'ম্যানচেস্টার এখন বেশি আকাশি-নীল'

সার্জিও আগুয়েরো
সার্জিও আগুয়েরো

প্রিমিয়ার লিগে এবার গোল করেই চলেছেন সার্জিও আগুয়েরো। দারুণ ফর্মে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কয়েক দিন আগে কথা বলেছেন বিশ্বখ্যাত ফুটবল সাময়িকী ফোরফোরটুর সঙ্গে। সেই সাক্ষাৎকার সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়া হলো এখানে...
লোকজন বলে মাঠে আপনি যেন ঠিক জাদুকর। তা আপনার প্রিয় কৌশল কোনটি?
সার্জিও আগুয়েরো: ওহ্, না। আমার কোনো জাদুর কৌশল নেই। আমার ধরন হলো কোনো ডিফেন্ডারকে ওয়ান-টু-ওয়ান পজিশনে পরাস্ত করা ও দেখা এরপর কী হয়। আমি ড্রিবল করতে পছন্দ করি, আর এগুলো কাজেও লাগে। আর কোচরাও সব সময় বলে নিজেকে প্রকাশ করতে।
আপনি কি সত্যিই জাদু জানেন?
আগুয়েরো: না, জানি না। আমি টেলিভিশন ও মঞ্চে এগুলো দেখলেও কীভাবে জাদু দেখানো হয় সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই। তবে আমি আমার ছেলেকে কিছু (জাদু) দেখানোর চেষ্টা করি কিন্তু ‘বড় মানুষের’ কাছে এগুলো দেখিয়ে পাত্তা পাওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই।
অনেকে আপনাকে লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে তুলনা করেন...
আগুয়েরো: প্রথমত, সে একজন গোলস্কোরার। এবং আমি মনে করি মাঠে আমার চেয়ে সে ভিন্ন ধরনের খেলোয়াড়। আমি তাকে ৯ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবেই দেখি। যদিও আয়াক্সে সে সব সময় সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেনি। সব সময়ই মনে হয় সে গোল পাবে। অন্যদিকে আমি এই মৌসুমের আগে বেশির ভাগ সময়ই দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছি। এবার আমি আরেকটু সামনে খেলার চেষ্টা করছি এবং বেশি গোলও পাচ্ছি। মনে হচ্ছে কৌশলটা কাজে লেগেছে। অবশ্য সেও ড্রিবল করতে পছন্দ করে, আমাদের দুজনের মিল বলতে এটাই।

