চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হকি শুরু আজ
এশিয়ার বনেদি মঞ্চে বাংলাদেশও
এশিয়ার সেরা পাঁচ দলের সঙ্গে স্বাগতিক হিসেবে আছে বাংলাদেশও। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ কাল ভারতের বিপক্ষে।
মোড়ক সরিয়ে ট্রফিটা দৃশ্যমান করার পর মঞ্চে দাঁড়ানো পাঁচ অধিনায়ক তাতে হাত ছোঁয়ালেন। ছবির জন্য পোজ দিলেন। গতকাল শীতের দুপুরে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে বেজে উঠল ষষ্ঠ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হকির ঘণ্টাধ্বনি।
৮০ হাজার ডলার দিয়ে টুর্নামেন্টের স্বত্ব কিনেছিল বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। টুর্নামেন্টটি হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১৭–২৭ নভেম্বর। করোনায় সেটি পিছিয়ে চলে আসে এ বছরের ১১–১৯ মার্চে, এরপর আবার পিছিয়ে অক্টোবরে। তিনবার পেছানোর পর অবশেষে আজ মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে এশিয়ার সেরা হকি তারকাদের স্টিক–বলের লড়াই।
১৯৮৫ ও ২০১৭ সালে দুবার এশিয়ান কাপ হয়েছিল ঢাকায়। এশিয়া কাপ বা এশিয়ান গেমসে ছোট দলগুলোও সুযোগ পায় বাছাইপর্বের মাধ্যমে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এশিয়ার সেরা ছয়ের বনেদি মঞ্চ। বাংলাদেশ এশিয়ার তালিকার ৯ নম্বর দল হলেও স্বাগতিক হিসেবে এই প্রথম সুযোগ মিলল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হকিতে।
হকির মানচিত্রে আয়তনের দিক দিয়ে এশিয়া কাপ বা এশিয়ান গেমসই বড়, তবে মর্যাদায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শীর্ষে। এখানে সেরার সঙ্গে সেরার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আজ থেকে নামছে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও বাংলাদেশ। প্রথম দিনে বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ছয়টায়। কিন্তু করোনার হানায় মালয়েশিয়া শেষ পর্যন্ত না আসায় পরিবর্তিত সূচিতে আগামীকাল বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে। তার আগে আজ বেলা সাড়ে তিনটায় দক্ষিণ কোরিয়া–ভারত ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ৯ দিনের টুর্নামেন্টের।
গতকাল ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের সুযোগ করে দেওয়ায় এশিয়ান হকি ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানান টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি আবদুর রশিদ শিকদার। বাংলাদেশকে ধন্যবাদ ফিরিয়ে দিয়ে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব ইকরামের কণ্ঠে উচ্ছাস, ‘বাংলাদেশের আয়োজন দেখে আমরা খুশি। অবশেষে আমরা কোভিডকে জয় করতে পারলাম। এটা এশিয়ার হকির জন্য অনেক বড় সুখবর।’
তবে ঘুরেফিরে একটা প্রশ্ন আসছেই—শুধু আয়োজনে আনন্দই কি সব? এমন আয়োজনে বাংলাদেশের রুগ্ন হকি কতটুকু লাভবান হবে? তৈয়ব ইকরাম বলেন, ‘নিয়মিত ঘরোয়া আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনকে দেশের হকিকে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শই দেব আমি।’
তার আগে আপাতত বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সব চিন্তা চার বছর পর দেশে আয়েজিত বড় এই হকি টুর্নামেন্টের সুষ্ঠু আয়োজন নিয়ে। করোনার কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে একটা চোরা আতঙ্ক যে থেকেই যাচ্ছে! দলগুলোকে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্য রাখার কথা বলা হলেও উন্মুক্ত স্টেডিয়ামে যার যখন খুশি ঢুকে পড়ছেন, চলে যাচ্ছেন খেলোয়াড়দের কাছে।
ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে মঞ্চে আসেন টুর্নামেন্টের পাঁচ দলের পাঁচ অধিনায়ক। সবার হাতে একটি করে হকিস্টিক। অভিন্ন সুরে আয়োজকদের ধন্যবাদ দিলেন অধিনায়কেরা। সঙ্গে পাকিস্তান অধিনায়ক ওমর ভুট্টর সংযোজন, ‘আমি খুব খুশি যে এশিয়ান হকি ফেডারেশন এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে আর আমি তাতে অংশ নিচ্ছি। দুই বছর পর আমরা আন্তর্জাতিক হকি খেলছি। করোনার কারণে এত দিন মাঠের বাইরে ছিলাম। চেষ্টা করব ভালো খেলার।’
টুর্নামেন্টে ফেবারিট ভাবা হচ্ছে ৪১ বছর পর টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতা ভারতীয় দলকে। বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় সেরা দলের অধিনায়ক মানপ্রীত সিংয়ের কথা, ‘টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ৫ দলকেই শুভ কামনা। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভালো করার চেষ্টা করব।’ শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানের অধিনায়কও। জাপান অধিনায়ক সেং তানাকা বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই বললেন, ‘আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’
টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নদের জন্য নেই কোনো অর্থ পুরস্কার। তবে প্রতি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় পাবেন ১৫০ ডলার করে। দর্শকদের জন্য গ্যালারি থাকবে উন্মুক্ত। বাংলাদেশ থেকে খেলা দেখা যাবে শুধু স্টার স্পোর্টসে। স্থানীয় কোনো চ্যানেল টুর্নামেন্টটি সম্প্রচার করছে না।