‘লাভ তো দূরের কথা, ভাড়াও ওঠে না’

ক্রীড়া সামগ্রী ব্যবসায়ে চলছে ভয়াবহ মন্দা।ছবি: প্রথম আলো

‘দেখেন না ভাই, দুপুরে ভাত না খেয়ে মুড়ি খাচ্ছি!’ কথাটা মজার ছলে বললেও ক্রীড়াসামগ্রী ব্যবসার সাম্প্রতিক চিত্রটাই যেন ফুটে উঠল গুলিস্তানের সমবায় স্পোর্টস মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর মুখে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি আজ সংকটে। জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেক মানুষ। খেলাধুলা তো অনেক পরের ব্যাপার।

করোনাকালে ক্রীড়াসামগ্রীর ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে দোকানের শাটার খোলা গেলেও বিক্রিবাট্টা নেই বললেই চলে। লাভের দেখা পাওয়া দূরের কথা, ওঠে না দোকানভাড়াও। খরচ কমানোর জন্য এরই মধ্যে অনেক দোকানমালিক বাধ্য হয়েছেন কর্মচারী ছাঁটাই করতে। ক্রীড়াসামগ্রীর বাজারে আগে যে উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়ত, সেখানে এখন নীরবতা।

গুলিস্তানের ক্রীড়াসামগ্রীর বাজার রেলওয়ে সুপার মার্কেট ও সমবায় টুইন টাওয়ার স্পোর্টস মার্কেটে অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সকালে শাটার উঠিয়ে জার্সি, বুট, ব্যাট ইত্যাদি ঝাড়পোঁছ করে সাজানো হয়। এরপর চাতক পাখির মতো ক্রেতার আশায় বসে থাকা। দোকানে দোকানে ঘুরে শোনা গেল তাঁদের হতাশার কথা। মন্দা কাটিয়ে আগের অবস্থায় ফিরতে আরও অন্তত এক বছর সময় লাগতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।

করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের শেষ সপ্তাহে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব খেলা। জুনের শেষ দিকে দোকানপাট, বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেয় সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন ফেডারেশন সীমিত পরিসরে খেলাধুলা শুরু করলেও মনের আনন্দে পাড়া-মহল্লায় শিশু-কিশোরদের যে খেলা, সেটি এখনো আগের অবস্থায় যায়নি। মাঠে খেলা না থাকায় ক্রীড়াসামগ্রী কেনারও তেমন প্রয়োজন পড়ে না কারও। এই বাজারের বড় ক্রেতা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারাও এখন বাসা থেকে বের হচ্ছে না।

খেলা নেই, খেলার সামগ্রীর বিক্রিও নেই
ছবি: প্রথম আলো

‘কাঠের মার্কেট’ নামে খ্যাত গুলিস্তানের রেলওয়ে সুপার মার্কেটে দোকান আছে ২৬৫ টি। এখানে দোকানভাড়া ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। করোনা পরিস্থিতিতে এই ভাড়াও ঠিকভাবে উঠছে না বলে জানান ইমা স্পোর্টসের মালিক ইউনুস আলী খান, ‘দোকান খুলে বসে থাকি। দু-একটা গেঞ্জি ও ট্রাউজার বিক্রি হলেও খেলাধুলার সামগ্রী বিক্রি হয় না। অবস্থা এতটাই খারাপ যে দোকানভাড়াও ওঠে না আমাদের।’

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এক ক্রিকেটারের ঢাকার মিরপুর ও ঢাকার বাইরে মিলিয়ে ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান ছিল মোট ছয়টি। কিন্তু করোনাকালে ব্যবসার অবস্থা এতটাই খারাপ যে এর মধ্যে তিনটি দোকানই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাবেক ক্রিকেটার বলেন, ‘তিনটি দোকান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকায় ৮০০ টাকা দিয়ে কেনা কেডস এখন ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’

রেলওয়ে ক্রীড়াসামগ্রী বাজার সমিতির সভাপতি (দ্বিতীয় তলা) আবুল কালাম জমাদারের কণ্ঠেও অসহায়ত্ব। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। করোনার সময় দেড় মাস ঘরে বসে ছিলাম। এরপর দোকানপাট খুললেও বিক্রি নে

দোকান ভাড়াই এখন ওঠাতে পারেন না ক্রীড়া সামগ্রী ব্যবসায়ীরা।
ছবি: প্রথম আলো

সমবায় টুইন টাওয়ার স্পোর্টস মার্কেটে প্রায় ২০০ দোকান আছে। ব্যবসা ভালো হচ্ছে না বলে অনেক দোকানে কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে। তবু লোকসানের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সংকট কাটাতে সরকারের সহায়তা আশা করছেন সমবায় স্পোর্টস মার্কেটের সভাপতি এস এম সিরাজুল। তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৬ মাসে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিছু ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে, কিছু ব্যবসায় স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছে। অথচ আমরা কিছুই পাইনি। আমাদের কথাও সরকারের ভাবা উচিত।’

করোনাকালে ক্রীড়াসামগ্রীর বাজারের সার্বিক চিত্রটা ফুটে ওঠে বাংলাদেশ স্পোর্টস গুডস মার্চেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম পাটোয়ারি জানান, ‘এমনিতে বাংলাদেশের ক্রীড়াসামগ্রীর বাজারে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিক্রি হয়। এ বছরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তার চার ভাগের এক ভাগ হয়ে থাকতে পারে।’