কারখানা থেকে যেভাবে আপনার হাতে

.
.

এই যত আইফোন তৈরি হয়, তার প্রায় অর্ধেকের জন্মস্থান চীনে। চীন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় আইফোন। তবু চীনে আইফোন বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি দামে। যন্ত্রাংশ সংগ্রহ থেকে শুরু করে চীনা কারখানায় আইফোন তৈরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারকারীর হাতে কীভাবে পৌঁছায়, তা জানিয়েছেন মার্কিন সাংবাদিক ডেভিড বার্বোজা। চীনের ঝেংঝৌ শহরের এক বিশাল কারখানায় তৈরি হয় আইফোন। কারখানাটি পরিচালনা করে তাইওয়ানভিত্তিক হার্ডওয়্যার নির্মাতা ফক্সকন। ঝেংঝৌ থেকে ৫৯০ মাইল দূরের সাংহাইয়ের দোকানে আইফোন পৌঁছাতে যতটা সময় লাগে, প্রায় একই সময় লাগে ৬ হাজার ৩০০ মাইল দূরের যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকো শহরের কোনো দোকানে পৌঁছাতে।
যন্ত্রাংশ সংগ্রহ
২০০ সরবরাহকারীর যন্ত্রাংশ নিয়ে তৈরি হয় আইফোন
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ সরবরাহকারীর কাছ থেকে আইফোনের জন্য যন্ত্রাংশ কেনে অ্যাপল। ঝেংঝৌর কারখানাতেও কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করে ফক্সকন। সরবরাহকারীদের কাছ থেকে যন্ত্রাংশ কিনে পুনরায় ফক্সকনের কাছে বিক্রি করে অ্যাপল।
আইফোন তৈরি
চীনে প্রতি মিনিটে ৩৫০টি আইফোন
২ দশমিক ২ বর্গমাইলের চীনা কারখানায় কাজ করেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ কর্মী। তাঁদের অনেকের আয় ঘণ্টায় সর্বসাকল্যে ১ দশমিক ৯ ডলার। ঝেংঝৌয়ের কারখানায় ৯৪টি উৎপাদন লাইন আছে। প্রায় ৪০০ ধাপ পেরিয়ে তৈরি হয় প্রতিটি আইফোন। দিনে প্রায় পাঁচ লাখ আইফোন তৈরি হয় ফক্সকনের কারখানায়। প্রতি মিনিটে গড়ে ৩৫০টি। তৈরি হয়ে গেলে মোড়কজাত করে পাঠানো হয় বাইরে অপেক্ষারত ট্রাকে।
শুল্ক কর্মকর্তার অনুমোদন
কারখানার ঠিক বাইরেই চীনের শুল্ক কার্যালয়
কারখানা থেকে বেরিয়ে ফটকের কয়েক শ গজ দূরেই চীনের শুল্ক বিভাগের কার্যালয়ে পাঠানো হয় আইফোন বহনকারী ট্রাকগুলো। এতে সহজে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি করতে পারে অ্যাপল। ফক্সকন এরপর আইফোনগুলো বিক্রি করে অ্যাপলের কাছে। অ্যাপল পুনরায় সেগুলো বিক্রি করে বিশ্বব্যাপী অ্যাপলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।

বিদেশে রপ্তানি

বোয়িং ৭৪৭ বিমানে যায় আইফোন

যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে আইফোনগুলো পাঠানো হবে, সেগুলো শুল্ক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তিন মাইল দূরের ঝেংঝৌ বিমানবন্দরে যায় ট্রাকে চড়ে। মূলত আইফোনের উৎপাদন বাড়ার কারণেই বিমানবন্দরটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ উন্নত হয়েছে। একটি বোয়িং ৭৪৭ মালবাহী বিমান সহজেই দেড় লাখ আইফোন বহন করতে পারে। আইফোনবাহী বিমানগুলো প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাংকারেজ শহরে এবং এরপর যায় কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে। এখান থেকে পাঠানো হয় বিভিন্ন শহরে।

চীনা বাজারে আইফোন

চীনের বাজারের জন্য যে আইফোনগুলো রাখা হয় শুল্ক কর্মকর্তারা সেগুলোকে প্রথমে রপ্তানিকৃত এবং খানিক বাদেই আমদানি করা হিসেবে ঘোষণা করেন। আমদানিকৃত হিসেবে ঘোষণার পরই শুল্ক কর্মকর্তারা আইফোনের মূল্যের ওপর ১৭ শতাংশ কর আরোপ করেন। অনুমোদন পেলে ট্রাকে করে ঝেংঝৌ থেকে সাংহাই পাঠানো হয়, এতে সময় লাগে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। এখান থেকেই গোটা চীনে পাঠানো হয় আইফোন।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস