হেসেখেলে হেঁশেলে

এখনকার তরুেণরা রান্না নিয়েও নিরীক্ষা করেন৷ মডেল: মাহা, কর্ন ও সামির, ছবি: অধুনা
এখনকার তরুেণরা রান্না নিয়েও নিরীক্ষা করেন৷ মডেল: মাহা, কর্ন ও সামির, ছবি: অধুনা

‘তখন আমি মেসে থাকি৷ একবার বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম মাংস রান্না করব৷ মাংস কেনা হলো৷ কেউই রাঁধতে পারি না৷ একজন বুদ্ধি দিল, গরম পানিতে মাংস আগে সেদ্ধ করে নিতে৷ আরেকজন বলল একটু লবণ দেওয়া দরকার৷ কীভাবে কীভাবে যেন রান্না হলো৷ শেষ পর্যন্ত যেটা তৈরি হলো, সেটা খেতে ভালো না হলেও দেখতে ভালো হয়েছিল!’ হাসতে হাসতে প্রথম রান্নার অভিজ্ঞতা বলছিলেন অমিতাভ মজুমদার৷ ওয়াইড অ্যাঙ্গেল কমিউনিকেশন নামের একটি প্রোডাকশন হাউসে ভিডিও সম্পাদনার কাজ করেন, তবে রান্নায়ও তিনি কম পটু নন৷ নিয়মিতই ভালো রন্ধনশিল্পীর ‘সার্টিফিকেট’ পান বন্ধুদের কাছ থেকে৷ ‘কাবাবের নানা পদ আমি ভালো পারি৷ এ ছাড়া আমার রান্না করা “আচারি মাংসও” সবার খুব প্রিয়৷’ বাহ্! আচারি মাংস-শুনেই তো ছোঁচা পেটের ভেতর দু-চারেক বুকডন মেরে নিল! ‘কীভাবে রান্নাটা করতে হয়?’ প্রশ্ন শুনে অমিতাভের জবাব, ‘এগুলা হলো দুষ্টুমি রেসিপি!’ শখে রান্না করেন বলে অনেকটা মজা করতে করতেই নাকি রান্নাটা হয়ে যায়৷
অনেক তরুণের কাছেই রান্নাটা শখ৷ সুযোগ পেলেই তাঁরা রসুইঘরটাকে রীতিমতো পরীক্ষাগার বানিয়ে ফেলেন৷ এটার সঙ্গে ওটা, ওটার সঙ্গে সেটা মিশিয়ে চলে কোনো মজাদার খাবার ‘আবিষ্কারের’ চেষ্টা৷ কখনো খেতে ভালো হয়, কখনো হয় না৷ তবু, নিজের হাতে রান্না করার মজাটাই অন্য রকম৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্র মোহাইমেন আশরাফির বক্তব্য আবার ভিন্ন৷ তাঁর কাছে রান্না মোটেও ‘ফান’ নয়! নিজে ভোজনরসিক, তাই রান্নাবান্নার ব্যাপারে তিনি খুবই ‘সিরিয়াস’৷ ‘বন্ধুবান্ধব বাসায় এলে কিংবা সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে গেলে রান্নার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর৷ খিচুিড়, পোলাও, গরুর মাংস—সবই মোটামুটি ভালো রান্না করতে পারি৷ চিংড়ি মাছ, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম ভাজা ভাজা করে আমি সিজলিং টাইপের একটা জিনিস রান্না করি, এটা খুব মজা হয়৷ তা ছাড়া সব খাবারই একটু ঝাল ঝাল, মসলাদার হলে ভালো লাগে৷’ বলছিলেন তিনি৷
অমিতাভের মতো যাঁদের মেসে থাকার অভিজ্ঞতা আছে, রান্নার ব্যাপারে তাঁরা স্বশিক্ষিত৷ বিভিন্ন চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে বসেও অনেকে রেসিপিটা টুকে রাখেন৷ ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের ছাত্রী তামান্না ইসলামের মতো কেউ কেউ আবার রান্নার দীক্ষা নিয়েছেন মায়ের কাছ থেকে৷ ছোটবেলায় কখনো হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে খেলা না হলেও এখন রান্নার প্রতি তাঁর ভীষণ ঝোঁক৷ বলছিলেন, ‘আগে আম্মু একটু-আধটু দেখিয়ে দিতেন৷ এখন আমি নিজেই পারি৷ চীনা খাবার ভালো হয়৷ কিন্তু আম্মুর মতো সাধারণ খাবারগুলো যেমন বেগুনভর্তা, ডাল, ছোট মাছ মজা করে রান্না করতে পারি না৷’ সালাদ, পাস্তা, প্যাক কেক—এ ধরনের চটজলদি খাবার তৈরির প্রতি বেশ আগ্রহ দেখা যায় ‘শখের শেফ’দের৷ তরুণদের সঙ্গে যখন রান্নাবান্না নিয়ে আলোচনা চলছে, এরই মধ্যে আরেকজন সুরাঁধুিনর খবর পাওয়া গেল৷ তিনি স্বাগতা৷ শুধু সংগীতশিল্পী কিংবা অভিনয়শিল্পীই নন, পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে রন্ধনশিল্পী হিসেবেও তাঁর বেশ সুনাম৷ চটজলদি মুঠোফোনে যোগাযোগ হলো তাঁর সঙ্গে৷ ‘আমার রান্না ছোট ভাই সন্ধি খুব পছন্দ করে৷ বিশেষ কিছু যে রান্না করি, তা নয়৷ হাতের কাছে যা পাই, তা দিয়েও একটা কিছু করার চেষ্টা করি৷ মাঝেমধ্যে অতিথি এলেও রান্নার দায়িত্বটা আমি নিই৷ আমি যেহেতু পারি, মা কষ্ট করবে কেন? মাকে বলি, আমি রান্না করি, তুমি বসে বসে গল্প করো৷’ বললেন তিনি৷