রায়ান, রায়সা আর মিথুনের এয়ারপোস্টেড

এয়ারপোস্টেডের ওয়েবসাইট
এয়ারপোস্টেডের ওয়েবসাইট

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বন্ধুর জন্য পছন্দের এক জোড়া জুতা বাংলাদেশে পাঠাতে গিয়ে রায়ান রহমান দেখলেন খাজনার চেয়ে বাজনা হচ্ছে বেশি। আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে জুতার দাম হয়ে যাচ্ছে প্রায় তিন গুণ। ভেবে দেখলেন, এমন সমস্যায় শুধু তিনি একা নন, অনেকেই পড়েন। সমাধানের পথ খুঁজতে গিয়েই মাথায় আসে এয়ারপোস্টেডের ধারণা।

তিনজন সহপ্রতিষ্ঠাতার মধ্যে রায়ান রহমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রায়সা রহমান প্রধান পণ্য কর্মকর্তা এবং মিথুন মোল্লা প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন। গতকাল রোববার মুঠোফোনে তাঁদের এই উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় রায়ান রহমানের সঙ্গে। জানা হয় তাঁদের এই নতুন উদ্যোগ মানে স্টার্টআপ সম্পর্কে।

ক্রেতা-ভ্রমণকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

এয়ারপোস্টেড মূলত একধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণকারী এবং পণ্য ক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ব্যাপারটা এমন যে বাংলাদেশ থেকে কেউ হয়তো এমন কোনো পণ্য কিনতে চাইছেন, যেটি বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না কিংবা অন্য দেশের তুলনায় দাম অনেক বেশি। তিনি হয়তো ওয়েবসাইটে ঘেঁটে দেখলেন সে পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কম দামে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হয়তো কেউ বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যাওয়ার পথে তিনি সেই পণ্যটি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন।

এখন তাঁরা দুজনেই এয়ারপোস্টেড ডটকমে (www.airposted.com) ক্রেতা কিংবা ভ্রমণকারী হিসেবে নিবন্ধন করে একে অন্যকে খুঁজে নিতে পারবেন। সেই ভ্রমণকারী বাংলাদেশে যাওয়ার পথে ক্রেতার চাহিদামাফিক পণ্য কিনে নিয়ে গেলে বিমানবন্দর থেকে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করে সে পণ্য গ্রহণ করতে পারবেন।

এখানে ক্রেতার লাভ হলো তিনি পণ্যটি পাচ্ছেন, হয়তো দামেও কম পড়ছে। আর পণ্য পরিবহনকারী হিসেবে ভ্রমণকারী কিছু ফি পাবেন, যাত্রাপথে অতিরিক্ত কিছু আয় হলে মন্দ কী! ভ্রমণকারীর এই ফি উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।

.
.

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চালু করা হয় এয়ারপোস্টেড। এর মধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে, বললেন রায়ান। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের লক্ষ্য পুরো পৃথিবীকে যুক্ত করা। আপাতত যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপের কিছু দেশে এয়ারপোস্টেডের কার্যক্রম চালু আছে। বাংলাদেশ থেকেও কিছু অর্ডার এসেছে। আমরা এখন চাই বাংলাদেশে এয়ারপোস্টেডের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে।
পিয়ার-টু-পিয়ার অর্থাৎ এক ব্যবহারকারীর সঙ্গে আরেক ব্যবহারকারীর সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করে এয়ারপোস্টেড। তবে চাইলে বিক্রেতা ফরমাশ গ্রহণে কিংবা ভ্রমণকারী মূল উৎস থেকে পণ্য কিনতে এয়ারপোস্টেডের সাহায্য নিতে পারেন। আর ভবিষ্যতে দুই পক্ষের সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিমানবন্দরে এয়ারপোস্টেডের বুথ বসানোর পরিকল্পনার কথা বলেন রায়ান। সেখানে ভ্রমণকারী পণ্য রেখে যেতে পারবেন, ক্রেতা তাঁর সুবিধামতো সময়ে পণ্য নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বর্তমানে প্রচারের জন্য এয়ারপোস্টেডের নিজস্ব কোনো ফি ধরা হয়নি, পরবর্তী সময়ে ৫ শতাংশ ফি ধরা হবে।

উভয় পক্ষের নিরাপত্তা

পিয়ার-টু-পিয়ার পদ্ধতি হওয়ায় নিরাপত্তা একটা বড় প্রশ্ন, সেটা দুপক্ষের জন্যই। নিরাপত্তার জন্য এয়ারপোস্টেডের মাধ্যমে কোনো কিছু কিনলে ক্রেতাকে প্রথমে সে পণ্যের দাম পরিশোধ করতে হয় এয়ারপোস্টেডের কাছে। ক্রেতা সঠিক পণ্য বুঝে পেলে ভ্রমণকারীকে সে অর্থ পরিশোধ করে দেয় এয়ারপোস্টেডে। নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতে উভয় পক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড-চেক ও বিমার মতো সুবিধা চালু করা হবে বলে জানান রায়ান রহমান।

যেভাবে কাজ করে এয়ারপোস্টেড

* প্রথ​েম www.airposted.com-এ গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। সেটা ক্রেতা কিংবা ভ্রমণকারী হিসেবে হতে পারে। যেকোনো সময় নিজের ভূমিকা পাল্টে নেওয়ার সুযোগ আছে।

*কোনো কিছু কিনতে চাইলে ‘বিকাম আ বায়ার’ এবং পণ্য পরিবহন করতে চাইলে ‘বিকাম আ ট্রাভেলার’ লিংকে ক্লিক করুন।

*ক্রেতার ক্ষেত্রে আপনি কোন পণ্য কিনতে চান, তার আমাজন বা অন্য কোনো ওয়েবলিংক এবং পণ্য ও আপনার যোগাযোগের বিবরণসহ পণ্য ক্রয়ের আবেদন পোস্ট করতে পারবেন।

*বিক্রেতা একইভাবে কবে কোথায় থেকে কোথায় যাবেন, তা লিখে পোস্ট করতে করবেন।

*ভ্রমণকারী চাইলে ক্রেতা খুঁজে নিতে পারবেন, ক্রেতা একইভাবে ভ্রমণকারী খুঁজে নিয়ে আবেদন জানাতে পারবেন।