ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে মায়ের সঙ্গে আড্ডা ভালোবাসেন তিনি

মুখোমুখি বোর্ডে বসে খেলতেই ভালো লাগে গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিবের।ছবি: প্রথম আলো

চাইলে নিজেকে ক্রিস্টোফার নোলানের সঙ্গে মেলাতেই পারেন গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিবকে। ইন্টারস্টেলার, ইনসেপশন, ডানকার্ক, মেমেন্টো, দি ডার্ক নাইটের পরিচালক নোলানের কোনো ইমেইল আইডি নেই, মুঠোফোনও ব্যবহার করেন না তিনি। নোলানের মতোই রাকিবের কোনো মেইল আইডি নেই, রাকিব অবশ্য মুঠোফোন ব্যবহার করেন। তবে বাংলাদেশের চতুর্থ গ্র্যান্ডমাস্টারের নেই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটস অ্যাপ অ্যাকাউন্ট! ভার্চুয়াল জগতে নিরাসক্ত রাকিব এ কারণেই কোনো অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান না।

এই সময়ে ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। বেশির ভাগ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকতে চান। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে মনের কথা ভাগ করতে চান বন্ধুদের সঙ্গে, মনের ভাবনা ভাগাভাগি করতে চান গোটা পৃথিবীর সঙ্গে। কিন্তু এসব ব্যাপার কখনোই টানে না রাকিবকে! অনলাইনের কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই বাংলাদেশের চতুর্থ গ্র্যান্ডমাস্টারের। তাইতো করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে যেখানে দেশের অন্য দাবাড়ুরা অনলাইনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তখন রাকিব নারায়ণগঞ্জে নিজের বাড়িতে বসে পড়ছেন বই।

গত আগস্টে অনলাইনে হয়েছে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াড। বিশ্বের অন্যতম বড় প্রতিযোগিতায় খেলেননি রাকিব। গতকাল থেকে ঢাকায় শুরু হওয়া জয়তু শেখ হাসিনা অনলাইন আন্তর্জাতিক দাবাতেও নাম নিবন্ধন করেননি। অথচ বাংলাদেশে হওয়া যে কোনো প্লাটফর্মে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট শেখ হাসিনা দাবা। এই টুর্নামেন্টে খেলছেন ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গাঙ্গুলী, দীপ্তায়ন ঘোষ, ডি গুকেশ, রাশিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার সের্গেই ভলকভ, ভিয়েতনামের ইয়েন থ্রু সং, সিঙ্গাপুরে ভিলামেয়র বুইয়িনাভেনতুরা, ইরানের আমিন তাবাতাবেই। খেলছেন বাংলাদেশের তিন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, জিয়াউর রহমান ও এনামুল হোসেন রাজীব।

দাবার বোর্ডে চাল দিতে মগ্ন গ্র্যান্ডমাস্টার রাকিব।
ছবি: প্রথম আলো

এমন একটা টুর্নামেন্ট মুখোমুখি বোর্ডে বসে আয়োজন হলে অবশ্যই খেলতেন রাকিব। কিন্তু অনলাইন যে কখনোই টানে না রাকিবের। প্রথম আলোকে সেটাই বললেন মুঠোফোনে, ‘অনলাইনের প্রতি আমার একটা অনীহা আছে। এ জন্য আমি কখনো মেইল আইডি খুলিনি। ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট নেই। কোনো টুর্নামেন্টেও খেলতে আগ্রহ পাই না। আমরা ভালো লাগার জায়গাটা মুখোমুখি বসে খেলা।’
অনলাইনে নিরাসক্ত, নেই মেইল আইডি। তাহলে এত এত বিদেশি টুর্নামেন্টে খেলতে যোগাযোগটা কীভাবে করেন? প্রশ্নটা করতেই রাকিবের উত্তর, ‘আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এ ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করে। আর এর বাইরে ফেডারেশন প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেয়।’

ফেসবুকে সময় ব্যয় না করে অন্য কাজেও সেই সময় ব্যবহার করা যায়। আমি যেমন আমার মায়ের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোবাসি।
আবদুল্লাহ আল রাকিব

অন্তর্মুখী স্বভাবের রাকিব একা থাকতে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন অবসর সময়ে বই পড়তে। অনলাইনে আসক্ত হয়ে বই পড়ার সুযোগটা হারাতে চান না, ‘ফেসবুকে সময় ব্যয় না করে অন্য কাজেও সেই সময় ব্যবহার করা যায়। আমি যেমন আমার মায়ের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোবাসি। পছন্দের বই পড়ি। ছোট বেলা থেকে দস্তয়ভস্কি, তলস্তয়ের লেখা পড়ে বেড়ে উঠেছি। দেশে প্রিয় লেখক আহমদ ছফা, শহীদুল জহির। এদের বই পড়ি নিয়মিত। এসব পড়তে পড়তেই সময়টা বেশ কেটে যায়।’

রাকিব সর্বশেষ টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন গত বছরের ডিসেম্বরে প্রিমিয়ার দাবা লিগে। খেলেছেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। টানা নয় মাস প্রতিযোগিতামূলক খেলা ছেড়ে এতটুকু নাকি অস্বস্তিতে নেই, ‘আমি দাবার বই পড়ি। নিজের সঙ্গে নিজেই দাবা খেলি। দাবার চর্চাটা থামিয়ে দিইনি একটুও। করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে আশা করি আবারও দাবার বোর্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়ব।’