কিম জং উনের সঙ্গে যে কারণে সন্ধি করছে দক্ষিণ কোরিয়া
দুই দেশের সম্পর্কটা সাপেনেউলে বললেও হয়তো কম বলা হয়। দক্ষিণ কোরিয়া যদি ডানে চলে, উত্তর কোরিয়া চলে বাঁয়ে। উত্তর কোরিয়া কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে চটে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন কিছু একটা বললে পাল্টা একটা জবাব দেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন! দুই দেশের এমন সম্পর্কের মধ্যেই একটা শান্তির বার্তা এসেছে আজ। ২০৩২ সালে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে অলিম্পিক আয়োজন করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল। এরই মধ্যে সিউল আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে (আইওসি) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে।
আইওসি অবশ্য ২০৩২ অলিম্পিকের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনকে পছন্দ করেছে। আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজক হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিসবেন। কিন্তু আয়োজক এখনো চূড়ান্ত করেনি আইওসি। এ কারণেই ‘সীমানা ছাড়িয়ে, ভবিষ্যতের পানে’ স্লোগানকে সামনে রেখে দুই কোরিয়া, মানে সিউল ও পিয়ংইয়ং মিলে অলিম্পিক আয়োজন করতে চায়। সিউল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘শহরের সরকার আয়োজন-স্বত্বের বৈধতা জানিয়ে দিয়েছে এবং এ–ও বলেছে যে ক্রীড়ার মাধ্যমে আইওসি বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্যে নেমেছে, সে কারণেই যৌথ আয়োজনের কথা ভাবছে তারা।’
যৌথভাবে অলিম্পিক আয়োজনের বিষয়ে দুই কোরিয়া একমত হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের। কিন্তু ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সফল না হওয়ায় দুই কোরিয়ার সম্পর্ক আবার খারাপ হতে থাকে। এখনো দুই দেশের সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি।
সম্পর্কের উন্নয়ন না হলেও পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সিউলের যৌথভাবে অলিম্পিক আয়োজনের বিষয়টি অনেকের মনে প্রশ্নও তুলেছে—এটা কি আদৌ সম্ভব? সিউল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কি এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেছে তারা? এ প্রশ্নের উত্তরে সিউল কর্তৃপক্ষ বলেছে, দুই দেশের আলোচনার ফল এই অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তাব। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছে সিউল কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালে শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছিল পিয়ংইয়ং। সেই সময় দুই কোরিয়ার সম্পর্ক ছিল উষ্ণ। সেবারের শীতকালীন অলিম্পিকে দুই কোরিয়ার অ্যাথলেটরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল দুই দেশের যৌথ পতাকাতলে। এমনকি সেবার মেয়েদের আইস হকিতে যৌথ দল গড়েছিল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। টোকিও অলিম্পিকেও এমন কিছুর প্রত্যাশা করছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে পিয়ংইয়ং জানিয়ে দিয়েছে, এ বিষয়ে আপাতত কোনো আলোচনায় বসতে চায় না তারা।