মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানো ফুটবলের জন্যই ভালো খবর

ফুটবল মাঠে ক্ষয়িষ্ণু মোহামেডান আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর ক্লাবে সাংগঠনিক পরিবর্তনের ফল মিলছে। সর্বশেষ বিরতির আগে টানা তিন জয়ে প্রিমিয়ার লিগে সাদা-কালোরা যৌথভাবে এখন তিনে। সুযোগ তৈরি হয়েছে লিগ রানার্সআপ হওয়ার। মোহামেডানের এই রূপান্তর দেশের ফুটবলের জন্যই ইতিবাচক বার্তা। কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকা ফিরে প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সে কথাই বললেন সাদা-কালোর এই পরিবর্তনের অন্যতম রূপকার কোচ শন লেন—

মোহামেডানের কোচ শন লেন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষে আপনি যখন এলেন, মোহামেডান নিচের দিক থেকে দুইয়ে। অবনমনের শঙ্কা জাঁকিয়ে বসেছে তখন। সেই মাথা তোলা মোহামেডানকে দেখে আপনার কেমন লাগে?

শন লেন: এটা খুবই আনন্দের। আমি এসে লিগের দ্বিতীয় পর্বে সম্ভবত ১৯-২০ পয়েন্ট পেয়েছিলাম। সেবার ২৫ পয়েন্ট পেয়ে মোহামেডান লিগে নবম হয়েছিল।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: ২০২০ সালে করোনায় পরিত্যক্ত হওয়া লিগেও মোহামেডান ভালো করছিল। ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চারে। যেখানে বসুন্ধরার পয়েন্ট ছিল ১০...

শন লেন: সেই লিগটা হলে আমরা ভালো করতাম। কিন্তু করোনায় লিগ হলো না। এরপর খেলা শুরু হলে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল উঠি আমরা। লিগে ১৫ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে এখন শেখ রাসেলের সঙ্গে যৌথভাবে তিনে। ৩২ পয়েন্ট নিয়ে আবাহনী ও শেখ জামাল যৌথভাবে দুইয়ে। আর ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে অনেকটা এগিয়ে বসুন্ধরা কিংস। আমাদের এই উত্তরণে নতুন আশা তৈরি হয়েছে মোহামেডান সমর্থকদের মনে।

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর মোহামেডান আবার নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি যখন আসি ক্লাব ফুটবলে অবনমনের পথে ছিল। এখন মোহামেডান ক্লাবে নতুন জিম সরঞ্জাম এসেছে। নতুন মেডিকেল রুম হয়েছে। সেখানে সরঞ্জাম বেড়েছে।
শন লেন, মোহামেডানের কোচ

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: নেতৃত্বের দুর্বলতায় মোহামেডান ডুবতে বসেছিল সাম্প্রতিক বছরে। লিগে একবার অবনমিত হতে হতে বেঁচে গেছে, যা ছিল ক্লাবটির জন্য চরম লজ্জার। সেই অবস্থা থেকে আজকের এই উত্তরণকে কীভাবে দেখছেন?

শন লেন: মোহামেডানে এই ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যই বড় এক সুসংবাদ। মোহামেডান ভালো করা মানে দেশের ফুটবলে নতুন আশা।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: অনেকে বলছেন, মোহামেডানের পক্ষে এখন লিগ রানার্সআপ হওয়াও সম্ভব?

শন লেন: অবশ্যই সম্ভব। তবে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জও আছে। আমাদের ধারাবাহিক থাকতে হবে। আমরা বিরতির আগে আরামবাগের সঙ্গে ২-১ গোলে জিতলেও ম্যাচটায় মোটেও ভালো খেলিনি। শেখ রাসেলের সঙ্গেও জেতা ম্যাচটায় অনেক সমস্যা ছিল। আগামী ২২ জুন লিগ আবার শুরুর দিনে আবাহনীর সঙ্গে ম্যাচ, ২৬ জুন বসুন্ধরার সঙ্গে। এই দুটি ম্যাচ নিয়ে আগামী চার সপ্তাহ কাজ করব।

মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোটা চলছে লেনের হাত ধরেই।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো-কাণ্ডের আগে-পরের মোহামেডান এক নয়। কাজ করতে করতে কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?

শন লেন: সত্যি বলতে, বিশাল পরিবর্তন দেখছি। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর ক্লাব নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি যখন আসি ক্লাব ফুটবলে অবনমনের পথে ছিল। এখন মোহামেডান ক্লাবে নতুন জিম সরঞ্জাম এসেছে। নতুন মেডিকেল রুম হয়েছে। সেখানে সরঞ্জাম বেড়েছে।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: নতুন পরিচালনা পর্ষদ এসেছে মোহামেডানে। কেমন সমর্থন পাচ্ছেন?

শন লেন: নতুন নেতৃত্ব বুঝতে পারছে কোথায় টাকা খরচ করা দরকার। মোহামেডানের অর্থের প্রবাহ বেড়েছে অনেক। এটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখছি ক্লাবটিতে। ক্যাসিনোর আগে অর্থসংকটে অনেক কিছুই করা যেত না। এখন করা হচ্ছে।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: সেটা কেমন?

শন লেন: মোহামেডান সাংগঠনিকভাবে শতভাগ শক্তিশালী হয়েছে। ফুটবল চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর সাহেব, সম্পাদক আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স দারুণভাবে সহায়তা করছেন। ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। মেডিকেল স্টাফেরা সঠিক দায়িত্ব পালন করায় ৩০ খেলোয়াড়ের মধ্যে আমাদের মাত্র একজনের চোট এখন।

মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যই ভালো খবর
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: আপনি সম্প্রতি ঢাকায় না থেকেও অস্ট্রেলিয়ার বাড়ি থেকে দলের সবকিছু দেখভাল করতেন। অর্থাৎ না থেকেও ছিলেন দলের সঙ্গে...

শন লেন: টিম ম্যানেজমেন্টকে প্রতিদিনই নির্দেশনা দিতাম। প্রতিদিন খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতাম ম্যাচ শুরুর আগে। ম্যাচের বিরতির সময়ও হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতাম। টিভিতে ম্যাচ দেখতাম। সহকারী কোচ আলফাজ সবকিছু ভালোভাবে এগিয়ে নিয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: মোহামেডানকে কোথায় নিতে চান আগামী দিনে?

শন লেন: এবার লিগে দুইয়ে থাকতে পারলে এএফসি কাপে খেলার সুযোগ আসবে। আপাতত সেটাই আমার লক্ষ্য।