কাজের অর্ডার বেশি পেলে করণীয়

কাজের চাপ কমাতে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবেসংগৃহীত
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরু কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে ২৩তম পর্ব।

পর্ব-২৩

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে বেশি আয় করার জন্য অনেকেই একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে চান। তবে একসঙ্গে একাধিক ক্লায়েন্টের কাজ করার আগে নিজের কাজ করার ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে গড়ে কত ঘণ্টা আপনি কাজ করতে পারবেন, তা আগে থেকেই জানতে হবে।

সময় ব্যবস্থাপনা

বেশির ভাগ মানুষ প্রতিদিন গড়ে আট ঘণ্টা কাজ করেন। ফলে সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করলে ৪০ ঘণ্টা কাজ করা যায়। কাজের ধরন ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আপনি চাইলে ৬ দিনে ১০ ঘণ্টা করে সর্বোচ্চ ৬০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। যখনই আপনি নিজের জন্য এই সময় বের করতে পারবেন, তখন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে একসঙ্গে একাধিক কাজ নিতে পারবেন। তবে আপনি যতই দক্ষ বা পরিশ্রমী হোন না কেন, প্রতি সপ্তাহে কাজের পরিমাণ ৬০ ঘণ্টার বেশি যেন না হয়। এর চেয়ে বেশি কাজ করলে আপনার কাজের মান খারাপ হবে এবং ক্লায়েন্টের কাছ থেকে খারাপ রেটিং পাবেন। ফলে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হবে।

আরও পড়ুন

কাজ নেওয়ার আগে

মার্কেটপ্লেসে নিয়মিত কাজ পেতে হলে কাজের মান অবশ্যই ভালো করতে হবে। তাই সব সময় ক্লায়েন্টের চাহিদামতো কাজ করতে হবে। কাজের মান নিশ্চিত করতে না পারার আশঙ্কা থাকলে একসঙ্গে বেশি কাজ নেওয়া যাবে না। এমনকি পুরোনো কোনো ক্লয়েন্টের কাজও নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, ক্লায়েন্ট যতই পুরোনো হোক না কেন, ভালো মানের কাজ না করলে খারাপ রেটিং দেবে। ফলে আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ নিতে হবে। এতে আপাতদৃষ্টিতে ক্লায়েন্টের সংখ্যা কমে গেলেও ক্ষতি নেই, আপনি দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

নিয়মিত একাধিক ক্লায়েন্টের কাজের প্রস্তাব পেলে আপনাকে পারিশ্রমিকের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। তবে হঠাৎ করে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা যাবে না, ধীরে ধীরে নিজের ঘণ্টাপ্রতি এবং নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কাজের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করতে হবে। পারিশ্রমিক বৃদ্ধির পর কিছু ক্লায়েন্ট আপনাকে কম কাজ বা কাজ দেওয়াই বন্ধ করে দিতে পারে। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই, আপনার কাজের মান ভালো হলে অন্য ক্লায়েন্টরা ঠিকই আপনাকে বেশি পারিশ্রমিকে কাজ দেবে।

মার্কেটপ্লেসে বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে একাধিক কাজ পাওয়া যায় না। তবে একসঙ্গে একাধিক কাজ পেলে প্রয়োজনে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধি করতে পারেন। পাশাপাশি যে ক্লায়েন্টের কাজ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে কাজটি আগে করতে হবে। তবে যেভাবেই কাজ করেন না কেন, সব ক্লায়েন্টের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।

আরও পড়ুন

একসঙ্গে একাধিক কাজ করার অনুরোধ পেলে আপনি চাইলে কাজের ধরন ও পারিশ্রমিক বিবেচনা করে নিজ থেকেই ক্লায়েন্ট কমানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। কারণ, প্রতিদিন বেশি পরিশ্রম করলে কাজের মান ধীরে ধীরে কমার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। সমস্যা সমাধানে যেসব নিয়মিত ক্লায়েন্টের কাজ করতে আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তাদের কাজের অর্ডার গ্রহণ করতে হবে। তবে অনিয়মিত বা কম গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টদেরও ভদ্রভাবে না করতে হবে। কাজ ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আপনি বলতে পারেন—‘আমি এই সপ্তাহে খুবই ব্যস্ত। আমি তোমার কাজ আগামী সপ্তাহে (সুবিধাজনক সময়) করতে পারব। এতে তুমি কি রাজি আছো?’ ক্লায়েন্ট যদি রাজি হয়, তবে কাজটি করতে হবে। রাজি না হলে কাজটি বাদ দিতে হবে।

আরও পড়ুন

আপনি যদি নিয়মিত একাধিক কাজের অনুরোধ পান, তবে ধীরে ধীরে দল গঠনের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। অর্থাৎ এক বা একাধিক কর্মী নিয়োগ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লায়েন্টদের কাজ করতে হবে। কর্মীদের মাধ্যমে সব কাজ করালেও আপনাকে অবশ্যই কাজগুলোর মান পর্যালোচনার পাশাপাশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে আপনি ধীরে ধীরে নিজের প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে পারবেন। মার্কেটপ্লেসে হঠাৎ করে বেশি আয় করার বদলে নিয়মিত কাজ করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার

পরের পর্ব: পেমেন্ট গেটওয়ের বিস্তারিত

আরও পড়ুন