অনেকেই তো আবার আপনাকে প্রিমিয়ার লিগের মেসি ও রোনালদো বলে...
আগুয়েরো: আমি? (একটু ধাতস্থ হয়ে) তবে আমি মেসি ও রোনালদো নয়, বলব দুই মেসি! আমরা দুজনই মেসি। আমি বলতে চাচ্ছি আমি তার মতোই হতে চাইব কারণ আমিও আর্জেন্টাইন। তবে সেও দক্ষিণ আমেরিকান ও ড্রিবল করতে পছন্দ করে, তাই কেন আমরা দুজন হতে পারব না? এটা কি প্রশ্নের উত্তর হলো? সম্ভবত না!
সাক্ষাৎকারে তো মজা করছেন, ছবি তোলার সময়ও মজা করেন। আপনি কি সব সময়ই হাস্যোজ্জ্বল থাকেন?
আগুয়েরো: হ্যাঁ, আমি এমনই। আমি যখন স্কুলে যেতাম শিক্ষকেরা প্রায়ই বলতেন, ‘ওকে, ওকে সার্জিও। যথেষ্ট হয়েছে, এবার এক মিনিটের জন্য সিরিয়াস হও।’ আমি হাসতেই থাকতাম। একটু জোকার টাইপ আর কী! মাঠে আমি সব সময় হাসি না, তবে আমি তারিয়ে উপভোগ করি সবকিছু, এটা আমার সেরাটা বের করে আনে।
আপনি গোল করেই যাচ্ছেন। নিজেকে কি গানস্লিঙ্গার কিংবা মার্কসম্যান ভাবেন?
আগুয়েরো: গোলের সামনে এই মৌসুমটা অবশ্যই আমার ভালো কাটছে। কেন? সেটা বলা কঠিন। আমার মনে হয় আমি আগের চেয়ে একটু আগেভাগেই শট নিচ্ছি। আমার আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। গোলের হিসাবে এটাই আমার সেরা মৌসুম, শুধু খেলা ধরলেও। আমার এই গোল করায় সতীর্থদের অনেক অনেক অবদান। সিলভা, নাসরি, নাভাস ও ইয়াইয়াকে নিয়ে আমাদের মিডফিল্ডটা অসাধারণ।
এটা বলা হয় একমাত্র রিভলভার দিয়েই আপনাকে থামানো সম্ভব...
আগুয়েরো: (হেসে) কে বলেছে? তাঁকে পেয়ে নিই! দেখুন, মানুষ আমাকে লাথি মারে, ডিফেন্ডাররা তো লড়াই করার জন্য মুখিয়েই থাকে। তবে আপনাকে এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে ও মনোযোগ ধরে রাখতে হবে যাতে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ না হারাই। এগুলো তাদের আরও রাগিয়ে দেবে। এখানে প্রিমিয়ার লিগে ডিফেন্ডাররা বেশ শক্তিশালী ও শরীরনির্ভর। তাই কাজটা সহজ নয়, তবে আত্মবিশ্বাস থাকলে সবকিছুই ঠিকঠাক হবে।
ম্যানচেস্টার কি এখন ‘নীল’?
আগুয়েরো: যখন থেকে আমি এখানে আছি তখন থেকেই। আমি বলব শহরটা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আকাশি-নীল! এটা ঠিক আমাদের আকাশটাকে পুরোপুরি নীল করতে এই মৌসুমে আরও একটি ম্যাচ খেলতে হবে! আমাদের জন্য শিরোপাদৌড়ে ওই ৩ পয়েন্টই আসল। সমর্থকদের জন্য এই ম্যাচগুলো একটু বেশি কিছু। অনেক মানুষ, আমি বলব ৭০-৮০ ভাগ মানুষই খুশি থাকবে যদি আমরা লিগ চতুর্থ হই, কিন্তু ইউনাইটেডকে হারাই। তবে আমরা খেলোয়াড়েরা লিগ জিততে চাই এবং সেটা না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই থামাতে চাই না। তবে কিছু সমর্থক শুধু ইউনাইটেডের ম্যাচ নিয়েই ভাবে। ডার্বিগুলো আসলেই সবার জন্য দারুণ এক উপলক্ষ।ছোটবেলার কথা কিছু বলুন...
আগুয়েরো: ছেলেবেলায় মাথায় সারাক্ষণ একটা চিন্তাই ঘুরপাক খেত, কখন বাইরে গিয়ে ফুটবল খেলব। আমাদের বাড়ির পাশে ছোট একটা মাঠ ছিল, ওখানেই খেলতাম। বন্ধুদের সঙ্গে খেলে শিখেছি কীভাবে লড়াই করতে হয়। একসময় আমাদের পরিবারের কিছুই ছিল না, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ফুটবল দিয়েই আমি কাছের মানুষদের অবস্থার উন্নতি করেছি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ইন্দিপেনদিয়েন্তের হয়ে অভিষেক। ওই ম্যাচের কিছু মনে আছে?
আগুয়েরো: তেমন কিছু না! আমি খুব ছোট ছিলাম, তবে মনে আছে বেঞ্চে বসে আশা করছিলাম খেলার সুযোগ পাওয়ার। এটা পাগুলে একটা ব্যাপার ছিল, আমি সত্যিকারের ফুটবল খেলার জন্য প্রস্তুতি নিইনি। আমি তখন বয়সভিত্তিক দলে খেলার কথাই ভাবতাম। ইন্দিপেনদিয়েন্তেই আমার শুরু, আশা করছি অবসরটাও ওখানেই নেব।
আপনি বলেছিলেন ফিফা গেম খেলার সময় মেসি আপনার সঙ্গী হতো। এটা কি সত্যি?
আগুয়েরো: হ্যাঁ, তবে অনেক দিন হয়ে গেল দুজন একসঙ্গে খেলি না। অন্য সবকিছুর মতো এখানেও সে-ই ভালো খেলত!
আপনি মেসির সঙ্গে অনেক খেলেছেন। অভিজ্ঞতাটা বলবেন কি?
আগুয়েরো: সে চমৎকার, ফুটবলটাকে সে সহজ বানিয়ে ছেড়েছে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলার সুবিধা অনেক। সে মাঠে সমস্যাগুলো যেভাবে সমাধান করে সেটা খুব কম লোকই চিন্তা করতে পারে।
সবশেষে তিন শব্দে নিজেকে বর্ণনা করুন
আগুয়েরো: তিন শব্দে? ঠিক আছে...মজার, ধীরস্থির ও চমৎকার এক ছেলের সুখী এক বাবা।