ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে: ওয়েবিনারে বক্তারা

‘কানেকটিভিটি ইজ আ ড্রাইভিং ফোস ফর এম্পাওয়ারিং এন্ট্রাপ্রেনিউরস’ স্লোগানে এ বিষয় নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে আয়োজন করা হয় ওয়েবিনার। ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন ইন্টারনেট সংযোগ, থ্রি–জি, ফোর–জি, ফাইভ–জি কীভাবে উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়িত করে। করোনার মধ্যে দেশে উদ্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইনে উদ্যোক্তারও সংখ্যা বেড়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে।

প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসানের সঞ্চালনায় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে কানেকটিভিটি ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা রহমান, খাসফুডের প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুল মুস্তাফা আরমান এবং গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মাদ সাজ্জাদ।

সঞ্চালক মুনির হাসান অনুষ্ঠানের শুরুতেই কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহাকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার, যা জনসংখ্যার প্রায় ২৮ শতাংশ। গত বছর এপ্রিলে ছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ। এর মানে ১ বছরের ৯৭ লাখ ৫৫ হাজার শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারী বেড়েছে। ইন্টারনেট বা ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে? সঞ্চালক মুনির হাসান কারণ জানতে চান গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মাদ সাজ্জাদের কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটা বড় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। ইন্টারনেটে বিকাশ বিভিন্ন খাতে ঘটছে। এটা বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনাসহ সবকিছুই ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুতেই একটা বদলের ছোঁয়া লেগেছে।

ফলে আমাদের কেনাকাটার ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। আগে আমাদের বাজার সম্পর্কে একটা ধারণা ছিল যে বাজারে গিয়ে দেখেশুনে কেনাকাটা করতে হবে। সেই ধারণার এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন কিন্তু কৃষক বা বিক্রেতার একটা ফেসবুক পেজ খুলে তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। ফেসবুকে অর্ডার দিচ্ছেন এবং তা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এভাবেই সারা বাংলাদেশে একটা বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। এখন যে কেউ দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু তাঁর দরকার একটা স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। আর কিছুর প্রয়োজন নেই। আগে কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন। এ জন্যই ইন্টারনেট বা ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা রহমানের কাছে মুনির হাসান জানতে চান, ইন্টারনেটভিত্তিক উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের জন্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে তরুণদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে? জবাবে ফারহানা রহমান বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক মেয়ে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন, এটা খুব ভালো খবর। এর অনেকগুলো কারণ আছে। আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নারীরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর থেকে কিন্তু আমাদের দেশ মহামারির মধ্যে আছে। ফলে সবাইকে ঘরের মধ্যেই থাকতে হয়েছে। এ সময় মানুষের কিন্তু কোনো কিছু করার ছিল না। তখন ফেসবুক একটি সঞ্জীবনী হিসেবে কাজ করেছে। এর মধ্যে প্রচুর মানুষ কিন্তু চাকরি হারিয়েছেন।

স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। আইটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এবং সেখানে যেসব মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, তাঁরা কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ শুরু করেছেন। আর নতুন কিছু করতে গেলে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায়ই এখন সহজলভ্য। এভাবে ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেক উদ্যোক্তা ফেসবুকে লাইভ করে পণ্য বিক্রি করেছেন। তাঁরা বেশ ভালো সংখ্যায় বিক্রি করেছেন।’

মুনির হাসান ফারহানা রহমানের সঙ্গে তথ্য যোগ করে বলেন, ‘ফেসবুকে লাইভ করে বিক্রি করার প্রবণতা কিন্তু এখন বিদেশেও দেখা যাচ্ছে। এটা সম্ভবত বাংলাদেশেই শুরু করা হয়েছে। আরেকটা জিনিস আমি দেখেছি, সেটা হলো ফেসবুকে পড়ানোর সংখ্যাও বেড়েছে।’

আলোচক খাসফুডের ফাউন্ডার হাবিবুল মুস্তাফা আরমান বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠান শুরুর একটা জরিপ করি। জরিপে বেশ কিছু ভালো তথ্য পাই। ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে বেশি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারব এবং আমরা বেশ ভালো সারা পেয়েছি এতে।’