হ্যাপটিকস বা স্পর্শকাতর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান হ্যাপ্টএক্স দাবি করেছে, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা তাদের প্রযুক্তি নকল করে গ্লাভস বা দস্তানা বানিয়েছে। মেটা সে গ্লাভস দেখিয়েছে মঙ্গলবার। মার্ক জাকারবার্গও সেটি ব্যবহারের ভিডিও পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। মেটার ভাষ্য অনুযায়ী, এই গ্লাভস হাতে থাকলে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় কোনো বস্তু স্পর্শের অনুভূতি মিলবে। কারও সঙ্গে করমর্দনও করা যাবে দূরে থেকে।
দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ভার্চ্যুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের প্রতিষ্ঠান হ্যাপ্টএক্স। তারা বলছে, গ্লাভসটির অংশবিশেষ হ্যাপ্টএক্সের সঙ্গে প্রায় মিলে যায়। নিউম্যাটিকস বা বায়ুবিদ্যা ব্যবহার করে স্পর্শের অনুভূতি অনুকরণে কাজ করে যাচ্ছে সে প্রতিষ্ঠান।
মেটা যদিও এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, তবে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায়সংগত সমাধানে পৌঁছাতে চাই।
হ্যাপ্টএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেক রুবিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মাইক্রোফ্লুইডিক হ্যাপটিকস নিয়ে কাজে আগ্রহ এবং প্রতিযোগিতাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এই খাত এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে। মেটা যদিও এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, তবে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায়সংগত সমাধানে পৌঁছাতে চাই, যা আমাদের শঙ্কা দূর করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পণ্যে আমাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি যুক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।’
জাকারবার্গের দেখানো গ্লাভসটি তৈরি করছে মেটার প্ল্যাটফর্মসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিয়েলিটি ল্যাবস। সেটি এখনো অসম্পূর্ণ। বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে চাইলে এখনো বছরের পর বছর লেগে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে রিয়েলিটি ল্যাবস মনে করে, ভবিষ্যতে ভার্চ্যুয়াল জগতে স্পর্শ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হবে।
রিয়েলিটি ল্যাবসের গ্লাভস পরে ব্যবহারকারী যদি ভার্চ্যুয়াল কোনো বস্তু হাতে নেয় তো চাপ ও ভর অনুভব করতে পারেন। গ্লাভসে যুক্ত থাকছে প্লাস্টিকের তৈরি ছোট ছোট মোটর, যা অ্যাকচুয়েটর নামে পরিচিত। বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাকচুয়েটরগুলোকে নাড়ানো যায়। হ্যাপ্টএক্সও একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তবে তাদের পণ্যগুলো মূলত প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের জন্য।
প্রায় চার বছর কাজ করার পর প্রথমে অ্যাক্সনভিআর নামে ২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে হ্যাপ্টএক্স। এদিকে মেটার গবেষকেরা গ্লাভসের প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি করেন ২০১৫ সালের মাঝামাঝি। সেটা ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অকুলাস কিনে নেওয়ার পরপর। সে থেকে বেশ এগিয়েছে মেটার গবেষণা। এদিকে হ্যাপ্টএক্স বলছে, মেটার কর্মীদের সঙ্গে তাদের প্রায়ই যোগাযোগ হয়। রুবিন তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত বছরগুলোতে মেটার অনেক প্রকৌশলী, গবেষক এবং নির্বাহীদের আমরা আমাদের হ্যাপটিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখিয়েছি।’
মেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নানা ধরনের ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি সফটওয়্যার অনৈতিকভাবে নকল করে তারা। আবার অন্যদের সফটওয়্যার মেটার ‘কোয়েস্ট’ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার সুযোগ সীমিত রেখেছে। হ্যাপ্টএক্সের ক্ষেত্রে অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ তারা সরাসরি পেটেন্ট ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে, যা শেষমেশ আইনি লড়াইয়ে রূপ নিতে পারে।