শীত জাঁকিয়ে বসেছে পুরো দেশে। কুয়াশার চাদর ভেদ করে বাইকের হেডলাইট জ্বালিয়ে খুব বেশি দূর চোখ যায় না। ফলে ব্যস্ত রাস্তায় বাইক চালানোর সময় বেশ সতর্ক থাকতে হয় চালকদের। মুহূর্তের অসতর্কতায় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে বাইকে ব্যবহার করা উচিত ‘ফগলাইট’। এতে থাকা বাল্বের আলো কুয়াশা ভেদ করে অনেক দূর পর্যন্ত যাওয়ায় নিরাপদে বাইক চালানো যায়।
শীতকালে কুয়াশা ভেদ করার পাশাপাশি ধুলোবালিতে রাস্তায় পথ চলতেও বেশ কাজে লাগে ফগলাইট। সামনের পথ ভালোভাবে দেখতে সাহায্য করার পাশাপাশি বিপরীত দিকে থাকা যানবাহনকেও সতর্ক করে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যায়।
কোথায় বসবে ফগলাইট
গাড়িতে ফগলাইট ব্যবহারের জন্য আলাদা চেম্বার থাকলেও বাইকে থাকে না। ফলে অনেকেই হেডলাইটের মধ্যেই যুক্ত করেন। কিন্তু এমনটি করা যাবে না মোটেও। কারণ, কুয়াশাভেদী এ বাল্বের আলো সব সময় দরকার হয় না। তাই মূল হেডলাইটের সঙ্গে এ বাল্ব ব্যবহার না করে আলাদাভাবে বসানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মানতে হবে নিয়ম
ফগলাইট বসানোর আগে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। ফগলাইট এমনভাবে বাইকে যুক্ত করতে হবে, যেন বিপরীত দিকের চালকের চোখে এই আলো না পড়ে। সে জন্য বাইকের বাম্পারে (আঘাত থেকে রক্ষা করার কাঠামো বিশেষ) অথবা বাইকের দুই পাশের শক্ত কাঠামোতে এই লাইট বসানো উচিত। ফগলাইটের আলো বেশ উজ্জ্বল হওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।
ব্যাটারিতে চলবে তো ফগলাইট
সাধারণ হেডলাইটের চেয়ে ফগলাইটে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ জন্য ফগলাইট কেনার আগে জানতে হবে এতে থাকা বাল্বগুলো কত ভোল্টেজে চলে। বাইকে থাকা ব্যাটারি ফগলাইট সমর্থন করবে কি না, তা–ও জানতে হবে। ব্যাটারির ওপর চাপ কমাতে অবশ্যই রিলেসহ ফগলাইট ব্যবহার করা উচিত।
জানতে হবে ফগলাইটের আলোর দূরত্ব
আলোর দূরত্ব জানতে লুমেন একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লুমেন আলোক ফ্লাক্স এর এসআই একক, যা ব্যবহার করে উৎস থেকে আসা আলোর মোট পরিমাণ জানা যায়। তাই সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার লুমেন এবং ৪ হাজার থেকে ৬ হাজারকে সাদা আলোর ফগলাইট ব্যবহার করলে কুয়াশার মধ্যে স্বচ্ছন্দে পথচলা যাবে। মনে রাখতে হবে, ফগলাইট যেহেতু বাইকের বাইরে থাকে, তাই সেটি ধুলোবালি এবং পানিরোধক না হলে বেশি দিন টিকবে না। তাই কেনার সময় আইপি৬৫ রেট দেখে ফগলাইট কেনা দরকার।
একটি না দুটি
কয়টি ফগলাইট যুক্ত করবেন, তা আপনার চোখের দৃষ্টিক্ষমতা এবং বাইকের গতির ওপর নির্ভর করে। যদি স্পোর্টস ঘরানার বাইক হয়, সে ক্ষেত্রে দুটি ফগলাইট রাস্তার অনেক দূর পর্যন্ত দৃশ্যমান করতে পারে। সাধারণ বাইকের ক্ষেত্রে ভালো মানের একটি ফগলাইটই যথেষ্ট।
পাওয়া যাবে কোথায়
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফগলাইট পাওয়া যায়। ট্যাসলাইট এক্স ২২ নামের ফগলাইট আমদানিকারক ট্যাসলকের ব্র্যান্ড প্রধান ওয়াহেদ রেজা রোমেল জানান, ট্যাসলাইট এক্স ২২–এর অপারেটিং ভোল্টেজ ১০-৮০ ভোল্ট। তাই বাইকের ব্যাটারিতে আলাদা কোনো চাপ পড়ে না। ফগলাইটে থাকা বাল্বের তাপমাত্রাও মাথায় রাখতে হবে। হংকংয়ে তৈরি এই ফগলাইটগুলোতে অ্যালুমিনিয়াম রেডিওয়েটর থাকায় দীর্ঘক্ষণ জ্বললেও সহজে গরম হয় না। জ্বালানো অবস্থায় বাল্বটির তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এ জন্য আইপি ৬৫ সনদও পেয়েছে এই ফগলাইট।
এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবাসহ ট্যাসলাইট এক্স ২২–এর দাম ২ হাজার ২৫০ টাকা। এক জোড়ার দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা। এক্স ২২–এর কর্মকাল ৬০ হাজার ঘণ্টা। এ ছাড়াও বাজারে ক্রিটুলাইট, এ সেভেন প্যাসিফিক/ ক্রি/ এইচজেসি, এইচজেসি কেজেড৩০, এফএনএম সিঙ্গেল, এলফোরএক্স, এলসিক্সএক্স, এল নাইট নামের ফগলাইটগুলো ৮০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।
মনে রাখা ভালো
যেসব বাইকের স্টার্টার কিক থাকে না, সেসব বাইকে ফগলাইট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ভারী কুয়াশা, অতিরিক্ত ধুলাবালি, রাতের মহাসড়ক ও পাহাড়ি রাস্তায় চলার জন্য শুধু ফগলাইট ব্যবহার করা হয়। শহরে এ লাইটের তেমন প্রয়োজন হয় না। তাই প্রয়োজন ছাড়া ফগলাইট জ্বালানো উচিত নয়। এতে বাইকের ব্যাটারির স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, তেমনি বিপরীতে থাকা চালক এবং পথচারীরও সমস্যা হবে না।