সাক্ষাৎকারে এনামুল হোসেন
‘গ্র্যান্ডমাস্টার তো কেউ হঠাৎ করে হয়ে যাবে না’
পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের অংশগ্রহণে পরশু শেষ হয়েছে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমানদের পেছনে ফেলে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশের দাবা নিয়ে।
পাঁচ বছর পর আবারও জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হলেন। কেমন লাগছে?
এনামুল হোসেন: অবশ্যই ভালো লাগছে। অনেক দিন পর দেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টার এখানে খেলেছে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতার মধ্যে এটাকে তাই অন্যতম কঠিন চ্যাম্পিয়নশিপ বলতেই হবে। এখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বিশাল চ্যালেঞ্জের ছিল। আমি ছাড়া অন্য চারজনের যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারত। আমাদের সবার মান মোটামুটি কাছাকাছি। ওদের ছাড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি বলে খুশি। তা ছাড়া এবার খেলা হয়েছে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। সুইস লিগে খেলা হলে হয়তো অনেকের সঙ্গে খেলাই পড়ত না। এ জন্যও বুঝতে পেরেছি, খেলাগুলো কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে।
১৯৯৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এরপর চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২০০৬, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে। নিজের পারফরম্যান্সে কি ধারাবাহিকতার অভাব দেখেন?
এনামুল: এটা সত্যি, আমার পারফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারত। কিন্তু ২০০৯ সালের পর অনেক দিন খেলিনি। দাবায় বিরতি পড়লে আবারও আগের মতো পারফরম্যান্সে ফেরা অসম্ভব। তবে ফিরেই পরপর দুবার (২০১৬ ও ২০১৭ সালে) চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
খেলার মান বাড়াতে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন?
এনামুল: আমরা যারা গ্র্যান্ডমাস্টার পর্যায়ের দাবাড়ু, তারা ওপেনিং নিয়ে বেশি চর্চা করি। অন্যান্য ট্যাকটিকসও আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করি। এখন বেশির ভাগ সময় কম্পিউটারে চর্চাটা হয়। তা ছাড়া ভিডিওতে সবকিছু চলে এসেছে, সেগুলো দেখি। দাবার কিছু সফটওয়্যার আছে। সেগুলোর মাধ্যমে চালগুলো বিশ্লেষণ করি—কোথায় ভুল করলাম। কীভাবে নতুন চাল দেওয়া যায়, সেই গবেষণাও করি।
বড় ম্যাচ খেলার আগে আপনার মানসিক প্রস্তুতিটা কেমন থাকে?
এনামুল: আমি মানসিকভাবে অনেক শক্ত একজন দাবাড়ু। অনেকে দাবায় মনোযোগ বাড়ানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করে। কিন্তু আমি মনে করি, আমার নার্ভ অনেক শক্ত। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লড়াই করে আমি ভালোভাবে বের হয়ে আসতে পারি।
২০০৮ সালে বাংলাদেশের সর্বশেষ গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন আপনি। এরপর আর কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার উঠে আসছেন না কেন?
এনামুল: গ্র্যান্ডমাস্টার দাবার সর্বোচ্চ খেতাব। কিন্তু আগে দেখতে হবে ফিদে মাস্টার বা আন্তর্জাতিক মাস্টার তৈরি হচ্ছে কি না। দাবাড়ু তৈরি করার জন্য আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। গ্র্যান্ডমাস্টার তো কেউ হঠাৎ করে হয়ে যাবে না। এ জন্য দাবায় বিনিয়োগ করতে হবে। বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে, টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। দাবা খেলে ছেলেমেয়েরা যাতে ভালো একটা অবস্থায় যেতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেটা ভারতে আছে। এসব করলেই খেলোয়াড় আসবে। গ্র্যান্ডমাস্টারও হবে। তা ছাড়া ঢাকার মধ্যে এখন বেশি সুবিধা পায় সবাই। ঢাকার বাইরে কেউ জানেই না কীভাবে অনুশীলন করতে হবে। দাবা খেলাটা পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
এবারের জাতীয় দাবায় নতুন খেলোয়াড়েরা কেমন করেছেন?
এনামুল: তাহসিন (তাহসিন তাজওয়ার), নাঈম (নাঈম হক), সুব্রত (সুব্রত বিশ্বাস) সবাই খুবই ভালো করেছে। ওরা উঠতি খেলোয়াড়। মেয়েদের টুর্নামেন্টগুলোতেও সেরা চার–পাঁচজন ছিল নতুন মুখ। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে ওদের ভালো করার অনেক সুযোগ আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মাস্টার কম, এদের মাধ্যমে সেটা বাড়ানো সম্ভব। ওদের সেই মেধা আছে।