২৯ বছর পর জহির রায়হান
অলিম্পিক গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেওয়াটা বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের জন্য নিয়মিত একটা ব্যাপার। সেই ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমস দিয়ে যেটার শুরু। পরের আটটি অলিম্পিক গেমসেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের কোনো না কোনো অ্যাথলেট।
সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়তে যাচ্ছে এবার। টোকিও অলিম্পিকে ১০০ মিটারের হিটে স্প্রিন্টে কেউ ট্র্যাকেই নামবেন না। আগামীকাল ছেলেদের ৪০০ মিটারে দৌড়াবেন এবারের অলিম্পিকে বাংলাদেশের একমাত্র দৌড়বিদ জহির রায়হান।
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১ মিনিটে (টোকিওর স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ১ মিনিটে) শুরু জহিরের হিট। জহির দৌড়াবেন ৩ নম্বর হিটের ৩ নম্বর লেনে।
১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস গেমসে প্রথমবার সাইদুর রহমান ডন অংশ নেন ১০০ মিটার ও ২০০ মিটারে। এরপর ১৯৮৮ সিউল অলিম্পিকে ১০০ মিটারে দৌড়ান মোহাম্মদ শাহজালাল। ২০০ মিটারে শাহ আলম, ৪০০ ও ৮০০ মিটারে মিলজার হোসেন দৌড়েছেন। এ ছাড়া ৪ x ১০০ মিটার রিলেতে শাহ আলম, শাহানুদ্দিন চৌধুরী, মিলজার হোসেন ও শাহজালাল অংশ নেন।
১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিক গেমসে ১০০ মিটারে দৌড়েছিলেন গোলাম আম্বিয়া। বার্সেলোনায় ২০০ মিটারে শাহানুদ্দিন চৌধুরী ও ৪০০ মিটারে অংশ নেন মেহেদি হাসান। আর ৪x ১০০ মিটার রিলেতে গোলাম আম্বিয়া, মেহেদি হাসান, শাহানুদ্দিন চৌধুরী ও শাহজালাল দৌড়েছিলেন।
১৯৯৬ আটলান্টা গেমসে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন একমাত্র অ্যাথলেট বিমল তরফদার, ১০০ মিটারে। এরপর ২০০০ সিডনি অলিম্পিকে মেয়েদের ১০০ মিটারে দৌড়েছিলেন ফৌজিয়া হুদা। সেবার সিডনিতে ২০০ মিটারে অংশ নেন মাহবুব আলম।
২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শুধুই ১০০ মিটারে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৪ এথেন্সে শামসুদ্দিন, ২০০৮ বেইজিং গেমসে আবু আবদুল্লাহ, ২০১২ লন্ডন গেমসে মোহন খান এবং সর্বশেষ ২০১৬ রিওতে ১০০ মিটারে দৌড়ান মেজবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার।
২৯ বছর পর অলিম্পিকে শুধুই ৪০০ মিটারে দৌড়াবে বাংলাদেশ। এবার এই ইভেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য জহিরকে বেছে নেয় বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। যদিও দেশের দ্রুততম মানব মোহাম্মদ ইসমাইল এতে আপত্তি জানিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে (বিওএ) চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখেন বিওএর কর্মকর্তারা।
জহিরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশি বেশি খেলার সুযোগ দিতে চায় অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। জহির মূলত ২০১৭ সালে প্রথমবার কেনিয়ার নাইরোবিতে বিশ্ব যুব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে উঠে সবার নজর কাড়েন। সেবার তিনি সময় নেন ৪৮ সেকেন্ড। ৪০০ মিটারে জহিরের ক্যারিয়ারসেরা টাইমিং ৪৭.৩৪ সেকেন্ড। এরপর ২০১৯ সালে ভারতে আমন্ত্রণমূলক অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে এই টাইমিংয়ে সোনা জেতেন তিনি।
জহিরকে নিয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালের কাঠমান্ডু এসএ গেমসে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য জহিরের, কাঠমান্ডুর উচ্চতায় শ্বাসকষ্ট জটিলতায় ভুগে ট্র্যাকেই নামা হয়নি জহিরের। জহির এ বছর হ্যান্ড টাইমিংয়ে ৪৭.২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারে জিতেছেন সোনা।
প্রথমবার অলিম্পিকে সুযোগ পেয়ে ভীষণ রোমাঞ্চিত জহির, ‘অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ায় ভাগ্যের ব্যাপার। এখানে খেলতে পারছি এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য বাড়তি একটা অভিজ্ঞতা। আমার লক্ষ্য থাকবে নিজের সেরা টাইমিংটা টোকিওতে টপকে যাওয়া।’