
সৃজনশীল প্রশ্ন কমলাকান্তের জবানবন্দি
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা রইল। বাংলা ১ম পত্রের একটি সৃজনশীল প্রশ্ন এবং তার উত্তর দেওয়া হলো।
দৌলতপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তি দৌলত খাঁয়ের কুলখানি (চল্লিশা) উপলক্ষে দরিদ্রভোজন ও বস্ত্রদানের বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষাংশে খাদ্য-বস্ত্রের ঘাটতি দেখা গেল। এহসান মিয়া অগ্নিমূর্তি ধারণ করে চিৎকার করে উঠলেন, ‘হাজার লোকের আয়োজন, তেরোশকে খাওয়ালাম। গাঁয়ের সব লোকই দেখচি গরিব’ ষাটোর্ধ্ব রায়হান মিয়া জবাব দিলেন, ‘আমরা দীনহীন, তাতে সন্দেহ কী? দেখলাম এহসান মিয়ার বাড়ির দিকে কামলারা খাবারের ডেকচি আর কাপড়ের গাঁট্টি নিয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনে এহসান মিয়াই তো দীনের চেয়ে দীন। চলরে সবাই বাড়ি যাই।’
প্রশ্ন:
ক. ‘যজ্ঞোপবীত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?
খ. ‘বলি খাও কী করিয়া?’—সংলাপটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. কমলাকান্তের কোন বৈশিষ্ট্য রায়হান মিয়ার চরিত্রে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ওপরের অনুচ্ছেদটি ‘কমলাকান্তের জবানবন্দি’ রচনাটির ভাবার্থের দর্পণ। মন্তব্যটি যাচাই করো।
উত্তর: ক. ‘যজ্ঞোপবীত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ যজ্ঞসূত্র বা পৈতা।
উত্তর: খ. প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরু চুরির মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কমলাকান্ত নানাবিধ গোলযোগ সৃষ্টি করে। কমলাকান্তকে জেরা করতে গিয়ে উকিল বিরক্ত হয়ে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। বলি খাও কী করিয়া? এটির শব্দগত অর্থ, একজন মানুষ কী উপায়ে আহার গ্রহণ করে। কিন্তু সে উত্তর দিয়েছে, সে উকিল নয় যে তার পেশা থাকবে। উকিলের জিজ্ঞাসা ছিল, তার উপার্জনের উৎস কী। সংলাপটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে। তা ছাড়া সংলাপটিতে উকিলের বিরক্তি ও প্রচ্ছন্নভাবে কমলাকান্তের সামাজিক অবস্থানের প্রতি বিদ্রূপাত্মক ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
উত্তর: গ. বঙ্কিম রচিত কমলাকান্তের অসংলগ্ন কথাবার্তার আড়ালে যে মূল পর্যবেক্ষণশীল জীবন দৃষ্টি রয়েছে, রায়হান মিয়ার চরিত্রেও সে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরু চুরির মামলার সাক্ষ্য দিতে কমলাকান্ত আদালতে এসেছে। আফিমের নেশায় ঈষৎ অপ্রকৃতিস্থ কমলাকান্তকে জেরা করতে গিয়ে উকিল পদে পদে বিব্রত হন। কিন্তু সে নেশাখোর হলেও আদালত ও উকিল বাবুর জেরার অসংগতিগুলো তার পর্যবেক্ষণশীল দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। সে সব সত্য কথা বলে। উদ্দীপকের রায়হান মিয়ার চরিত্রেও এ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
কমলাকান্তের জবানবন্দি নকশা-জাতীয় রচনা। এটি বঙ্কিমের অন্যতম সম্পদ। এখানে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাক্ষী কমলাকান্তের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন আদালতে সাজানো-গোছানো যে গালভরা কারবার চলে, তা অধিকাংশই কৃত্রিম আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। উকিল বাবুর প্রশ্নের জবাবে কমলাকান্তের প্রচ্ছন্ন শ্লেষাত্মক উক্তির মাধ্যমে আমাদের সামনে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকেও তা-ই দেখা যায়। ধনাঢ্য দৌলত খাঁর চল্লিশা উপলক্ষে দরিদ্রভোজনের সঙ্গে বস্ত্রদানের বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন খাঁ সাহেবের ভাগনে এহসান মিয়া। