কল ড্রপ ও নেটওয়ার্কের সমস্যা একটি বড় সংকট

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার
ফাইল ছবি

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মুঠোফোনে কল ড্রপ ও নেটওয়ার্কের সমস্যা একটি বড় সংকট। এমন কেউ নেই, যিনি কল ড্রপের শিকার হননি। অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর গ্রাহকসংখ্যা অনেক বেড়েছে। গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৮ কোটির বেশি, রবির গ্রাহক ৫ কোটির বেশি। গ্রাহক অনুযায়ী অপারেটরগুলোর যে পরিমাণ বেতার তরঙ্গ নেওয়া দরকার, তারা তার তিন ভাগের এক ভাগও নেয়নি। সরকারের চাপে গত মার্চে তরঙ্গ বাড়িয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই তরঙ্গ সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ করা হলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো তরঙ্গ সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা করার সুযোগ আছে। মন্ত্রী বলেন, জরিমানা বা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে কোম্পানিগুলো আদালতের দারস্থ হয়।

সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, গ্রামীণফোনের অডিট আপত্তির টাকার পরিমাণ ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা। এর মধ্যে তারা পরিশোধ করেছে দুই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা। রবি আজিয়াটার অডিট আপত্তির টাকার পরিমাণ ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ টাকা। এর মধ্যে তারা ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। তাদের বকেয়া ৭২৯ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ টাকা। প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকমের (সিটিসেল) বকেয়া ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকা। টেলিটকের কাছে বকেয়া ১ হাজার ৬৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

টেলিটকের বকেয়ার মধ্যে ৩জি স্পেকটার্ম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ইক্যুইটিতে কনভার্সনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। গ্রামীণফোন, রবি ও সিটিসেলের বকেয়া নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান বলেও মন্ত্রী জানান।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০১২ সালে দেশে মোবাইল গ্রাহক ছিল ৮ কোটি ৬৬ লাখ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৮ কোটি ৩৪ লাখ। মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০১২ সালে দেশে থ্রিজি ও ফোরজি সেবা ছিল না। বর্তমানে থ্রিজি গ্রাহক ৩ কোটি ১৯ লাখ এবং ফোরজি মোবাইল গ্রাহক ৭ কোটি ৫৪ লাখ। ২০১২ সালে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ২ কোটি ৮৯ লাখ। ২০২২ সালে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়ে হয়েছে ১২ কোটি ৪২ লাখ। ২০১২ সালে দেশে টেলিডেনসিটি ছিল ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ, এখন টেলিডেনসিটি ১০৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১২ সালে ইন্টারনেট ডেনসিটি ছিল ১৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

সরকারি দলের সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার বেশি থাকায় সব অপারেটরের একই কলরেট নির্ধারণ করা হলে গ্রামীণফোনের সেবার প্রতি গ্রাহক আকর্ষণ বেড়ে যাবে। ফলে তাদের মার্কেট শেয়ার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ অবস্থায় ছোট অপারেটরদের মার্কেটের অবস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খালেদা খানমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার ৬০০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈঠকে ডিজিটালি অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন না করলে করোনাকালে গত দুই বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কার্যক্রম, বাণিজ্যিক কার্যক্রম এমনকি বিচারিক কার্যক্রম করা সম্ভব হতো না।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জানতে চান গত সাত বছরে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তাদের কতজন বিদেশ সফর করেছেন, এতে কত ডলার খরচ হয়েছে এবং বিদেশ সফর থেকে কর্মকর্তারা কী অর্জন করেছেন। জবাবে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে এসব তথ্য জানানো সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য নোটিশ দিলে তিনি বিস্তারিত জবাব দেবেন বা ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেবেন।