ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশু

অলংকরণ: রাকিবুর রহমান

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা খন্দকার মিনহাজ ইসলাম অনলাইনে পশু ক্রয় করেছেন। কোরবানির সময় হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝক্কিঝামেলা অনেক। নগদ টাকা বহন, গরু কেনার পর বাসায় নিয়ে আসা, গরু সুস্থ কি না ইত্যাদি! তাই প্রতিবার গরুর কেনার ঝামেলা করতে করতেই ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যায়। খন্দকার মিনহাজ ইসলামের মতো অনেকেই কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে ভরসা রেখেছেন অনলাইন বাজারে।

ডিজিটাল হাট

সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের এটুআই-একশপ এবং ইকমাসং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) আয়োজনে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে ডিজিটাল কোরবানি হাটে (digitalhaat.gov.bd)। ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ জানান, এবারের ডিজিটাল হাটে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে থাকা হাটগুলো যুক্ত করা হয়েছে। ই-ক্যাবের মাধ্যমে ৬৮ জন উদ্যোক্তাকে সরাসরি ডিজিটাল হাটে যুক্ত করা হয়েছে।

লাইভ ওজনের মাধ্যমে ডিজিটাল হাটে গরু বিক্রি করা হচ্ছে। হাটে গরুর দাম ধরা হয়েছে প্রথম ৪০০ কেজি ওজন পর্যন্ত প্রতি কেজি ৪৭৫ টাকা, ৪০১ থেকে ৫০০ কেজি ৫২৫ টাকা এবং ৫০১ কেজি থেকে ৬০০ কেজি পর্যন্ত ৫৭৫ টাকা করে।

মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ডিজিটাল হাট থেকে ক্রেতারা দুইভাবে পশু কিনতে পারবেন। প্রথমত ক্রেতা–বিক্রেতা নিজেরা যোগাযোগ করে। দ্বিতীয়ত এসক্রোর মাধ্যমে পশু ক্রয় করতে পারবেন, যাতে ক্রেতাদের টাকা জমা থাকবে। পশু সরবরাহ করার পর টাকা বিক্রেতার কাছে যাবে।

ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার জানান, ২০২০ ও ২০২১ সালে অনলাইন কোরবানি হাট হিসেবে ডিজিটাল হাট সফল হয়েছে। ২০২০ সালে ২৭ হাজার এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি করে মাইলফলক সৃষ্টি করেছে ডিজিটাল হাট। এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন।

ই-কর্মাস

বিভিন্ন ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান কোরবানি উপলক্ষে পশু বিক্রি করছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো কোরবানি দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে আপনার বাসায় মাংস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে।

বিক্রয় ডটকম (www.bikroy.com) কোরবানি উপলক্ষে তাদের ওয়েবসাইটে পশু বিক্রি করছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পশু কিনলে বিনা মূল্যে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিক্রয় ডটকমে গরু কেনাবেচায় রয়েছে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সুবিধা।

বেঙ্গল মিট (qurbani.bengalmeat.com) ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হালাল ও নিরাপদ কোরবানির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পশু কোরবানির শুরু থেকে মাংস আপনার হাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বেঙ্গল মিট নিয়ন্ত্রণ করে তাপমাত্রা ও মান।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদেক এগ্রোর রয়েছে নিজস্ব খামার। sadeeqagro.com/eiduladha ওয়েবসাইটে পশুর ছবি ও মূল্য দেওয়া আছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান কোরবানির পশু বিক্রি করছে।

ফেসবুকের মাধ্যমেও

করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এবারও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ফেসবুকে কোরবানির পশু বিক্রির দিকে মনোযোগী হয়েছেন খামারিরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে গরুর ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছেন। দেখে পছন্দ হলে বুকিং দিচ্ছেন ক্রেতারা।

সাভারের আশুলিয়ায় আরমা এগ্রিকালচার লিমিটেড নামের খামার বেশ কয়েক বছর ধরে অনলাইনে গরু বিক্রি করছে। এবার কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সেখানে বিভিন্ন জাতের ৭৫টি গরু সংগ্রহ ও প্রতিপালন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে আমরা খামারের গরু বিক্রি করে থাকি। আমাদের ফেসবুক পেজ রয়েছে। প্রতিটি গরুর ছবি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেজে আপলোড করি আমরা। পাশাপাশি গরুর টোকেন নম্বরও দেওয়া হয়। পছন্দ হলে খামারে গিয়ে গরু দেখে দরদাম করে কিনে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতারা।’

প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন পেজে গিয়ে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে বেশ বিক্রি হয়ে গেছে এবং সেগুলোতে ‘সোল্ড আউট’ লেখা। ফেসবুকে ঢুঁ মেরে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানেই পেজগুলো গরু বিক্রি করছে।

অনলাইনে দাম পরিশোধ

ঢাকার হাটে সব ধরনের ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে কোরবানির পশু কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’–এর উদ্যোগে সহজেই বিকাশ পেমেন্টে কোরবানির পশুর মূল্য ও হাসিল পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। রাজধানীর গাবতলী, বসিলা, আফতাবনগর, ভাটারা, কাওলা ও উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ক্যাশ টাকা ছাড়াই কোরবানির পশু কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিক্রেতাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ অফার। বিক্রেতারাও তাঁদের বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে আসা টাকা এজেন্ট থেকে খরচ ছাড়াই ক্যাশ আউট করতে পারছেন কিংবা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেয়ে যাচ্ছেন।

অনলাইনে কসাই

অনলাইনেই কসাই ডাকার সুবিধা নিয়ে এসেছে ইন্টারনেটভিত্তিক সার্ভিস প্লাটফর্ম সেবা ডটএক্সওয়াইজেড (sheba.xyz)। এ ছাড়া কসাই সাপ্লাই, কসাই জোন, কসাই মামুসহ বেশ কিছু পেজে কোরবানির সময় কসাই পাওয়া যায়। ফেসবুক লাইক পেজ ও অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রফেশনাল ও সেমিপ্রফেশনাল ভিত্তিতে কসাই সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গরুর মালিককে প্রতি হাজারে গুনতে হচ্ছে নির্দিষ্ট টাকা। আলোচনা সাপেক্ষে এটি কমবেশিও হচ্ছে। পশু কোরবানি ছাড়া শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের রয়েছে ক্লিনিং সার্ভিস। কোরবানি–পরবর্তী বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীও সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।