পাঁচ দিন হয়ে গেল। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে গত বৃহস্পতিবার। বিশ্ব নেতৃত্ব এখনো সে হামলার জবাব দিতে পারেনি, নিজ দেশ রক্ষায় ইউক্রেনকে একাই লড়তে হচ্ছে। যাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে, তাঁরা দেশ ছেড়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিচ্ছেন। আর যাঁরা সমর্থ, ইচ্ছুক, তাঁরা দেশের জন্য লড়ছেন। না লড়ে উপায়ও থাকছে না। সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি করবে না—রাশিয়া এমন ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তেমনটা দেখা যায়নি। গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২১০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের সাতজন শিশু। এর মধ্যে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে কিন্ডারগার্টেনে।
ইউক্রেনের বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারাও তাই লড়াইয়ে নেমেছেন। দেশের বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। ফুটবলার আন্দ্রি ইয়ারমোলেঙ্কো, রুসলান মালিনোভস্কি ও ওলেকসান্দর জিনচেঙ্কোরা দেশের বাইরে থাকায় এভাবেই দেশের জন্য সাহায্য চাইছেন। তবে যাঁরা দেশে আছেন, তাঁরা সরাসরি যুদ্ধেই নামছেন। দুই দিন আগে সশস্ত্র যুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউক্রেনের দুই কিংবদন্তি বক্সার ভিতালি ক্লিচকো ও ভ্লাদিমির ক্লিচকো। গতকাল রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন আরেক বক্সার ভাসিল লোমাচেঙ্কোও।
২০০৮ ও ২০১২ অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন লোমাচেঙ্কো। এরপর পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লিখিয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৮টি লড়াইয়ে মাত্র দুবার হেরেছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই বক্সার তিনটি ভিন্ন ওজন শ্রেণিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তবে গ্লাভস নয়, তাঁকে সর্বশেষ দেখা গেছে এম সিক্সটিন অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে। সংবাদমাধ্যম রমাদস্কে ও ইউক্রিনফর্ম জানিয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণের ওদেসা অঞ্চলের প্রতিরোধে অংশ নিয়েছেন লোমাচেঙ্কো। নিজ শহর বিলহরদ-নিস্ত্রোভস্কির নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন তিনটি শ্রেণিতে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
ক্যামোফ্লেজ পোশাকে অস্ত্র হাতে নিজের একটি ছবি নিজেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন লোমাচেঙ্কো। ফেসবুকে পেজে বলেছেন, ‘বিলহরদ-নিস্ত্রোভস্কি ব্যাটালিয়ন অব টেরিটরিয়াল ডিফেন্স গঠিত হয়েছে। অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত।’ দুই দিন আগেই বিশ্বের শান্তির জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন লোমাচেঙ্কো।
লোমাচেঙ্কোর আগেই সশস্ত্র যুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়েছেন কিংবদন্তি বক্সার ভিতালি ক্লিচকো। ৫০ বছর বয়সী ভিতালি বর্তমানে কিয়েভ শহরের মেয়র। রাজধানীর প্রতিরক্ষা বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সে নাম লিখিয়েছেন ভিতালি। তাঁর ছোট ভাই ভ্লাদিমিরও ভিতালির পথে হেঁটেছেন।
ওদিকে দুটি ওজন শ্রেণির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইউক্রেনের ওলেকসান্দর উসিক সরাসরি রাশিয়ান মানুষদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, ‘আমি রাশিয়ার মানুষদের কিছু বলতে চাই। আমরা নিজেদের ভাই বলেই মনে করি, তোমার ছেলেমেয়েদের আমাদের দেশে যেতে দিয়ো না, আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমো না। আমি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও বলছি। আপনি চাইলে এ যুদ্ধ থামাতে পারেন। দয়া করে বসুন, আমাদের সঙ্গে কোনো দাবি না রেখে কথা বলুন। আমাদের সন্তান, স্ত্রী, দাদিরা এখন বেসমেন্টে লুকিয়ে আছে।’
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও যে যুদ্ধে অংশ নিতে হচ্ছে, এটা পোড়াচ্ছে উসিককে, ‘আমরা এখন নিজ দেশেই আছি, আমাদের অন্য কোনো পথ নেই, আমরা তো হামলার প্রতিরোধ করবই...থামান এসব! এই যুদ্ধ থামান।’