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে খাদ্য ও বস্ত্রের ঘাটতি দেখা মিললে এহসান মিয়ার কটূক্তি শুনে রায়হান মিয়া জবাব দিলেন, ‘আমরা দীনহীন, তাতে সন্দেহ কী? দেখলাম এহসান মিয়ার বাড়ির দিকে কামলার খাবারের ডেকচি আর কাপড়ের গাঁট্টি নিয়ে যাচ্ছে।’ এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের অসংগতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কাজেই কমলাকান্তের স্পষ্টবাদিতা, সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশীলতা ও জীবন দৃষ্টি রায়হান মিয়ার চরিত্রেও বিদ্যমান।
উত্তর: ঘ. অনুচ্ছেদ ও ‘কমলাকান্তের জবানবন্দি’ রচনাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে সমাজ ও আদালতের অসংগতি স্পষ্ট।
কমলাকান্তের জবানবন্দি একটি নকশা-জাতীয় রচনা। এতে উকিলের জেরা ও সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরু চুরির মামলার সাক্ষী কমলাকান্তের জবানবন্দির মাধ্যমে আদালতে সাজানো-গোছানো সত্যের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র অসংগতির অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, একটি সামাজিক অনুষ্ঠান কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা অসংগতি। দৌলতপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তি দৌলত খাঁর চল্লিশা উপলক্ষে দরিদ্রভোজন ও বস্ত্রদানের আয়োজন করা হয়েছে। এর তদারকির দায়িত্ব পালন করছে খাঁ সাহেবের ভাগনে এহসান মিয়া। কামলারা খাবারের ডেকচি ও কাপড়ের গাঁট্টি তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় অনুষ্ঠানের শেষাংশে খাদ্য-বস্ত্রের ঘাটতি পড়ে। ব্যাপারটি ধরা পড়ে রায়হান মিয়ার চোখে। এহসান মিয়া যখন এ বিষয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকেন, রায়হান মিয়া তখন কমলাকান্তের মতোই যথার্থ উত্তর দিয়েছেন।
উদ্দীপক ও ‘কমলাকান্তের জবানবন্দি’ রচনার ভাবার্থ অভিন্ন। উদ্দীপকে দৌলতপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তি দৌলত খাঁর চল্লিশা উপলক্ষে দরিদ্রভোজন ও বস্ত্রদানের অনুষ্ঠানের যে অসংগতি দেখা যায়, তা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট। অনুষ্ঠানের তদারক খাঁ সাহেবের ভাগনে এহসান মিয়া খাবারের ডেকচি ও কাপড়ের গাঁট্টি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় শেষের দিকে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই খাবার ও কাপড় পায়নি। কমলাকান্তের রচনায় ফুটে উঠেছে আদালতের অসংগতির চিত্র। নিয়ম-কানুনের নামে বাড়াবাড়ি চলে। আদালতে সাক্ষ্য দিতে গেলে আসামি ও সাক্ষী হিসেবে কমলাকান্তের আত্মসম্মানে আঘাত হানে। আদালতের কাজকর্মে এটি একটি অসংগতি। চল্লিশার অনুষ্ঠানে খাবার ও কাপড়ের ঘাটতি পড়ায় এহসান মিয়ার উল্টাপাল্টা কথায় রায়হান মিয়ারও আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল। উদ্দীপকে যেমন সামাজিক অনুষ্ঠানের অসংগতি চিত্রিত হয়েছে, তেমনি ‘কমলাকান্তের জবানবন্দি’ রচনায়ও চিত্রিত হয়েছে আদালতের অসংগতি। সুতরাং এ কথা বলা যায়, ওপরের অনুচ্ছেদটি ‘কমলাকান্তের জবানবন্দি’ রচনাটির ভাবার্থের দর্পণ।
প্রভাষক, রূপনগর মডেল কলেজ, ঢাকা