‘পুরুষদের সঙ্গে খেলে উন্মুক্ত বিভাগের গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চাই’

জান্নাতুল ফেরদৌসছবি: প্রথম আলো

বয়স মাত্র ১৭ বছর। জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ২০ বারের চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ, সাবেক চ্যাম্পিয়ন শারমিন সুলতানা ও নাজরানা খানদের টপকে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হলেন জান্নাতুল ফেরদৌস।

আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বললেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের এই ছাত্রী।

প্রশ্ন: শেষ রাউন্ডে জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ড্র করলে অনেক সমীকরণ মেলাতে হতো। শেষ পর্যন্ত ড্র করে টাইব্রেকিংয়ে মেয়েদের জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হলেন। কতখানি স্বস্তি লাগছে?

জান্নাতুল ফেরদৌস: আজকের ম্যাচ নিয়ে ততটা চাপে ছিলাম না। একেবারে স্বাভাবিক ছন্দে খেলেই ড্র করেছি। যদিও আমি প্রথম থেকে জেতার জন্যই খেলেছি। কিন্তু ম্যাচটা এমনভাবে চলেছে যে ড্র করা ছাড়া উপায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি, এ জন্য খুবই ভালো লাগছে।

প্রশ্ন: দশ রাউন্ডের খেলায় কোন ম্যাচটি সবচেয়ে কঠিন ছিল?

জান্নাতুল: নবম রাউন্ডে প্রতিপক্ষ ছিল আহমেদ ওয়ালিজা। ওই ম্যাচ জেতার পর মনে হচ্ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভালো সুযোগ আছে এবার।

জান্নাতুল ফেরদৌস
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: এবারের মেয়েদের জাতীয় দাবায় খেলেছেন ২০ বারের চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ, দুইবারের চ্যাম্পিয়ন নাজরানা খান, শারমিন সুলতানারা। তাঁদের পেছনে ফেলে মাত্র ১৭ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন? এই প্রতিযোগিতায় ভালো করার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

জান্নাতুল: এটা অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল। আমি শুরুতে ভাবিনি যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। তবে একটা সম্ভাবনা তো ছিলই। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরেই বয়সভিত্তিক দাবায় ভালো করছিলাম। ২০২০ সালে জাতীয় যুব দাবায় উন্মুক্ত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এর আগে দিল্লিতে কমনওয়েলথ দাবায় খেলেছি, রাশিয়ায় চিলড্রেন চেস ফেস্টিভ্যালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সব মিলিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।

প্রশ্ন: আপনার দাবায় আসার গল্পটা বলবেন?

জান্নাতুল: চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে দাবা খেলা শুরু। আমার বাবা আজিজুল হক একজন শিক্ষক। বাবা দাবা খেলতে পছন্দ করতেন। যখন আমার বয়স দুই-তিন বছর তখনই সব কটি ঘুঁটি সঠিকভাবে বসাতে পারতাম। বাবা ভাবতেন আমার দাবায় প্রতিভা আছে। এরপর বাবার হাতে দাবার হাতেখড়ি।

জান্নাতুল ফেরদৌস
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: পড়াশোনার পাশাপাশি দাবা খেলছেন। কীভাবে দুটোর মধ্যে সমন্বয় করেন?

জান্নাতুল: একসঙ্গে দুটো কাজ করতে তো সমস্যা হয়। পরীক্ষার আগে বেশি চাপে থাকি। এসএসসি পরীক্ষার আগে দুই মাস খেলা বন্ধ ছিল। তবে খেলাধুলা করেও জিপিএ–৫ পেয়েছি। দাবাড়ু বলে স্কুলে আলাদা মূল্যায়ন পাই।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের আর কেউ খেলাধুলায় আছেন?

জান্নাতুল: আমার ভাই সাজিদুল হক দাবাড়ু। সে দাবা খেলে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছে। বলতে পারেন আমরা দাবা পরিবার।

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় দাবাড়ু কে?

জান্নাতুল: কার্লসেন (বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন) আমার প্রিয় দাবাড়ু।

প্রশ্ন: মেয়েদের জাতীয় দাবায় রানী হামিদ ছাড়া আর কাউকে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হতে দেখা যায়নি। অনেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর হারিয়ে যান...।

জান্নাতুল: আমি রানী আন্টির চেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।

প্রশ্ন: জাতীয় পর্যায়ে সবে সাফল্য পেতে শুরু করেছেন। ক্যারিয়ারে কোথায় দেখতে চান নিজেকে?

জান্নাতুল: আন্তর্জাতিক মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার নয়, পুরুষদের সঙ্গে খেলে উন্মুক্ত বিভাগের গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চাই। মেয়েদের দাবায় আমাদের দেশে সবার ওপরে দেখতে চাই নিজেকে।

প্রশ্ন: দাবার বাইরে আর কোন খেলা পছন্দ আপনার?

জান্নাতুল: ক্রিকেট খুব ভালো লাগে। আমার প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।