সিইও হয়ে মাস্টার্স করেছি

মমিনুল ইসলাম
মমিনুল ইসলাম

ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ছিলাম। এরপর আইবিএ থেকে বিবিএ করেছি। আইপিডিসিতে সিইও থাকা অবস্থায় পরে আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করি। মাস্টার্স করার ব্যাপারটা একটা কাকতাল বা দুর্ঘটনা বলা যায়। আমার এক বন্ধু ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সে একবার আমাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাবেলা ফিন্যান্সের ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব করল। তো আমি বললাম হ্যাঁ, ঠিক আছে। ও বলল, তোমার সিভিটা পাঠিয়ে দাও।

সিভি পাঠানোর পর দুই সপ্তাহ হলো, সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। আমিই ফোন করলাম। ও বলল, একটু অসুবিধা হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যদি এক্সিকিউটিভ এমবিএদের পড়াতে হয়, তাহলে অন্তত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। আমার তখন স্নাতকোত্তর ছিল না, কখনো দরকারও হয়নি। কিছুটা অপদস্থ হলাম। আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি হয়ে যাই, সেখানে কিনা আমাকে ক্লাস নিতে দেবে না!

আমার জন্য খুব সহজ হতো যদি এমবিএ করতাম। কিন্তু আমি একটু কঠিন পথের দিকে গেলাম, যেটা আমার ভালো লাগার জায়গা কিংবা আমার কাজের সঙ্গে কিছুটা সম্পর্কও আছে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম সেমিস্টারেই খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনটা কোর্স নিয়ে ফেললাম। কিন্তু কাজের চাপ সামলে পড়ালেখা করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তখন মাথার মধ্যে একটা ওয়ার্নিং বেল বেজে উঠল। আইপিডিসিতে যারা আমার টিম মেম্বার, তারা সবাই জানে যে তাদের বস অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছে। অতএব কোনোভাবেই ড্রপআউট হওয়া যাবে না!

আমি মনোযোগ দিতে শুরু করলাম। ছোটবেলা থেকে কখনোই ভালো ছাত্র ছিলাম না, কিন্তু রেজাল্ট ভালোই হতো। কারণ আমি কৌশলটা জানতাম। আমি জানতাম, কীভাবে সবচেয়ে কম পড়ে মোটামুটি সব বিষয়ে ভালো করা যায়। কিন্তু এবার জীবনে প্রথমবারের মতো আমি ‘সিরিয়াস স্টুডেন্ট’ হয়ে উঠলাম। অনেক রাত নির্ঘুম কাটাতে হলো। ছুটির দিনগুলোতে পারিবারিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হলো। ১২টা কোর্স করলে আমর মাস্টার্স হয়ে যেত, কিন্তু এত মজা পেয়ে গেলাম যে অতিরিক্ত আরও ৫-৬টা কোর্স করে ফেললাম। একসময় আমার স্ত্রী খুব হতাশ হয়ে বলল, ‘এবার থামো। নইলে সংসার আর এগোবে না।’

অতএব থামলাম। ডিগ্রির জন্য আবেদন করলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে যেই ফলাফল এল, তাতে দেখলাম আমার ব্যাচে আমি ভ্যালিডিক্টোরিয়ান হয়েছি। ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদকও পেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হলো, এর পরের বছর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ম করে, সিইও হতে হলে মাস্টার্স থাকতে হবে।