চমকে দিয়ে বোল্টের সিংহাসনে ইয়াকবস

দৌড়ে সবার আগে ইয়াকবসছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেড কারলি, কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রাস, দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিম্বিনে...চোখ ছিল এঁদের দিকেই! চীনের বিংতিয়ান সু সেমিফাইনালে ৯.৮৩ সেকেন্ডে দৌড়ে বেশ নজর কেড়েছিলেন। সে তুলনায় ইতালির মার্চেল ইয়াকবসকে নিয়ে কজনই বা আর বাজি ধরেছিলেন!

কিন্তু টোকিও অলিম্পিকের ১০০ মিটারে আজ সবাইকে চমকেই দিয়েছেন ইয়াকবস। ৯.৮০ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে সোনাই জিতে নিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী ইতালিয়ান। ৯.৮৪ সেকেন্ডে শেষ করে ফ্রেড কারলি জিতেছেন রুপা, ব্রোঞ্জ জেতার পথে আন্দ্রে ডি গ্রাস দৌড় শেষ করেছেন ৯.৮৯ সেকেন্ডে।

অলিম্পিকে ১০০ মিটার মানে তো এটা উসাইন বোল্টেরই ইভেন্ট! ২০০৮ বেইজিং, ২০১২ লন্ডন আর ২০১৬ রিও—আগের তিন অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন জ্যামাইকান কিংবদন্তি স্প্রিন্টার। অলিম্পিক রেকর্ড (৯.৬৩, লন্ডন অলিম্পিকে) আর বিশ্ব রেকর্ড (৯.৫৮, বার্লিনে ২০০৯ সালে)—১০০ মিটারে সর্বজনস্বীকৃত রাজা বোল্ট।

দুই হাতে তির ছোড়ার ভঙ্গিটা আর দেখবে না অলিম্পিক, তবে বোল্টের হাত থেকে রেকর্ড কেড়ে নেওয়া, ১০০ মিটারে বোল্টের মতো রাজত্ব আর কেউ করতে পারবেন কি?
ছবি: রয়টার্স

২০১৭ সালে অবসরে যাওয়া বোল্টের সিংহাসনে এবার কে বসবেন, টোকিও অলিম্পিকের ১০০ মিটার ঘিরে যত জল্পনা-কল্পনা ছিল এ নিয়েই। বোল্টের সঙ্গে ২০১২ অলিম্পিকে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা ইয়োহান ব্লেক সেমিফাইনালেই ছিটকে পড়েছেন। ফাইনালে তাই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি ছিল রিও অলিম্পিকে বোল্টের সঙ্গে দৌড়ানো আন্দ্রে ডি গ্রাসের নাম। যুক্তরাষ্ট্র আর আফ্রিকার দেশগুলোই স্প্রিন্টে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ান, সে কারণে এই দেশগুলোর অ্যাথলেটদেরও নাম ছিল আলোচনায়।

কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দিলেন ইয়াকবস! সোনা জেতার পথে দুবার ১০০ মিটারে ইউরোপিয়ান রেকর্ড ভেঙেছেন। সেমিফাইনালে ৯.৮৪ সেকেন্ডে দৌড়ে প্রথমবার ইউরোপের নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন, ফাইনালে ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেই!

নিজের কীর্তির পাশে ইয়াকবস
ছবি: রয়টার্স

দৌড়ের শুরুতেই অবশ্য একটা ধাক্কা দেখল টোকিও অলিম্পিক। গ্রেট ব্রিটেনের ঝারনেল হিউজ বাঁশি বাজার আগেই দৌড় শুরু করে (ফলস স্টার্ট) বাদ পড়ে গেলেন। সেটিই কি সোনা আর রুপাজয়ী ইয়াকবস আর কারলির সুবিধা করে দিল? ৪ নম্বর লেনে ছিলেন হিউজ, তিনি বাদ পড়ায় ৩ নম্বর লেনে থাকা ইয়াকবস আর ৫ নম্বর লেনে থাকা কারলির হয়তো দৌড়াতে একটু সুবিধাই হলো!

অবশ্য সেটি কাজে তো লাগাতে হবে! তিন পদকজয়ীর মধ্যে রিঅ্যাকশন টাইম (বাঁশি বাজার কত সময়ের মধ্যে দৌড় শুরু করেছেন) সবচেয়ে বেশি ছিল ইয়াকবসেরই! কারলি যেখানে দৌড় শুরু করেছেন ০.১২৮ সেকেন্ডের মধ্যে, ডি গ্রাস শুরু করেছেন ০.১৫৫ সেকেন্ডে, ইয়াকবস সেখানে শুরু করেছেন ০.১৬১ সেকেন্ডে। প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন কারলি, কিন্তু ৩০ মিটার পেরোনোর পর থেকে লম্বা লম্বা পা (স্ট্রাইড) ফেলে যে গতি বাড়ান ইয়াকবস, প্রায় ৭০ মিটারের সময়ই পেরিয়ে যান কারলিকে।

তিন পদকজয়ী - সোনাজয়ী ইয়াকবস (মাঝে), রূপাজয়ী কারলি (বাঁয়ে) ও ব্রোঞ্জজয়ী ডি গ্রাস
ছবি: রয়টার্স

শেষ পর্যন্ত সোনা-রুপার লড়াইয়ে ছিলেন এ দুজনই। শুরুতে একটু ধীর গতিতে দৌড়ানো ডি গ্রাস তো ব্রোঞ্জ পাবেন কি না, সে নিয়েই সংশয় জেগেছিল দৌড়ের মাঝপথে। কিন্তু শেষদিকে দারুণ দৌড়ে ব্রোঞ্জ জেতেন ডি গ্রাস। মজার ব্যাপার, তিনজনই নিজেদের ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিং করেছেন আজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইয়াকবসই চমকে দিলেন! ‘ক্রেজি’ ডাকনামের ইতালিয়ান পাগুলে কাণ্ডই গড়ে দেখালেন।

ইতালিয়ান মায়ের গর্ভে তাঁর জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এল পাসোতে। কিন্তু ছোটবেলাতেই ইতালিতে চলে আসেন, তাই তাঁর অর্জনে পুরো কৃতিত্বটা ইতালিই দাবি করবে। এমন অর্জনের ভাগ অবশ্য ইতালি দিতে চাইবেই-বা কেন! অলিম্পিকে ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই ১০০ মিটারে সোনা তো দূরে থাক, এর আগে পদকই শুধু একবার জিতেছিল ইতালি। মেয়েদের ১০০ মিটারে ১৯৬০ রোম অলিম্পিকে জুসেপ্পিনা লিওনে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ।