে বড় এক বাঁকে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের হকি। ১৯৮৫ ও ২০১৭ সালে দুবার এশিয়া কাপ আয়োজন ছাপিয়ে এই প্রথম ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশীয় হকির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। মালয়েশিয়া দল ঢাকায় শেষ পর্যন্ত আসছে না। করোনার হানায় পরশু দলটি টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাকি পাঁচ দল নিয়েই আগামীকাল মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ৫ দেশের এই আয়োজন।
ঢাকার মাঠে এত বড় আয়োজন—বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন এটিকে নিজেদের সাংগঠনিক সাফল্য হিসেবেই দেখছে। কিন্তু স্টিক হাতে স্বাগতিক দলের কাছে টুর্নামেন্টটা বিশাল এক চ্যালেঞ্জই হবে। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো দলের সঙ্গে মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ পেরে উঠবে না বলেই ধরে নিচ্ছে সবাই।
তারপরও আয়োজনেই আনন্দ বাংলাদেশের। আর বড় দলের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা কিছু শিখবেন, এটাও একটা আশা এই টুর্নামেন্ট থেকে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ হকি দল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে প্রায় ৪০ মাস পর! কাল পাকিস্তানের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচের আগে বাংলাদেশের মালয়েশিয়ান কোচ ইমান গোবিনাথান বারবার এই ‘৪০ মাস-এর তাৎপর্য বোঝালেন।
এক প্রশ্নে মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, ‘দেখুন, আমরা ৪০ মাস পর আন্তর্জাতিক হকি খেলব। দীর্ঘ একটা বিরতি পড়েছে। তার ওপর এই টুর্নামেন্টের দলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। কারও চেয়ে কেউ কম নয়। তবে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি আমার ছেলেরা শতভাগ দেবে। এখানে খেলার অভিজ্ঞতা আগামী বছর ৩টি টুর্নামেন্টে কাজে আসবে বাংলাদেশ দলের।’
তাহলে জাতীয় দলের অভিজ্ঞতা অর্জনই কি শুধু টুর্নামেন্ট আয়োজনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হয়ে থাকবে? এই প্রশ্নে নানা জনের নানা মত। বাংলাদেশ অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম যেমন বলেছেন, ‘আমরা অনেক কিছু শিখতে পারব চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে।’
তবে সঙ্গে আরও একটা জিনিস চান তিনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের আনন্দেই বুঁদ না থেকে ফেডারেশন যেন ঘরোয়া হকিতে আরও মনোযোগী হয়, ‘আমরা এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলব, সবাই খুব খুশি। তবে ফেডারেশনের কাছে আমার একটাই আবেদন, আমাদের ঘরোয়া হকিটা যেন মাঠে থাকে।’
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হারের তেতো স্বাদ নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল। শুরুতে রাকিবুল হাসানের গোলে এগিয়ে গেলেও ৪০ মিনিটের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হেরেছে ৩-১ গোলে।
ম্যাচ দেখতে এসে জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার মামুনুর রহমান ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়াজনকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করলেন, এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
সাবেক তারকা রফিকুল ইসলাম কামাল অবশ্য ঘরোয়া খেলার ওপরই বেশ জোর দিতে চাইলেন। ‘ঘরোয়া খেলা নিয়মিত না হলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনে তেমন কোনো ফল আসবে না’—কাল বলছিলেন এই স্ট্রাইকার।
আরেক সাবেক খেলোয়াড় আশিকুজ্জামানেরও একই মত, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ঢাকার বাইরে হকি ছড়াবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত হকির কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এখন হকি হয়ে আছে বিকেএসপিকেন্দ্রিক। বিকেএসপি ছাড়া জাতীয় দলে জেলার কোনো খেলোয়াড় নেই। বিকেএসপির বাইরে খেলা চালু বা খেলোয়াড় তৈরি না হলে হকির কোনো উন্নতিই হবে না, তা যতই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হোক ঢাকায়।’
এটাই আসলে বাস্তবতা বাংলাদেশের হকির। এক বিকেএসপি ছাড়া আর কোথাও খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন দেশের হকিতে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সে প্রশ্ন তাই থাকছেই।